মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

যে জাতির পিতার রক্তদানে অনেক অর্জন---

যে জাতির পিতার রক্তদানে অনেক অর্জন---
অনলাইন ডেস্ক

উপমহাদেশের প্রখ্যাত ছড়াকার অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) লিখেছেন, যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। অন্নদাশঙ্করের জন্মের ১৬ বছর পর ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান যখন তাঁর কর্মকীর্তির মধ্য গগণে, তখন তিনি (অন্নদাশঙ্কর) লিখেছেন কালজয়ী চরণগুলো। অন্নদাশঙ্করের বয়স যখন ৭১ বছর, তখন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হিসেবে খেতাবপ্রাপ্ত ও জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় তাঁর ৫৫ বছর বয়সে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য নিজ বাসভবনে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিশ্চয়ই খুনিচক্র ও ষড়যন্ত্রকারীরা অন্নদাশঙ্করের কালজয়ী চরণগুলোর প্রতি উপহাস/ পরিহাস করে ভেবেছিলো, শেখ মুজিবের কীর্তি ও নাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

কিন্তু ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করেন এবং পিতার সর্বাত্মক আত্মত্যাগ, সপরিবারে শাহাদাতবরণ তথা বিশ্বের ইতিহাসে কোনো জাতির পিতা বা রাষ্ট্রনায়কের বিরল রক্তদানে ঋদ্ধ আদর্শিক চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করা ও সঞ্চারিত করার কাজে নিরলসভাবে সামগ্রিক সত্তা ও সামর্থ্যে আত্মনিবেদন নিশ্চিত করেন। সুফল পেতে সময় নেন মাত্র পাঁচ বছর। ১৯৮৬ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়ে এরশাদ সরকারে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯১ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সরকারে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করে কার্যত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিস্তৃতি ও শক্তি সুসংহত করেন। এর ফলে পিতার মৃত্যুর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখন তাঁর পিতাকে নিয়ে কালজয়ী চরণ লিখা অন্নদাশঙ্করের বয়স ৯২ বছর। তারপর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া ও রায়, যুগান্তকারী পদক্ষেপসহ শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের পুরোটা সময়ই বেঁচে থেকে অন্নদাশঙ্কর রায় নিশ্চয়ই তাঁর লেখার সার্থকতা দেখে পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে ২০০২ সালে পরলোকগমন করেন।

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে না পারলেও বিরোধী দলীয় নেতা হন এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০ আসনে জয়লাভ করে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হয়ে অদ্যাবধি সে পদে অধিষ্ঠিত আছেন। ইতিমধ্যে জাতির পিতার খুনিদের রায় কার্যকর করা ছাড়াও দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে ডিজিটালাইজড্ করে স্মার্ট করার পথে এগিয়ে চলছেন। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ করার স্বপ্নে বিভোর আছেন।

বলা দরকার, বিশ্বের সকল দেশে জাতির পিতা নেই। আমাদের দেশ সৌভাগ্যবান যে, আমাদের জাতির পিতা, আছেন। যাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ৭মার্চ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কালজয়ী ভাষণের মধ্য দিয়ে সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে একাত্ম করে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মায়ানমারের আং সান, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, নেপালের রাজা ত্রিভূবন, শ্রীলঙ্কার ডন স্টিফেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, রাশিয়ার পিটার-১, চীনের সন ইয়ত-সেন, কানাডার স্যার জন এ ম্যাকডোনাল্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলা, সৌদি আরবের ইবনে সৌদ, মালয়েশিয়ার টুংকু আব্দুল রহমান, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ, ব্রাজিলের ডম পেড্রো-১, কম্বোডিয়ার নরোডম সিহানৌক, সোমালিযার মহম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, তুরস্কের মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক, ভিয়েতনামের হো চি মিন হচ্ছেন জাতির পিতা। কিন্তু বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তাঁর এতোটা ত্যাগ, এতোটা বড় অর্জন, সর্বোপরি সপরিবারে শাহাদাতবরণের তথা বিরল রক্তদানের ঘটনা বিশ্বের অন্য কোনো জাতির পিতার জীবনেতিহাসে নেই। এছাড়া বিশ্বের কিছু দেশের জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শের দল টিকে থাকলেও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো দাপুটে অবস্থায় টিকে নেই এবং তাঁদের রক্তসম্পর্কীয় কেউ শেখ হাসিনার মতো চারবার প্রধানমন্ত্রী ও তিনবার বিরোধী দলীয় নেতা হবার রেকর্ড স্মরণকালে নেই। এটা আমাদের জাতির পিতার বিরল রক্তদানের অসামান্য ও অপরিসীম অর্জন বলে মনে করি, যেটি অনাগত ভবিষ্যতে যদি বড় ধরনের কোনো বিপর্যয়ও ঘটে থাকে (আল্লাহ না করুক), তারপরও কোনোভাবে ম্লান বা মুছে ফেলতে পারবে না কেউ।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়