প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যায় জড়িত ৪ জনকে দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে র্যাব-১১-এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ র্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১-এর অভিযানে গত ৩১ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন মাওয়া এলাকা হতে মোঃ ইউসুফ মোল্লা (৩৬) (পিতা হোসেন মোল্লা, সাং উত্তর বিষকাটালি, পোঃ রামপুর বাজার, ২নং ওয়ার্ড, থানা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর)কে গ্রেফতার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর সূত্র ধরে র্যাব-১১-এর পৃথক আরেকটি অভিযানে গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর এলাকা হতে মোঃ মাহবুব মোল্লা (৩৮) (পিতা বিল্লাল মোল্লা, সাং উত্তর বিষকাটালি (মোল্লা বাড়ি), থানা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর)কে গ্রেফতার করা হয়। আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় তাদের অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামী জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এ বিষয়ে মা ও ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজিবাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমা বেগমকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে কেটে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গেছে। আসামী তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার সময় আরিফের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ভিক্টিমের স্ত্রী শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৫, তারিখ ১৯(১১)২০১৫; ধারা-৩০২/৩৪, দণ্ডবিধির ১৮৬০। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চাঁদপুর বিচার শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ভাড়াটিয়া খুনির মাধ্যমে আপন ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৫০) ও জয়নাল গাজীকে (৩৫) মৃত্য্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামী ইউছুফ মোল্লা (৩৬) ও মাহবুব মোল্লাকে (৩৮) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আসামীর স্বীকারোক্তি মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই ইউসুফ মোল্লা চাঁদপুর থেকে পালিয়ে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে নতুন ঠিকানায় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন এবং ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে পলাতক ছিলেন। গ্রেফতারকৃত অন্য আসামী মাহবুব মোল্লা জানান যে, ঘটনার পর গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৩ বছর জেলে ছিলেন। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২ জন আসামী এখনো পলাতক আছেন। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১-এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।