শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

অনলাইনে প্রাথমিকের বদলি : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ॥ বদলি-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা বিপাকে
মির্জা জাকির ॥

সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায়ও প্রথমবারের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইন বদলি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এই বদলি প্রক্রিয়া নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

কেউ বলছে এবারই প্রথম বিতর্কিত বদলি হয়েছে, যাতে শিক্ষকদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। আবার কেউ বলছেন, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় বদলি হওয়ায় কোনো রকম আর্থিক লেনদেন কিংবা দৌড়-ঝাপ করতে হয়নি বদলিকৃত শিক্ষকদের।

এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বেশ ক’জন প্রধান শিক্ষকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, পুরো বদলি প্রক্রিয়াটি ছিলো স¦চ্ছ। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। কেবল বদলিকে কেন্দ্র করে যারা দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক বাণিজ্য করে আসছে কেবল তারাই এখন বিপাকে পড়ে স¦চ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

অপরদিকে শিক্ষক নেতারা বলছেন, নিয়মতান্ত্রিক সিনিয়র শিক্ষকদের বদলির স্থলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জুনিয়রদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। যার কারণে অনেক সিনিয়র শিক্ষক হতাশায় পড়ছেন। যা এখন বিতর্কের সূত্রপাত সৃষ্টি করছে।

আবার যেসব শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করে চাহিদার বিপরীতে পদায়ন পেয়েছেন, তারা বলছেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পুরো প্রক্রিয়াটাকে তদবিরমুক্ত রেখে স¦চ্ছতার ভিত্তিতে বদলি করায় সবার জন্য আগামিতে দুর্নীতিমুক্ত বদলির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পরস্পরবিরোধী এমন বক্তব্যর বিপরীতে বেশ ক’জন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ক’জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিতর্কের কারণ হচ্ছে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক নেতা আর শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে আর্থিক কেলেঙ্কারির সুযোগ কমে আসার বিষয়।

তারা দাবি করছেন, শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে সব সময় অগ্রাধিকার পেত সিনিয়রটি আর নারী। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করো এবং শিক্ষকদের পছন্দের বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দাও। এখন এটাই হয়েছে সমস্যা।

শিক্ষা অফিসাররা জানান, অধিকাংশ নারী শিক্ষক শহরমুখী হয়ে উঠায় তারা শহরের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়গুলোতে বদলি হতে চান। শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এমন কর্মস্থলে তারা যেতে চান। আর এমন সুযোগকে পুঁজি করেই একসময় লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হতো। শিক্ষক নেতারা একাধিক সিনিয়র শিক্ষককে দিয়ে ওইসব বিদ্যালয়ে বদলির আবেদন করিয়ে হাতিয়ে নিতো টাকা। নির্ধারিত বা পছন্দের একজনকে রেখে বাকিদের আবেদন প্রত্যাহার করে নিতো। এক্ষেত্রে দুর্নীতি হতো। পাশাপাশি রাজনৈতিক দৌড়-ঝাপ চলতো সমান তালে। এখন তা রোধ হয়ে গেছে।

বদলির ক্ষেত্রে এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে দূরত্ব। অর্থাৎ নিয়োগকালীন সময় যে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে চাকুরি নিয়েছে এখন সেই ঠিকানা হতে বর্তমানে কর্মরত বিদ্যালয়ের দূরত্ব কতটা তা-ই বিবেচ্য বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। সিনিয়র কিংবা জুনিয়র অথবা জেন্ডার বিবেচ্য বিষয় নয়।

সাথে আবার অনলাইনে আবেদনকৃত শিক্ষকের আবেদনের পর নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনলাইন সুপারিশ লাগে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আবেদন করতে গিয়ে তথ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোপনীয়তা থাকায় এতে করে অনেক আবেদনকারীর আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। সে তার আবেদন সম্পর্কে পরবর্তী ধারণা না থাকায় এখন গাল গল্প বলছে।

অধিকাংশ শিক্ষক তাদের সন্তানদের শহরের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। সেখান থেকেই তারা কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। এখন তারা শহরের বাসাকে ঠিকানা দেখিয়ে দূরত্ব বিশাল দেখিয়ে বদলির আবেদন করছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে অনলাইনে তাদের ব্যক্তিগত দেয়া তথ্যের সাথে বদলির আবেদনের তথ্যের গরমিল হওয়ায় সিনিয়র শিক্ষকরা তাদের চাহিদার বিপরীতে বদলি হতে পারেননি। এমনকি নারী হওয়া সত্ত্বেও বদলি হতে পারেননি। কারণ তারা দূরত্ব কিংবা নিজ স্থায়ী ঠিকানার তথ্য গোপন করে আবেদন করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষক এ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে শিক্ষা অফিসাররা বলছেন, সিনিয়র কিংবা নারী শিক্ষকদের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। বদলি প্রক্রিয়া বছরজুড়েই চলবে। তবে তথ্য গোপন করলে বদলি হতে সমস্যা সৃষ্টি হবেই। এজন্য প্রক্রিয়া দায়ী হবে না বরং তারা নিজেরাই দায়ী হবে বলে তারা জানান।

এসব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, অনলাইনে শিক্ষক বদলির বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তরের সফটওয়্যারের তৈরি। একটা দাড়ি, কমা ধরারও সুযোগ নেই কারো। বদলির বিষয়টি অটো হয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়