প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
কেন এতো মৃত্যু, কেন এতো লাশ? অনুসন্ধান-০৩
উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে গভীর রাতে জেলা হাসপাতালে ছোটাছুটি ॥ শেষ পরিণতি মৃত্যু
সারাদেশে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন দুই শতাধিক। চাঁদপুরেও সংখ্যাটা বাড়ছে ধীরে ধীরে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ যাওয়াটা হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু ভাইরাসে সংক্রমিত না হয়েও স্বাস্থ্য বিভাগের অযত্ন-অবহেলায় যদি কারো প্রাণ যায় তবে তা নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক। সেই অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো খুঁজে বের করতে কাজ করছে চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানী টিম। করোনা বেড ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখার পরও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রোগীদের হাসপাতাল ছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে অনেক। হাসপাতালের দেয়া ভুল তথ্যে কেউ বাড়িতে, কেউ গাড়িতে মারা গেছেন অতীতে। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বর থেকে বিদায় নেয়া একটি লাশের পিছু নেয় চাঁদপুর কণ্ঠ টিম। যাওয়া হয় কচুয়া পর্যন্ত। বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।
|আরো খবর
‘আমার মায় মরে নাইগো, মায়েরে মাইরা লাইছে’ এভাবেই গগনবিদারী আহাজারিতে কথাটি বলেন কচুয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের হাসিনা আক্তার। তার মা সুফিয়া বেগম মারা যান ২৬ জুলাই সন্ধ্যায়। শ্বাসকষ্ট বাড়ায় সুফিয়া বেগমকে ২৫ জুলাই ভর্তি করানো হয় কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালে বেড পেলেও পাননি অক্সিজেন। একটি সিলিন্ডারের অক্সিজেন কিছু সময় সুফিয়া বেগমের মুখে, কিছু সময় অন্য রোগীদের মুখে দেয়া হচ্ছিলো। যার মুখ থেকে খুলে নেয়া হচ্ছিলো অক্সিজেন, সে-ই চিৎকার দিয়ে উঠছিলো। বানরের পিঠা ভাগের মত যার স্বজনরা বেশি প্রভাব খাটাতে পারছিলেন তারাই ভাগে পাচ্ছিলেন বেশি। অক্সিজেনের অভাবে সুফিয়া বেগম যখন দম নিতে পারছিলেন না, হাসপাতালের একজন সুফিয়া বেগমের ছেলে বায়েজিদ সোহাগকে পরামর্শ দিলেন, চাঁদপুর সদরস্থ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব।
কচুয়াস্থ চাঁদপুর পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউটের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সোহাগের বাবা কচুয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ছিলেন। চার বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন, এখন মাকে হারিয়ে এতিম হতে চাননি। ফোন করলেন বড় বোন হাসিনা বেগমকে। বলেছিলেন, ‘আপা! এখানে (কচুয়া হাসপাতালে) অক্সিজেনের অভাব। আপনার কাছে টাকা হবে? মাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিবো। একজন বলেছেন ওখানে নাকি অনেক অক্সিজেন পাওয়া যাবে। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ৪ হাজার টাকা চায়।’ স্বামীর বাড়ি থেকে হাসিনা আক্তার বলেছিলেন, ‘তুই বাড়িতে যা ভাই। কোরবানির সময় গোশত কিনার লাইগা মায়েরে ৫ হাজার টাকা দিছিলাম। ঘরের আলমারিতে রাখা আছে, নিয়ে আয়। যেভাবে পারিস ভাই, মাকে বাঁচা। নইলে যে আমরা এতিম হইয়া যামু।’
