প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ০০:০০
গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল এখন বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর। বর্ষার পানি আসার সাথে সাথে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নিধনের মহোৎসবে মেতে উঠে স্থানীয় জেলে ও সাধারণ মানুষ। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বাদাই জাল, খৈলশুনিসহ নানা উপকরণ দিয়ে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ নিধন চলতে থাকে। হাট-বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ। অবাধে এভাবে নিধন করায় কৈ মাছের জন্যে বিখ্যাত কচুয়া উপজেলা এখন কৈ শূন্য হয়ে পড়েছে। অথচ নিশ্চুপ মৎস্য বিভাগ।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার গুগড়ার বিল, নাহারার বিল, জলা তেতৈয়া, বায়েক, সাচার, কাদলা, সাদিপুরা চাঁদপুর ও দড়িয়া হায়াতপুরের বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, মশারি দিয়ে তৈরি নেট জাল, বেড় জাল, বেল জাল, বাদাই জালসহ নানা উপকরণ দিয়ে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধনে মেতে উঠেছে একশ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি। শৈল, টাকি, কৈ, টেংরা এমনকি মৎস্য অফিস থেকে উন্মুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরতেও দ্বিধাবোধ করছে না তারা। করোনাকালীন অলস সময় কাজে লাগিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মাছ শিকারের প্রবণতা আরও বেড়েছে।
উপজেলার আলীয়ারা, সাচার ও পালাখাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি টেংরা ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, পুঁটি দুইশ’, টাকি মাছ দুইশ’ থেকে তিনশ’, শৈল মাছ সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কখনো কখনো এসব মাছের রেণু পোনাও বিক্রি করতে দেখা গেছে বাজারগুলোতে।
কাদলা গ্রামের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন আহমেদ খাজা, দড়িয়া হায়াতপুর গ্রামের আমির হোসেন, জলা তেতৈয়া গ্রামের প্রদীপ সরকার, সাচার এলাকার হারাধন চন্দ্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় জেলেরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে নানা প্রজাতির মা ও পোনা মাছ ধরে এনে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করছে। এ অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে দেশীয় প্রজাতির এ মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে চাষ ব্যতীত দেশীয় মাছ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন সিকদার জানান, একসময় কচুয়া উপজেলা কৈ মাছের জন্য বিখ্যাত ছিলো। এলাকায় বর্ষা মৌসুম এলে খাল বিলে অনেক মাছ পাওয়া যেতো। অবৈধ কারেন্ট জাল ও মশারি ব্যবহৃত বেল জালে মাছ শিকারীদের কারণে এখন তেমন আর একটা দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে।
মনোহরপুর গ্রামের বেল জালে মাছ শিকারি বাবুল মিয়া ও বেড় জালে মাছ শিকারী হরলাল জানান, ছোটবেলা থেকেই মাছ শিকার ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিখিনি। একে তো করোনা আবার লকডাউন। মাছ না ধরলে খামু কী? স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সরকার যে সাহায্য-সহযোগিতা দেয় এ দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়েই মাছ শিকার করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ বলেন, মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সম্প্রতি প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের মাধ্যমে যার যার এলাকায় মাইকিং করে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করা হয়েছে। এছাড়া শিগগিরই পোনা মাছ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
কচুয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুল হাছান বলেন, মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন এটি সম্পূর্ণ বে-আইনী। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় আমাদের প্রত্যেকেরই এগিয়ে আসা উচিত। কিছু অসাধু লোক বেল জাল ও কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে পোনা মাছ নিধন করছে এমন খবর আমরা পেয়েছি। লকডাউনের কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তবে সচেতনতামূলক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।