প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
কোনো কিছুকে হাল্কা করে না দেখার উপকারিতা

‘চাঁদপুর নৌ থানার ওসির কৌশলগত কঠোরতা : হামলা থেকে রক্ষা পেলো ফারহান-৭ লঞ্চের যাত্রীরা’। এটি রোববার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম। সংবাদের সূচনা ও গভীরে ঢুকলে দেখা যায়, চাঁদপুর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কৌশলগত কঠোরতায় ঝালকাঠি-বরিশাল ভায়া চাঁদপুর টু ঢাকাগামী যাত্রীবাহী ফারহান-৭ লঞ্চের হাজারো যাত্রী সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে।
জানা যায়, এম ভি ফারহান-৭ লঞ্চটিতে চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকার রাসেল মোল্লা (৪৫), পিতা- মকবুল হোসেন মোল্লা ও মনির গাজী (৩০), পিতা- হাসেম গাজী পরিবারের সদস্যরা চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী হন। একইভাবে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মোঃ হারুন (৫০), পিতা- আফতাব আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ঘাটের যাত্রী হন। এই যাত্রীদের মধ্যে মোঃ হারুন মিয়া পূর্বে লঞ্চে উঠে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে লঞ্চে কোনো আসন বা সীট না পাওয়ায় লঞ্চটির দ্বিতীয় তলায় ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে অবস্থান নেন। চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী হিসেবে ওঠা রাসেল মোল্লা ও মনির গাজী একইভাবে কোনো আসন বা সীট না পেয়ে লঞ্চটির কোথাও অবস্থান নেয়ার জন্যে চেষ্টা চালান। কিন্তু লঞ্চটিতে প্রচুর পরিমাণ যাত্রী থাকায় তিনি দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে চাদর বিছানোর চেষ্টা বা দাঁড়িয়ে থাকার ব্যবস্থা করার সময় হারুন মিয়ার বিছানো চাদরে পা পড়ে। এতে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির পর এক পর্যায়ে হারুন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী রাসেল মোল্লা ও মনির গাজীর পরিবারকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এমনকি সাথে থাকা নারী ও শিশুরাও এই হামলা থেকে রেহাই পায়নি। এ অবস্থায় চাঁদপুর ঘাটের লোকজন আহত হয়ে চাঁদপুরে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে জানালে স্বজনরা আরো লোকজন নিয়ে ঘাটে ভিড় করতে থাকে।
এক পর্যায়ে আহতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কেউ একজন বিষয়টি ফারহান-৭ লঞ্চের চাঁদপুর ঘাটের সুপারভাইজার শাহআলম মিজিকে জানান। তিনি মোবাইল ফোনে লঞ্চের স্টাফদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়ে তা সুষ্ঠু সমাধানের জন্যে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা পেয়ে লঞ্চের স্টাফগণ আপ্রাণ চেষ্টা করেও চাঁদপুরের লোকজনের অনীহার কারণে তা সমাধান করতে পারেননি। এদিকে চাঁদপুরের যাত্রীদের লঞ্চ থেকে একের পর এক মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ঘাটে শতাধিক লোকজন ভিড় করতে থাকে। চাঁদপুর ঘাটের সুপারভাইজার ঘটনাটি আঁচ করতে পেরে তিনি চাঁদপুরের লোকজনকে সরাসরি বলে দেন, ঘাটে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। আপনারা প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেন এবং নৌ পুলিশকে ঘটনা জানান। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। এই কথা শোনার পর ফারহান-৭ লঞ্চে যাত্রী হিসেবে অবস্থানরত চাঁদপুরের লোকদের পক্ষ থেকে কোনো এক স্বজন বিষয়টি নৌ পুলিশকে জানান। নৌ পুলিশের ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ঘাট সুপারভাইজার শাহআলম মিজির সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং ফারহান-৭ ঘাটে ভিড়ার সময়টি জেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের উদ্যোগ নেন। রাত ২টা থেকে নৌ পুলিশের বিশাল ফোর্স সহ ওসি স্বয়ং এবং চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের বিরাট ফোর্স বড়স্টেশন লঞ্চঘাট ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। শুধুমাত্র যাত্রী ব্যতীত কাউকে ঘাটে ঢুকতে না দিয়ে লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপদে ওঠানামার ব্যবস্থা করেন। রাত ২টা ৫ মিনিটে লঞ্চটি চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছার পর নৌ-পুলিশ কৌশলে ঘটনার সাথে জড়িত বিবদমান যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামিয়ে এনে পুরো ঘটনা শুনেন। এক পর্যায়ে বিবদমান যাত্রীদের স্বজনদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান করা হয়। সমাধানের পর ঢাকাগামী যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি একটি লঞ্চের চলমান অবস্থায় যাত্রীদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধকে হাল্কাভাবে নিয়ে সেটি নিরসনের বিষয়টি ওই লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু সেটি তিনি করেন নি। তিনি হাল্কা বিষয়কে অনেক গুরুত্বের সাথে নিয়ে কৌশলগত যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, তাতে সুধী-সজ্জন-সচেতন, সর্বোপরি শান্তিপ্রিয় মানুষ খুশি না হয়ে পারেননি। তিনি এমনটি না করলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে স্মরণকালের উল্লেখযোগ্য অপ্রিয় ঘটনা ঘটতো এবং তাতে চাঁদপুরের বদনামই হতো। তিনি পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে যে ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাতে তাঁর পেশাদারিত্বে আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা এজন্যে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। সাথে সাথে চাঁদপুর-ঢাকা রূটের লঞ্চগুলোতে কেবিনকেন্দ্রিক নানা গুঞ্জনের অবসান ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপগ্রহণের অনুরোধ জানাই।