শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

বিতর্ক আমাদের স্মার্ট ও জ্ঞানঋদ্ধ করে তোলে
বিমল চৌধুরী ॥

চাঁদপুর জেলায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী ইংরেজি বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ‘জানার শেষ নেই আর শেখার কোনো বয়স নেই’ এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নেয়ায় কর্মশালাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ধরে নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ সকাল ১০টায় শুরু হয় এ কর্মশালা। টিফিন আর লাঞ্চের সময় বাদ দিয়ে টানা সময় অতিবাহিত করে ঠিক বিকেল ৬টায় শেষ হয় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি।

সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ। তিনি ইংরেজি বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালাকে অভূতপূর্ব আয়োজন উল্লেখ করে বলেন, ব্যক্তির স্মার্টনেস তার বাহ্যিক সৌন্দর্য কিংবা সুশ্রী চেহারার উপর নির্ভর করে না। ব্যক্তির স্মার্টনেস নির্ভর করে তার কথা বলার দক্ষতা ও মেধার উপর। কথার মাধ্যমে মানুষকে মুগ্ধ করা একটা বিরল গুণ। বিতর্ক মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে। বাংলাদেশ বিশেষ করে জেলা শহরে ইংরেজি বিতর্ক চর্চা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। কেননা মানুষ এখনও ইংরেজি বিতর্ককে সহজে নিতে পারে না। কেউ যদি ইংরেজি ভাষা চর্চার চেষ্টা করে তবে আশেপাশের লোকজনের নেতিবাচক মন্তব্য তাকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কেউ আগ্রহী হলেও লোকলজ্জার ভয়ে ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা থেকে পিছিয়ে আসে। যারা চাঁদপুরে ইংরেজি বিতর্কের কর্মশালার মতো একটা কঠিন কাজ হাতে নিয়েছেন তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। গতকাল সকালে ফেসবুকে এই কর্মশালার একটা ভিডিও ক্লিপ দেখেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। তিনি যেখানে একজন অংশগ্রহণকারী নারী বিতার্কিককে প্রাঞ্জল ও অবারিতভাবে ইংরেজিতে শুদ্ধ উচ্চারণে বক্তব্য রাখতে দেখেন। এই দৃশ্য দেখার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে পেরে প্রধান অতিথি বলেন, তিনি ও তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে উঠেছেন এই সাবলীল ইংরেজি বক্তব্য দেখে। তিনি এই কর্মশালার সর্বাঙ্গীণ সাফল্য ও ধারাবাহিকতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, আজকে চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি (সিডিএ) ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ) ইংরেজি বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার যে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে তা জাতি গঠনে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা ভালো বিতার্কিক পাবো। যারা দেশে-বিদেশে আমাদের সম্মান বয়ে আনবে তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে। পরে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন এবং তাদের সফলতা কামনা করেন।

তিনি আরো বলেন, জীবনে পেশাগত সফলতায় পৌঁছাতে বিতর্ক অনেক বড় সহায়ক। পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্ক সমাজে সাফল্যমণ্ডিত হতে সহযোগিতা করবে। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবে, তখন এর ভালো দিকগুলো গ্রহণ করবে। এই যোগাযোগ মাধ্যমে শর্ট ভিডিওতে সময় নষ্ট না করে তোমরা ইউটিউবে ইংলিশ সিনেমা, সিরিয়াল, ছোটগল্প, কার্টুন দেখো, যা তোমাদের বিতর্কের জন্যে সহায়ক হবে।

সমাপনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি (সিডিএ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাত। মুখ্য প্রশিক্ষকের দায়িত্বপালন করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ সব্যসাচী লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। কর্মশালার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সিকেডিএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে।

চাঁদপুর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক মুন্সী আঃ খালেকের সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ। অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী (সোহেল), বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আহ্বায়ক সেলিম রেজা, বিতর্ক ফাউন্ডেশনের সদস্য মোহাম্মদ হানিফ প্রমুখ।

গতকাল ৫ আগস্ট শনিবার চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের তৃতীয় তলাস্থ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ বিতর্ক কর্মশালা। চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির আয়োজনে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় কর্মশালায় জেলার প্রথম সারির ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।

অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চাঁদপুর মেডিকলে কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ।

অত্যন্ত প্রাণবন্ত পরিবেশে সকাল ১০টায় বিতর্ক কর্মশালার উদ্বোধন করেন চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রোটাঃ ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রোটাঃ কাজী শাহাদাত। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আব্দুর রহমান গাজী। পবিত্র গীতা পাঠ করেন চাঁদপুর কণ্ঠের চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী। প্রশিক্ষণার্থী প্রত্ন পীযূষ বড়ুয়া ও প্রখর পীযূষ বড়ুয়ার পরিচালনায় পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। উদ্বোধনী পর্বে প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্রী অয়ন্তী রাব্বানী। দিনব্যাপী কর্মশালায় ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ছাড়াও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সট বুক বোর্ডের সিনিয়র স্পেশালিস্ট প্রফেসর মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও সিকেডিএফের কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ। প্রশিক্ষণ কর্মশালার লক্ষ্যণীয় দিক ছিলো সকলেই ইংরেজিতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, আর প্রশিক্ষণার্থীরাও ইংরেজিতে তাদের পরিচিতি ও অনুভূতি প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে চাঁদপুরের সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক প্রচারিত পাঠকনন্দিত দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ বিতর্ক প্রতিযোগিতা চালু করে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে জেলাব্যাপী প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজসহ সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিতর্ক শিল্পের মাধ্যমে দক্ষ ও সক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও করোনার কারণে তিন বছর এর কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ বছর থেকে পুনরায় শুরু হচ্ছে এর কার্যক্রম। সেজন্যে প্রস্তুতিস্বরূপ আয়োজন করা হয়েছে কর্মশালা। করোনার পূর্বে ১১ বছর ধরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিতার্কিকরা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ তাদের কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে চাঁদপুরের সুনাম অর্জনে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়