ঘরে জমা রাখা শেষ সম্বল ৫ হাজার টাকা নিয়ে সোহাগ আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৪ হাজার টাকায় ভাড়া করেন অ্যাম্বুলেন্স। রাত ২টায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মাকে নিয়ে পৌঁছলেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে। রোগীতে ঠাঁসা এই হাসপাতালের কোথাও সিট খালি নেই। তৃতীয় তলার শেষ প্রান্তের পূর্ব পাশে দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরের একটি বেডে জায়গা হয়েছে সুফিয়া বেগমের। তবুও সোহাগের স্বস্তি, বড় হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন। এবার মা অক্সিজেন পাবেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন।
মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে গেলো সোহাগের ধারণা। যে অক্সিজেনের জন্যে ৪ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে জেলার বড় হাসপাতালে আসলেন, সেখানেও নাকি অক্সিজেন সংকট। রাত যখন আড়াইটা সোহাগ তখন অসুস্থ মাকে ফ্লোরের বেডে রেখে তিন তলা থেকে নিচ তলায় যাওয়া-আসা করছেন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে-নিচে কতবার নেমেছেন আর উঠেছেন সে হিসেব হয়তো রাখেননি তিনি। কোথাও অক্সিজেন নেই। কোথায় কার কাছে গেলে অক্সিজেন মিলবে সে তথ্যও জানা নেই ছেলেটির। নিচতলায় কর্মরত নার্সরা জানিয়েছিলেন, দুপুরের পরে লাইন থেকে অক্সিজেন দেয়া হবে।
নিরূপায় সোহাগ আবার তিন তলায় ফিরে গেলেন। ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসলেন। শ্বাসকষ্টে ভোগা মায়ের মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরলেন। বলেছিলেন, ‘মা আল্লাহরে ডাকেন। অক্সিজেন নাকি নাই। কালকে দুপুরে দিবো।’ মায়ের প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস সন্তানের বুকে পাথরের মত আঘাত করছিলো। সুফিয়া বেগম শক্ত করে ছেলেকে চেপে ধরে বলেছিলেন, ‘বাবারে আমারে কই নিয়া আইলি? এইখানেতো কিছুই দেয় না। আমি বাঁচুম নারে বাবা। দম বন্ধ হইয়া আসে’।
মায়ের প্রশ্নের উত্তর ছিলো না সোহাগের কাছে। সহ্য করতে পারছিলেন না তার অস্থিরতা। তাই চোখের পানি মুছতে মুছতে উঠে গেলেন। রাত ৩টায় বহু নাটকীয় ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত সোহাগ পেয়েছিলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। দ্রুত এসে অক্সিজেন সেট করার পর অস্থিরতা কমলো সুফিয়া বেগমের। নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে সোহাগ সংগ্রহ করেছিলেন একে একে ৫টি সিলিন্ডার। যা দিয়ে দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিলো তার মা। ডাক্তার-নার্স আসলেন, দেখলেন। প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লিখে দিলেন। সে আলোকে চলছিলো চিকিৎসা।
দুপুর ২টায় সোহাগের বড় বোন হাসিনা আক্তার হাসপাতালে পৌঁছলেন। ততক্ষণে ফুরিয়ে গেছে সিলিন্ডারের অক্সিজেন। বিদ্যুৎ ছিলো না, তাই দেয়ালের লাইনের অক্সিজেনও দেয়া যাচ্ছিলো না। বিকেলে একজন নার্স এসে লাইনের অক্সিজেন দেন সুফিয়া বেগমকে। অক্সিজেন দেয়ার কিছু সময় পরই আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। লোডশেডিং থাকে আধা ঘণ্টার মত। এই আধাঘণ্টায় চালু হয়নি হাসপাতালের জেনারেটর। বিদ্যুতের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন রোগীর স্বজনরা, আর রোগী যারা অক্সিজেন পাচ্ছিলেন না তাদের চিৎকারে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ।
আধা ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। আবার লাইন থেকে অক্সিজেন পান সুফিয়া বেগম। স্বাভাবিক হয় তার শ্বাস-প্রশ্বাস। সন্ধ্যার আগে আবারো হাসপাতালের বিদ্যুৎ চলে যায়। বন্ধ হয়ে গেলো লাইনের অক্সিজেন সরবরাহ। অক্সিজেন না পেয়ে ফের বাড়ে শ্বাসকষ্ট। এবারো চালু হয়নি জেনারেটর। আশে-পাশে ছিলো না কোনো ডাক্তার-নার্স। পুরো কক্ষ তখন অন্ধকার। সোহাগ মোবাইলের লাইটের আলো ধরে রেখেছেন মায়ের দিকে। তার বোন হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছেন। একদিকে অক্সিজেন নেই, অন্যদিকে গরম। দিশেহারা সুফিয়া বেগম ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন।
