প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
শোকসভা, স্মরণসভা বিরল সত্ত্বেও-
জীবন-জীবিকার জন্যে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ায় যান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে প্রায় সকলে। আবার বলা যায়, কৃত্রিমতা ও বিলাসিতায় অবগাহন করতে গিয়েও মানুষের মধ্যে ধর্মকর্ম, মানবিকতা, শিষ্টাচার, আতিথেয়তা, সামাজিকতা ইত্যাদি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন/শেষকৃত্য সম্পাদন করতে পারলেই হলো, পরবর্তীতে নগণ্য সংখ্যকই যায় কবরস্থানে, শ্মশানে। কুলখানি/চেহলাম/শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মানুষ অংশ নেয় শোক ভুলে কম/বেশি আনন্দের রেশে। সেখানে ভুরিভোজনে তৃপ্তি খোঁজাটা অনেকের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
|আরো খবর
আজকাল বিখ্যাত মৃত ব্যক্তির লাশ সামনে রেখে জীবিত মানুষ এতো কথা বলে যে, এতোটা ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে যে, পরবর্তীতে শোকসভা আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা আর অনুভব করে না। আগে এমনটি ছিলো না। ২-৪ জন কথা বলে দাফন/শেষকৃত্য সম্পন্ন করতো। জনপ্রিয়/বিখ্যাত ব্যক্তি হলে তার জন্যে ছোট-বড় শোকসভা হতো, এমনকি বৃহৎ পরিসরে নাগরিক শোকসভা হতো। আজকাল যতো শোক, যতো আবেগ দেখা যায় গণমাধ্যমে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি)।
আঞ্চলিক পর্যায়ে তো বটেই, জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতিমান অনেক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাকে এলাকাবাসী তো দূরের কথা, পরিবারের লোকজনও স্মরণ করে না। তবে সুসন্তান ও সুযোগ্য উত্তরসূরি যারা রেখে যান, জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ রেখে যান, তাঁদেরকে তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকীতে কম-বেশি স্মরণ করা হয়।
বিশ^খ্যাত সাঁতারু অরুণ নন্দী জীবদ্দশায় অনুধাবন করেন যে, তিনি যেহেতু বিয়ে করেন নি, তাঁর স্ত্রী-সন্তান নেই, অতএব কেউ তাঁকে স্মরণ করবে না। সেজন্যে তিনি অরুণ নন্দী সুইমিং ক্লাব গঠন করেন, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে অবস্থিত সুইমিং পুলকে নিজের নামে নামকরণের সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে সফল হন। শুধু কি তা-ই, তিনি তাঁর সর্বোচ্চ বিশ^াসভাজন ব্যক্তির নামে কয়েক লাখ টাকার স্থায়ী আমানত রেখে যান, যাতে তার লভ্যাংশ দিয়ে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও সাঁতারের উন্নয়নে যৎসামান্য হলেও কিছু করা যায়।
কথা হলো, সকল খ্যাতিমান মানুষ তো অরুণ নন্দীর মতো দূরদর্শী নন। আবার সকলে সুসন্তান, সুযোগ্য উত্তরসূরি ও নিঃস্বার্থ ভক্ত রেখে যেতে পারেন না। সেজন্যে তাদেরকে স্মরণ করা হয় না। এক সময় বিস্মৃতির আঁধারে তারা হারিয়ে যান। এ আঁধার থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব সচেতনদের কাঁধে বর্তালেও তারা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না।
এমন বাস্তবতায় চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে অতি সম্প্রতি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণকারী মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক শ্রী মনকুমার দাসের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। মানব উন্নয়ন সেবামূলক সংস্থার আয়োজনে ও দাসপাড়া কালী মন্দির কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় ২৯ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় এই শোকসভা। এতে প্রয়াতের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, গুণমুগ্ধ এলাকাবাসী, স্বজন ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন। এ শোকসভা আয়োজনে প্রয়াতের দুপুত্র মৃণাল কান্তি দাস ও মৃদুল কান্তি দাসের আন্তরিকতা ও পিতৃভক্তি ছিলো লক্ষ্যণীয়। আমরা এ শোকসভাটি থেকে অন্যদের শিক্ষাগ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।