রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সরকারি সম্পত্তিতে মসজিদ নির্মাণ ও ধর্মীয় আবেগ

সরকারি সম্পত্তিতে মসজিদ নির্মাণ ও ধর্মীয় আবেগ
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশটিকে মডারেট মুসলিম কান্ট্রি হিসেবেই বিশ্বের অনেক দেশ জানে। এদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ অনেক আবেগপ্রবণ। এই আবেগকে পুঁজি করে এই দেশের অনেক মানুষ ধর্মের নামে ছোট-বড় অনেক কাজই করে ফেলেন নির্দ্বিধায়। করার প্রাক্কালে অনেকেই এমনটা বলেন, ‘আল্লাহর নামে শুরু করলাম, যা হবার তা-ই হবে’। ইসলাম ধর্মে প্রকৃতপক্ষে কী বলা হয়েছে, সেটি অনুসন্ধান না করে আবেগটাকে সহজে কাজে লাগানোর সুবিধাটাই চলে আসে মাথায়। আমাদের দেশে মসজিদ, মাদ্রাসার একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই প্রয়োজনের তীব্রতা অনুভবের চেয়ে আবেগের তাড়নায় যে নির্মাণ করা হয় বা নির্মিত হয়ে যায়, সেটির ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। কোনো কোনো মসজিদণ্ডমাদ্রাসা নির্মাণস্থলের বৈধতা/অবৈধতার বিষয়টি আবেগের কাছে গৌণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ্যে সহজ কথা একটাই, “আরে! খারাপ কাজ তো আর করে নাই। বানাইলে মসজিদ/মাদ্রাসাই না বানাইছে।”

গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে ‘ফরিদগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি দখল করে মসজিদ নির্মাণ’ শীর্ষক সংবাদে উপরে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতিফলনই কার্যত ঘটেছে। এই সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি দখল করে মসজিদ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মসজিদকে বলা হয় আল্লাহর ঘর, সেই ঘর (জুমা মসজিদ) যদি হয় অবৈধভাবে জমি দখল করে, তা হলে কতটুকু পরিশুদ্ধ হবে নামাজ? সে এক বিরাট প্রশ্ন। জুমা মসজিদ নির্মাণের জন্যে ভূমি হতে হবে ওয়াকফকৃত। অথচ ইউপি চেয়ারম্যান এবং বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জোর করে সরকারি খাস ভূমি দখল করে মসজিদ বর্ধিত করছেন। ঘটনাটি উপজেলার ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের।

জানা যায়, প্রায় ৫০-৬০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয় গৃদকালিন্দিয়া বাজার জামে মসজিদ। মুসল্লি বৃদ্ধির কারণে একতলা থেকে দ্বিতল করা হয় মসজিদটি। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে কাঁচাবাজার। কাগজে-কলমে এই কাঁচাবাজার তোয়াবাজার নামে পরিচিত। বাজারের এই জমিটি ‘ক’ তফসিল খতিয়ান তালিকাভুক্ত জমি। মসজিদের মুসল্লি বেশি হওয়ায় কাঁচা বাজারের জমির ওপরে নির্মিত হচ্ছে মসজিদ বৃদ্ধির কাজ। মুসল্লি বেশি হলে সেখানে হবে জুমার নামাজ থেকে শুরু করে সকল নামাজ। এমনটি জানিয়েছে মসজিদ কমিটির লোকজন। মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, আমাদের এই মসজিদে জোহর, মাগরিব ও এশার নামাজের সময় প্রচুর লোকজন হওয়ায় আমরা কাঁচাবাজারের জমির ওপরে বহুতল ভবন নির্মাণ করছি। নিচে কাঁচাবাজার থাকবে, ওপরে মসজিদ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারো কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিই না। চেয়ারম্যান আমাদের বলেছেন কাজ করার জন্যে। ওয়াক্ফ করা ছাড়া স্থানে নির্মিত মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা হলে নামাজ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হবে না। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, আমার অফিসের কাছে তারা আমাদের জমি দখল করে মসজিদ নির্মাণ করছে। আমাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার অনুমোদন নেননি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফ খান বলেন, আমি অনুমোদন দিয়েছি এইখানে মসজিদ করার জন্যে। সরকারি জমিতে কীভাবে মসজিদ করার অনুমতি দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সারাদেশে অনেক মানুষ সরকারি জমি দখল করে আছে, সেগুলো দেখেন না? এই বিষয়ে কথা বলতে আসছেন? মসজিদ করার জন্যে সকল জমি ওয়াকফ করা লাগে না। এ বিষয় উপজেলা সার্ভেয়ার আবু বকর সিদ্দিক এ প্রতিনিধিকে বলেন, মসজিদের দক্ষিণ পাশে আমাদের একটি তোয়াবাজার রয়েছে। এটা খাস ভূমি। কিন্তু মসজিদ কমিটি অন্যায়ভাবে খাস ভূমিটি দখল করে মসজিদ নির্মাণ করছে। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছি এবং কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন্নাহার বলেন, সরকারি খাস ভূমিতে কোনো নির্মাণ বৈধ নয়। চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তাকে বলেছি কাজ বন্ধ রাখতে।

জায়গার বৈধতার বিষয়টি গৌণ ভেবে মসজিদণ্ডমাদ্রাসা নির্মাণের উদ্যোক্তাদের ভাবনায় থাকে এমন--আগে নির্মাণ শেষ করি, আশা করি এই নির্মাণ কাজ অবৈধ হলেও কেউ সেটি ভাঙ্গতে আসবে না। কারণ, মসজিদণ্ডমাদ্রাসা ভাঙ্গতে গেলেই সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে খুব সহজেই আবেগ-উত্তেজনা তৈরি হবে, যেটি পুলিশ-বিডিআর-র‌্যাব কেনো, সেনাবাহিনীও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। অতএব, আবেগই সম্বল, ধর্মের নামে যা পারো করো--এমন মানসিকতার লোকের অভাব আমাদের দেশে নেই। ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়ায় তো সরকারের সামান্য জায়গায় মসজিদের সম্প্রসারিত অংশ নির্মিত হচ্ছে, আর চাঁদপুর শহরে ও জেলার বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ (সওজ)সহ সরকারের আরো অন্য ক’টি বিভাগের জায়গা অনুমতি ছাড়া দখল করে যে কতো ধর্মীয় স্থাপনা হয়েছে, তার পুরো বিবরণ তুলে ধরলে তো সচেতন, বিবেকবান, বিশেষ করে ধর্মের প্রকৃত বিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিবর্গ বিস্মিত হয়ে যাবেন। আমরা কারো পক্ষে সাফাই না গেয়ে একটি কথাই বলতে চাই, মসজিদণ্ডমাদ্রাসাসহ অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা অবশ্যই জায়গার বৈধতা রক্ষা করে নির্মাণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সহজ আবেগকে পুঁজি করার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। এটি না করলে প্রকারান্তরে ধর্মের নামে যে অধর্ম বা অন্যায় কাজ হয়ে যায়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়