প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর পৌরসভার তিন তিনবারের নারী কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র এবং চাঁদপুর জেলা যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ফরিদা ইলিয়াস বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এই দলটির রয়েছে অনেক গৌরবময় ইতিহাস। এটি একটি সাগরের মতো। এখানে একটি পদে একাধিক প্রার্থী হওয়ার বা যোগ্যতা সম্পন্ন অনেক নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। কিন্তু আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও পৌর সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী, যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বিগত দিনে এই দলে যাদের অবদান রয়েছে সেদিকে খেয়াল রেখে নূতন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। সবকিছু বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেটি ভালো মনে করেন, সেটি করবেন। আমি যেহেতু সহযোগী সংগঠন করি, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে হ্যাঁ, নতুন নেতৃত্বকে আগাম অভিনন্দন রইলো।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে দেয়া তার সাক্ষাৎকারে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তার পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার নি¤েœ তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ১০ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং তার পূর্বে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সম্মেলন। আপনার প্রতিক্রয়া কী?
ফরিদা ইলিয়াস : দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের রয়েছে একটি গঠনতন্ত্র। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সম্মেলন হবে, এটি আমি মনে করি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়, দলের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে থাকে। এতে নতুনরা স্থান পায়। শূন্যস্থানগুলো পূরণ হয়। আমি মনে করি, জেলা সম্মেলন হওয়ার পূর্বে অধীনস্থ সকল ইউনিটের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হবে এবং জেলা সম্মেলনেও জেলায় নূতন নেতৃত্ব আসবে। এতে করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য, দলের জন্য মঙ্গল হবে। দলকে এগিয়ে নিতে এবং গতিশীলতা আনতে এই প্রক্রিয়া ভালো উদ্যোগ। আমরা মনে করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের জন্য দল আরো গতিশীল হবে, দলীয় নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হবে। পরিশেষে সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন?
ফরিদা ইলিয়াস : এখানে বলতে চাই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রয়েছে অনেক গৌরবময় ইতিহাস। এটি একটি সাগরের মতো। এখানে একটি পদে একাধিক প্রার্থী হওয়ার বা যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। কিন্তু আমি মনে করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী, যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বিগত দিনে এই দলে যাদের অবদান রয়েছে সেদিকে খেয়াল রেখে নূতন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।
সবকিছু বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেটি ভালো মনে করেন, সেটি করবেন। আমি যেহেতু সহযোগী সংগঠন করি, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে হ্যাঁ, নতুন নেতৃত্বকে আগাম অভিনন্দন রইলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?
ফরিদা ইলিয়াস : বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ একটি গণতন্ত্রের দেশ। আমরা বা আমাদের দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না এবং বিশ্বাস করে না। ফলে বিএনপিকে আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো বাধা প্রদান করে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি দেশে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, আমরা সেই নৈরাজ্য করতে দেবো না।
বিএনপি এদেশের জনগণের জন্যে আন্দোলন করে না। তাদের এ আন্দোলন শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে। আমি মনে করি, তাদের এই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কখনোই এদেশের জনগণ পূরণ করতে দেবে না। স্বপ্ন দেখা ভালো, তবে বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। বিএনপির ইস্যু জনগণ খায় না। কারণ সারাবিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো যখন দেশ পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে এদেশের জনগণ অনেক ভালোভাবে চলছে। দেশের জনগণ অনেক সচেতন। তাই এই সচেতন জনগণকে বোকা বানানোর দিন শেষ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, যাদের সাথে দেশের জনগণ নেই, তাদের এই আন্দোলন নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আর চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কি উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
ফরিদা ইলিয়াস : আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন বা দল, যে দলটি কোনো বিষয়ে কারো প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে না। আমরা মনে করি, বিএনপি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করবে। কিন্তু ইতোমধ্যে তাদের আন্দোলনের নামে রাজপথে নৈরাজ্য ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আমরা দেখেছি।
আমাদের দল দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অতএব সরকারের যেমন নৈতিক দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার, তেমনি সরকারি দল হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার।
আমি বিরোধী দলকে বলতে চাই, আগামীতে বিরোধী দলের সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মোকাবিলা করবো এবং আমরা জনগণের জানমালের রক্ষক হিসেবে আগামী দিনগুলোতে মাঠে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?
ফরিদা ইলিয়াস : অবশ্যই। আওয়ামী লীগ আবারো এদেশের জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা সারা বিশ্বের মধ্যে বিরল ঘটনা। দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে আবারো রায় দিবে ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
ফরিদা ইলিয়াস : আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনৈতিক কর্মী। আমাদের নেত্রী জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধেয় নেত্রীর নেতৃত্বের প্রতি আমরা অবিচল ও আস্থাশীল। তাই বিএনপিকে বলবো, রাজনীতি করেন, কিন্তু জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, মিসেস ফরিদা ইলিয়াস ছোটবেলা থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি চাঁদপুর জেলা যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রীর দায়িত্ব পেয়ে এখনো এই দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি চাঁদপুর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড থেকে পর পর তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। বর্তমানে চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।