হাসিনা আক্তার চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নিচ তলায় গেলেন। তাকে দেখেই নার্সরা বলেছিলেন, এই মহিলা! দূরে থাকেন, দূরে থাকেন। করোনা ওয়ার্ড থেকে নিচে আসছেন কেন? জানালা দিয়ে কেঁদে কেঁদে নার্সদের বলেছিলেন তিনি, ‘আপাগো আমার মারে বাঁচান। মায় দম নিতে পারতাছে না।’ ডিউটিতে থাকা নার্সরা ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের কাজে। একটু পর একজন নার্স আসলেন, সোহাগকে একটি ইনজেকশন কিনে আনতে বললেন। স্লিপ অনুযায়ী সোহাগ ইনজেকশন এনে দিলে তা পুশ করলেন রোগীর তলপেটে নাভীর গোড়ায়।
পুশ করার আগে হাসিনা আক্তার উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপা এইটা কিসের ইনজেকশন? নাভীতে দেন ক্যা?’ নার্স বলেছিলেন, ‘শ্বাস কমার ইনজেকশন।’ ইনজেকশন পুশ করার সাথে সাথে তল পেটে ব্যথা উঠলো সুফিয়া বেগমের। হাতে পায়ে ঝিম ঝিম করছিলো। ঘামাচ্ছিলো পুরো শরীর। ৫ মিনিটের মধ্যেই দুই ভাই-বোনের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেলেন সুফিয়া বেগম। ‘আমাগরে এতিম কইরা যাইওনাগো মা..’ বলে হাসিনা যখন মায়ের লাশের উপর রোনাজারি করছেন ততক্ষণে নাভীর নিচে ইনজেকশন দেয়া নার্স গা ঢাকা দিলেন। তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। অন্ধকারে স্তব্ধ সোহাগ মোবাইলের লাইট মায়ের মুখের দিকে ধরে দেখেন শ্বাস নিচ্ছেন না, চোখ উল্টিয়ে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। মায়ের গায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে সোহাগ বলছিলেন, মা.., কথা কন্নাগো মা.., ও মা...। মৃত্যুর দু’দিন পর রিপোর্টে জানা যায়, সুফিয়া বেগমের করোনা নেগেটিভ ছিলো।
সুফিয়া বেগম কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন না পেলেও কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সালাউদ্দিন মাহমুদ চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৯৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। ২৫ জুলাই হাসপাতালে মজুত ছিলো ৬৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। প্রতিদিনই খালি সিলিন্ডার রিফিল করান তিনি। কাজেই সন্ধ্যার পর খুব বেশি সিলিন্ডার খালি থাকার কথাও নয়। করোনা বেড ২০টির মধ্যে ফাঁকা ছিলো ১২টি। রোগীদের নন স্টপ অক্সিজেন সার্ভিস দিয়েও পর্যাপ্ত অক্সিজেন রিজার্ভ থাকার কথা।
‘তবে কেন বানরের পিঠা ভাগের মত অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাগ হয়েছিলো ২৫ জুলাই রাতে?’ তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। বলেন, কচুয়া হাসপাতালে এমনটি ঘটেছে তা আমার জানা ছিলো না। সুফিয়া বেগমের সাথে যদি এমনটি ঘটে থাকে তবে তা অন্যায় হয়েছে। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। যে নার্স এমনটি করেছেন আপনি তার নাম দিন, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
‘তারিখ, দিন, সময় সবটাই বলে দেয়া হলো। ওই সময়ে ডিউটি রোস্টার দেখে দায়িত্বে থাকা নার্সের নাম চিহ্নিত করাটা নিশ্চয়ই প্রতিবেদকের কাজ নয়। আপনি চাইলেইতো চিহ্নিত করতে পারেন।’ -এমনটি জানানোর পর ডাঃ সালাউদ্দিন মাহমুদ বললেন, ও আচ্ছা। ঠিক আছে, আমি দেখছি বিষয়টি।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, বর্ণনা শুনে আমি বাকরুদ্ধ। কতিপয় স্টাফ এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। চিকিৎসকদের মানবিক সেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন রিজার্ভ থাকার পরও রাত ১টা, ২টায় কেন একজন রোগী অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতাল ছাড়বেন? আপনাদের ধন্যবাদ বিষয়গুলো বের করে আনার জন্যে। আমি কচুয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখবো।
