শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?
  •   শ্রীনগর কাঁপছে

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ

সচেতন না হলে কোনো কঠোরতাতেই লাভ হবে না

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের উপর চরম অসন্তোষ প্রকাশ * করোনা ওয়ার্ডে একদিনে রোগী ভর্তি ২২২

সচেতন না হলে কোনো কঠোরতাতেই লাভ হবে না
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

গতকাল ৮ আগস্ট রোববার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপ্রধানে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার শুরুতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বিগত সভার কার্যবিবরণী পাঠ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়। পরে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পর্যালোচনা করে আগের তুলনায় সন্তোষজনক বলে জানানো হয়।

সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জেলার করোনা পরিস্থিতি, আক্রান্ত, মৃত্যু, গণটিকা, হাসপাতালের রোগী ভর্তিসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, গতকাল গণক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে জেলার ৯২টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভার ১১৭টি কেন্দ্রের ৩০৩টি বুথে ৬১২০০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। বাকি ১০ হাজার টিকা আমাদের কাছে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আদেশে আমরা সেগুলো দেবো। আর প্রথম পর্যায়ে যারা অক্সফোর্ড কোভিসিল্ড প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমান তাদের জন্যে ১২ হাজার ডোজ টিকা আছে। আমরা শহর এলাকায় তাদের জন্যে টিকা আলাদা একটি কেন্দ্রে নিতে চাই। আর তখনই হাউজ থেকে প্রস্তাব করেন হাসপাতালের পাশে রোটারী ক্লাব সংলগ্ন যে সরকারি প্রাইমারি স্কুলটি আছে, সেই স্কুলটি ঐ টিকার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে। ওই স্কুলের সভাপতি শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি অ্যাডঃ সাইফুদ্দিন বাবু এতে সম্মতি দেন। সিভিল সার্জন আরো জানান, চাঁদপুরে করোনায় মৃত্যু আগের থেকে তুলনায় কমে এসেছে। কিন্তু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। তিনি জানান, আজ রোববার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২২২ জন কোভিড-১৯ ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি আছে। সিভিল সার্জন আরো জানান, অক্সিজেন প্লান্টের লাইনে আরো ৫০টি মিটার সংযোগ দেয়ায় এখন ১০০ লাইন সচল হয়েছে। আর ৫০টি ১/২ দিনের মধ্যে সংযোগ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এই অক্সিজেন সাপ্লাই, আবুল খায়ের গ্রুপ, ব্যক্তি ও সাংগঠনিক পর্যায়ে অক্সিজেন সরবরাহ করায় এর সংকট কমে যাচ্ছে। আর ৫০টি সংযোগ হয়ে গেলে অক্সিজেন সংকট থাকবে না।

সভায় উঠে আসে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা। বিশেষ করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সমন্বয়হীনতার অভাব। তিনি এসব গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশ নেন না, আবার হাজির থাকলে কথা বলেন না। কী চাহিদা বা কী কী সমস্যা বা যা যা হাসপাতালে করণীয় তা উপস্থাপন করার কথা তত্ত্বাবধায়কের। কিন্তু তিনি তা করেন না। এতো সুবিশাল হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল কর্তার এমন উদাসীনতায় সভায় চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক বলেন, আমি তত্ত্বাবধায়ককে একাধিকবার খোঁজ নিয়েছি, বলেছি আপনার কী রকম সহযোগিতার প্রয়োজন বলুন, একটা তালিকা পাঠান। আমাদের সাথে সমন্বয় করুন। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বা তাঁর বড় ভাই, যিনি একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং তাঁরা ২ জনই এখানের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ভাবেন, কাজ করেন। তাহলে আপনার সংকোচটা কোথায়?

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি তাঁকে ফোন করি কিন্তু ফোন রিসিভ করেন না। অথচ তিনি এতো বড় দায়িত্বে আছেন, যার উচিত এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করা। এই হাসপাতাল নিয়ে কথা বলতে হয় সিভিল সার্জনের কেন? সভার একপর্যায়ে জানা গেলো, তত্ত্বাবধায়ক ছুটিতে আছেন। হাসানুজ্জামান নামে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, কিন্তু উনি যুক্ত হননি। আধাঘন্টা পরে যুক্ত হন হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি জানান, হাসপাতালের বারান্দাতেও করোনা রোগিকে জায়গা করে দিতে হচ্ছে ফ্লোরে। অ্যাডঃ সাইফুদ্দিন বাবু জানান, পিসিআর ল্যাবে দ্রুত টেস্ট করানোর নামে দালাল তৈরি হচ্ছে। আগে টেস্ট করে দেয়ার নাম করে রোগীর কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ আসছে। পুরাণবাজারের এক ছেলে এই কাজটি করছে। তার সাথে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে। পরে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানালেন, ঐ ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরো কারা আছে জড়িত তাদের খোঁজা হচ্ছে।

সভায় পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, যেভাবেই হোক আমরা টিকা কেন্দ্রে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগী ভর্তি নেয়ার বিষয়ে এগিয়ে আসা জরুরি। তিনি বলেন, আপনারা বসুন এ ব্যাপারে। একটা পন্থা বের করুন। না হয় এমনও হতে পারে আপনাদের আসতে সংশ্লিষ্টরাই বাধ্য করবে। পুলিশ সুপার বলেন, ব্যাপারগুলো পজিটিভ ওয়েতে দেখুন। সিভিল সার্জন এ বিষয়ে জানান, বেসরকারি পর্যায়ে অন্ততঃ ৫০টা বেডও যদি বাড়ানো যায়, তাহলে করোনা রোগীরা উপকৃত হবেন। এ ব্যাপারে তিনি বেসরকারি হাসপাতালের ইউনিট তাকে একটা আপডেট দেবেন বলে জানিয়েছেন। চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, জেলার বাইরের রোগী চাঁদপুরের এ হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা কমাতে হবে। পাশাপাশি উপজেলার রোগিরা যেন উপজেলাতেই চিকিৎসা নেন সে ব্যবস্থা করা। খুব জরুরি ছাড়া সদরে আনার কোনো যুক্তিকতা নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় থাকতে হবে। সমন্বয় ছাড়া ভালো কিছু হয় না। এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, মতলব উত্তর উপজেলা চেয়াম্যান আঃ কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী।

সভার শেষাংশে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা যদি এখনো সচেতন না হই, তাহলে কোনো বাহিনী বা কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিয়ে লাভ হবে না। যারা জেগে ঘুমায় তারা মানবতার জন্য নিবেদিত না। অনেকে জেনে শুনে নিয়ম ভাঙছেন। আশা করি এসব করবেন না। তিনি বলেন, আমরা হতাশ নই, সবসময়ই আশাবাদী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়