রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

সড়কে ‘উন্নয়নের আঘাতে’ লঞ্চের দুরবস্থা!

সড়কে ‘উন্নয়নের আঘাতে’ লঞ্চের দুরবস্থা!
অনলাইন ডেস্ক

‘কমে যাচ্ছে চাঁদপুরকেন্দ্রিক নৌপথের যাত্রী ॥ প্রায়শই পরিবর্তন হচ্ছে লঞ্চের সময়সূচি’--এটি ছিলো গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যানার হেডিং। এ হেডিংয়ের সংবাদে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিজানুর রহমান লিখেছেন, শত বছরের অধিক সময় ধরে চাঁদপুর অঞ্চলের মানুষের নদীপথে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম চাঁদপুর লঞ্চঘাট ও নদীবন্দর। দেশের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজার গড়ে উঠেছে এই নদীবন্দরকে কেন্দ্র করেই। যাত্রী সাধারণের আসা-যাওয়া, মালামাল লোডিং-আনলোডিং, ঘাটে যানবাহনের জটলা, যাত্রী, চালক, ব্যবসায়ী, হকার, দোকানপাট, নদীবন্দরের কর্মচারী, নৌকা ও ট্রলারের মাঝি, লঞ্চের যাত্রীতে নিজ নিজ ব্যস্ততায় মুখরিত থাকতো ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর নদীবন্দর ও লঞ্চঘাট। নানা কারণে সেটির জৌলুস হারিয়ে গেছে অনেকখানি। মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন, বর্ষা মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধের বড় স্টেশন সংলগ্ন তিন নদীর মিলনস্থলে প্রবল ঘূর্ণিস্রোত, নৌদুর্ঘটনা রোধে পুরানো স্থান (ডাকাতিয়া তীর) থেকে লঞ্চঘাট স্থানান্তর, ইচলী লঞ্চঘাট ও চাঁদপুর রকেট ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে ক্রমশ কমে যাচ্ছে এখানকার নদীপথের যাত্রী। করোনার সময় থেকে লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি এবং পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পরই গত এক বছরে নদীবন্দর তথা লঞ্চঘাটের সেই পুরানো ব্যস্ততা এখন আর চোখে পড়ে না। নৌ যাত্রীদের কোলাহল কমে গেছে অনেকটাই। অনেকে বলছেন, সড়ক পথে দ্রুত যাওয়া যায় বলে নদীপথে লঞ্চের যাত্রী কমে যাচ্ছে।

মিজানুর রহমান তার সরেজমিন প্রতিবেদনে বিভিন্ন লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার, ক'জন যাত্রী ও বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মচারীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। একজন বলেছেন, সড়কের 'উন্নয়নের আঘাতে' লঞ্চের যাত্রী কমে গেছে। তার ভাষাটা কিছুটা অশোভন হলেও কথাটা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক। একসময় চাঁদপুর ও ঢাকার মধ্যে সড়কযোগে কোস্টার বা মিনিবাসে করে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় যাতায়াত করা যেতো। পরবর্তীতে সড়কে যানজটসহ নানা কারণে ৫-৬ ঘন্টায়ও যাতায়াত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় উন্নত মানের লঞ্চ সার্ভিসে সময় যখন তিন ঘণ্টায়, এমনকি আড়াই ঘণ্টায় চলে আসলো, তখন অনেক যাত্রী বাস ছেড়ে লঞ্চে ঝুঁকলো। একের পর এক ঢাকা-চাঁদপুর রূটে নামতে থাকলো আধুনিক ও বিলাসবহুল লঞ্চ। লঞ্চ ভ্রমণে বাসা-বাড়ির পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে গেলো আশাব্যঞ্জক। এ সুযোগে লঞ্চ মালিক, লঞ্চের কর্মচারী, কেন্টিনসহ দোকানদাররা সেবার মান কমিয়ে যাত্রী-শোষণের নানা ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত হলো। উপর্যুপরি করোনার ধকল, তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধকল কাটাতে গিয়ে লঞ্চগুলো চার ঘণ্টার অধিক সময় ধরে প্রতিটি ট্রিপ সম্পন্ন করতে লাগলো।

যাত্রীরা বোকা বা অসচেতন নয়, তারা জানে, যান্ত্রিক যুগে 'টাইম ইজ মানি' নামের কথাটি। তারা ক্রমশ উন্নত হওয়া সড়কে ফিরে যেতে থাকলো। বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই, বাবুরহাট-মতলব সেতু-শ্রীরায়েরচর সেতু-দাউদকান্দি রূটে এবং চাঁদপুর-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর রূটে ছোট-বড় যানবাহনে লঞ্চ ভাড়ার চেয়ে কম খরচে ও কম সময়ে অর্থাৎ মাত্র দু-আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা ও চাঁদপুরের মধ্যে যাতায়াতে স্বস্তি খুঁজে পেলো। পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে বস্তুত সড়কে উন্নয়নের প্রভাবে এবং ঢাকা-চাঁদপুর নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে সামগ্রিক সেবার মান পূর্বের চেয়ে কমে যাওয়াতে যাত্রীরা ক্রমশ লঞ্চবিমুখ হয়ে পড়ছে। এই সত্য উপলব্ধি করে যদি লঞ্চ মালিকগণ আত্মসমালোচনায় আত্মদোষ পর্যবেক্ষণে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে দু-আড়াই-তিন ঘণ্টার ট্রিপসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন, ভালো মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা তথা নিজেদের সার্ভিস প্রমোটে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, তাহলে যাত্রীরা পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক লঞ্চের দিকে পূর্বের ন্যায় আবার ঝুঁকতে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়