সুফিয়া বেগমের তলপেটে ইনজেকশন পুশের বিষয়ে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, নাভীর এই ইনজেকশনটির আসল নাম ‘হেপারিন’। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া এটি দেয়া হয় না। এটি শ্বাসকষ্টের ইনজেকশন নয়। আমরা সাধারণত এটি হার্টের রোগী বা করোনা পজিটিভ রোগীর সিচুরেশন বুঝে দিয়ে থাকি। যেহেতু নার্স পুশ করেছেন, সম্ভবত সেটি ডাক্তারের অর্ডার দেয়া ছিলো। তবে সুফিয়া বেগমের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।
হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলে লাইনের অক্সিজেন বন্ধ থাকা ও দীর্ঘ সময়েও জেনারেটর চালু না করার বিষয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ হাবিব-উল-করিম বললেন, লাইনের অক্সিজেন চলতে হলে বিদ্যুৎ লাগে। বিদ্যুৎ ছাড়া মেশিন চলবে কী করে? ‘বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি-না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে জেনারেটর আছেতো। তা ৫ মিনিটের মধ্যেই স্টার্ট হয়ে যায়।
২৬ জুলাই বিকেলে ও সন্ধ্যায় দীর্ঘ লোডশেডিংয়ে জেনারেটর চালু না হওয়া এবং তার ফলে সুফিয়া বেগম মারা যাওয়ার ঘটনাটি তাঁকে খুলে বললে তিনি বলেন, হয়তো জেনারেটর কর্মীরা স্টার্ট দিতে যাওয়া-আসায় দেরি হয়ে গেছে, তাই যথাসময়ে স্টার্ট হয়নি। ‘বিকেলে না হয় জেনারেটর কর্মীদের সমস্যা ছিলো। সন্ধ্যায়ও কি একই সমস্যা থাকবে?’ এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।
যে জেনারেটর চালুর ওপর শত মানুষের বাঁচা-মরা নির্ভর করে, অক্সিজেন গ্রহণকারীদের অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, পুরো হাসপাতালে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার, সে জেনারেটর সচল রাখার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের এ কেমন স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? সরকারি হাসপাতালে জেনারেটর চালু রাখা, না রাখার সিদ্ধান্তটি কি সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে রসিকতা নয়?
প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হবে পৃথক কোনো পর্বে। সুফিয়া বেগমের মৃত্যুতে একটি প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা বাকি। প্রতিবেদনের মাঝামাঝি বলা হয়েছিলো, ‘বহু নাটকীয় ঘটনার পর অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছিলেন সোহাগ’। কী সেই নাটক? সে রাতে কী ঘটেছিলো সোহাগের সাথে, জানতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অবাক করা আরো কিছু তথ্য। যা প্রকাশ পাবে আগামীকাল অনুসন্ধান-০৪-এ।
যে চলে গেলো, সেতো গেলোই, তাকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে হারাতে হবে আরো অনেককেই। তাই হারানোর আগে হাসপাতালের ভেতরের অব্যবস্থাপনাগুলো দূর করা জরুরি। জেলা সদরস্থ জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে হাসিনা বেগমের মা হারানোর কান্না আর লাশের গাড়ির সূত্র ধরে একজন সুফিয়া বেগমের যথাযথ চিকিৎসা সংকটে মৃত্যুর ঘটনা সামনে নিয়ে আসা হলো। এমন বহু সুফিয়া বেগম হয়তো একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। অনেক সমস্যাইতো চিহ্নিত হলো, কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিবেন কি কর্তৃপক্ষ?