শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

হাজীগঞ্জে একসাথে আপন দুই বোনের বিসিএস জয়
জয়নাব ॥

একই মায়ের দুই কন্যা সন্তান গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু ৪১তম বিসিএস জয় করেছেন। তার মধ্যে গুলে জান্নাত সুমি শিক্ষা ক্যাডারে আর তার ছোট বোন জান্নাতুন নাঈম খুশবু কৃষি ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। গত ৩ আগস্ট সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ওয়েবসাইটে এ ফলাফল প্রকাশ পায়।

হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ এলাকায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ এয়াকুব মিয়া ও গৃহিণী রুপিয়া বেগমের তিন কন্যার মধ্যে দুই কন্যা এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।

দুই বোনের একসাথে বিসিএস জয়ে তাদের পরিবারসহ পুরো এলাকায় এক অন্য রকম আনন্দ বিরাজ করছে। হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের শিক্ষিকা ফারজানা কুমকুম বলেন, তারা দুই বোন আমাদের কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের এই ধারাবাহিক সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তাদের নিকটাত্মীয় তাহমিনা আক্তার বলেন, কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যবসায় করে তাদের অর্জিত এই সাফল্যের আনন্দ তুলনাহীন।

গুলে জান্নাত সুমি ২০০৭ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-১১ সেশনে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

গুলে জান্নাত সুমি বলেন, আমার শৈশব ও বেড়ে ওঠা হাজীগঞ্জ উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে চট্টগ্রাম থেকে নিয়মিত ঢাকায় গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেয়া কষ্টকর হওয়ায় মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ঢাকায় চলে যাই। হঠাৎ করে ঢাকায় আসায় থাকার সমস্যা, মানিয়ে নেয়ার সমস্যা শুরু হয়। ঢাকায় আসার পর বুঝতে পারি, চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমি অনেক পিছিয়ে আছি। পরিবারের ওপর চাপ কমানোর জন্যে এবং একই সাথে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যে আঞ্জুমান মোখলেছুর রহমান পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে যোগদান করি। সেই সাথে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষা বিষয়ক পড়ালেখা শুরু করি। চাকরি করার পাশাপাশি বিসিএসের জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকি। ২০১৬ সালে প্রথম ৩৮তম বিসিএস দিয়ে আমার বিসিএস যাত্রা শুরু হয়। তবে আশানুরূপ ফল না পেয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য পুনরায় নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি শুরু করি। এভাবে দেখতে দেখতে ৪০তম বিসিএসের ফলাফলের দিন চলে আসে। সেখানে নাম না দেখে হতাশায় ভেঙে পড়ি।

২০১৮ সালে আবেদন করে ২০২২ সালে ৪০তম বিসিএসের ফলাফলে এসে দেখলাম, নিজের রোল নন-ক্যাডার তালিকায়। এতো দীর্ঘযাত্রার পর ৪০তম বিসিএস থেকেই নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন করে শুরু হলো জটিলতা, আর আমারও শুরু হলো আর এক অসহনীয় কষ্টের যাত্রা। ভবিষ্যতের শঙ্কায় দিনের পর দিন উৎকণ্ঠা আর তার ফলে রাতের পর রাত কেটেছে নির্ঘুম। চোখের জলও যেন মনে হচ্ছিলো ফুরিয়ে যাচ্ছিলো। অবশেষে গত ৩ আগস্ট সারাদিন অপেক্ষার পর যখন ফলাফল তালিকায় দুই বোনের রোল নাম্বার একই সাথে দেখি, তখন স্তব্ধ হয়ে যাই। ২০১৬ সালে শুরু শুরু হওয়া বিসিএস-এর স্বপ্ন ২০২৩-এ এসে পূর্ণতা পায়। এ জন্যে সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ তায়ালা ও পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। সবার কাছে দোয়া কামনা করি যেন সরকারের একজন কর্মচারী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে কাজ করতে পারি।

জান্নাতুন নাঈম খুশবু বলেন, ২০১১ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৩ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচসএসসি, ২০১৪-১৫ সেশনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করি। এখনো ফলঅপ্রকাশিত।

তিনি জানান, ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএস-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে তখন আমি সদ্য গ্রাজুয়েট। তখনও চাকরির তেমন প্রস্তুতি শুরু করিনি। অনেকটা আনাড়ি মনোভাব নিয়েই প্রথমবারের মতো বিসিএসে এপ্লাই করে ফেলি। ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবার কথা থাকলেও করোনা মহামারির জন্যে তা পিছিয়ে যায়। আর আমিও প্রস্তুতির জন্যে কিছু সুযোগ পেয়ে যাই। মহামারি যখন সব কিছু স্থবির করে দেয়, তখন আমি ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাড়ি (হাজীগঞ্জ) ফিরে আসি। তারপর থেকে শুরু হয় আমার বিসিএস প্রস্তুতি। যেহেতু প্রিলিমিনারি হয়েছিলো ২০২১ সালের ১৯ মার্চ, আমি এক বছরেরও বেশি সময় পাই। এ জন্যে ভালোভাবেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করি এবং আল্লাহর রহমতে প্রিলি-রিটেন পাস করি। এরই মধ্যে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এ যোগদান করি এবং বর্তমানে কর্মরত আছি। ৩ আগস্ট যখন ৪১তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশিত হয়, তখন তালিকায় স্থান পেয়ে সত্যিই আবেগাপ্লুত হয়েছি। ২০১৯ থেকে ২০২৩ এই দীর্ঘ সময়ের জার্নিতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বিবিএসের সহকর্মীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট পেয়েছি। সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্যে সর্বদা প্রার্থনা করেছি এবং সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি সদয় হয়েছেন বলেই আমি ৪১তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এখন আমি সরকারের একজন কর্মচারী হিসাবে সর্বদা দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সরকারের সকল ভিশন/মিশন (রূপকল্প ২০৪১, স্মার্ট বাংলাদেশ, Delta plan 2100)-এ কৃষি একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য পায়। কৃষিতে আধুনিকায়ন, স্বয়ংক্রিয়করণের লক্ষ্যে এসব ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা/দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা তৈরিতে অংশগ্রহণ করতে চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়