প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
সড়ক অবরোধের মোক্ষম স্থান কি হাজীগঞ্জ?

কিছুদিন আগে হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। তারা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফলে নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্ট কমিটি। এতে সড়ক অবরোধের কার্যকারিতায় উদ্বুদ্ধ হয় কেউ না কেউ। যেমনটি আমরা দেখলাম গত ৭ জুলাই শুক্রবার। সরকারি তথা শাসক দলের অঙ্গ সংগঠন বলে বহুল পরিচিত ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধের আয়োজন করে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়। এ আলোচিত ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংবাদের উপজীব্যে পরিণত হয়। চাঁদপুর কণ্ঠে এমন ঘটনায় পরিবেশিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে হাজীগঞ্জে ছাত্রলীগের দেড় ঘণ্টা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ'। এ সংবাদে লিখা হয় যে, যোগ্যদেরকে ছাত্রলীগের কমিটির যোগ্য স্থানে পদ দেবার দাবিতে পুরো দেড় ঘন্টা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের একাংশ। শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হাজীগঞ্জের পৌর এলাকার মকিমাবাদ ও টোরাগড় গ্রামে আলাদাভাবে সড়ক অবরোধে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। সবার সাথে আলোচনা করে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হবে এমন বিষয়টি মুঠোফোনে পুলিশ ও অবরোধকারীদেরকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিজি আশ্বস্ত করলে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় অবরোধকারী ছাত্রলীগের এই অংশটি। তবে কথায় ও কাজে এক না হলে ফের সড়ক অবরোধে যাবে বলে জানান অবরোধকারী নেতৃবৃন্দ।
|আরো খবর
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগ হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে বা আজকেই (শুক্রবার) দেয়া হবে এমন একটি গুঞ্জন উঠে। এমনকি কাকে কাকে মূল পদ দেয়া হয়েছে তা নিয়েও গুঞ্জন উঠে। এরপরেই হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের একাংশ বিকেল ৪টার দিকে আলাদাভাবে পৌর এলাকার টোরাগড় ও মকিমাবাদ গ্রামে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার গণপরিবহনসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার কিছু পরেই হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত)সহ পুলিশের একাধিক টিম মকিমাবাদ এলাকায় পৌঁছে অবরোধারীদের সাথে কথা বলে অবরোধ তুলে দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ থেকে এ বিষয়ে কোনো আস্বাসের কথা না পেলে অবরোধ তুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন অবরোধে অংশ নেয়া নেতৃবৃন্দ। অবরোধের শুরু থেকে ঘটনার প্রায় দেড় ঘন্টা পরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিনের সাথে অবরোধের স্থান থেকে মুঠোফোনে কথা বলেন হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, অবরোধকারী নেতা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শান্ত ও পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর কাদের সবুজ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিজি মুঠোফোনে আশ্বস্ত করে বলেন, সবাইর সাথে আলোচনা করে হাজীগঞ্জ ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হবে। এরপরেই অবরোধকারীরা সড়ক থেকে সরে গেলে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেন। এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শান্ত, পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর কাদের সবুজ যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কমিটিতে আমরা যাদের নাম শুনতে পাচ্ছি তাদের মধ্যে বিবাহিত, নেশাকারী ও অছাত্র রয়েছে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, ছাত্রলীগ করতে যে যোগ্যতা লাগে তা মেনে কমিটি দেয়া হোক। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিজি আমাদেরকে মুঠোফোনে যেভাবে আশ্বস্ত করেছেন আমরা তা মেনে নিয়েছি।
আমাদের দেশে গত বেশ ক'বছর ধরে বড়ো বড়ো ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও অধীনস্থ কমিটি সমূহ কোনো সম্মেলনের মাধ্যমে কিংবা ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠন না করে 'উপর' থেকে ঘোষণা করে দেয়া হয়। এমনটি বড়ো রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হতে দেখা যাচ্ছে। এতে কেন্দ্রে নূতন নেতা হতে আগ্রহীদের পক্ষে তদ্বির, লবিং কিংবা তেল-তুলসী খরচ করার গুঞ্জন শোনা যায় এবং ফলস্বরূপ বঞ্চিতদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও গ্রুপিং লক্ষ্য করা যায়। পরিণতিতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে, যেমনটি পড়েছে হাজীগঞ্জে গত শুক্রবার। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন হওয়ার কারণে ছাত্রলীগের সড়ক অবরোধ নিরসনে পুলিশ কঠোর ভূমিকাস্বরূপ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, রাবার বুলেট নিক্ষেপের মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ এমনটি করতো কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।
আমাদের দেশে অধিকাংশ স্থানে ছাত্র সংগঠনের যারা শীর্ষ নেতা হন, ছাত্র সংসদের নেতা হন, তাদের অধিকাংশই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান। তারা সাংগঠনিক কাজের অগ্রগতির চেয়ে নিজেদের আর্থিক অগ্রগতিতে বেশি মনোনিবেশ করেন। ফলে তাদের বেশভূষা ও আচার আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে স্বৈরাচারী হতে দেখা যায়। এর ফলে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়ার অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ ঘটে। চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সেক্রেটারী স্বৈরাচারী আচরণ করছেন এমনটি তাদের কোনো প্রতিপক্ষ দাবি করতে পারলেও আমাদের সেটি করার সুযোগ নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঘোষিত কমিটি নিয়ে প্রায়শই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং তা নিরসনে জেলা ছাত্রলীগকে ইতিবাচক ভূমিকা নিতেও দেখা যায়। আমরা হাজীগঞ্জে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার আগে গুঞ্জনভিত্তিক যে প্রতিক্রিয়া দেখলাম এবং তা নিরসনে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির তাৎক্ষণিক আশ্বাসের যে নমুনা দেখলাম, তাতে ইতিবাচকতা খুঁজে পেয়েছি। এ আশ্বাস রক্ষা করা হোক সে প্রত্যাশা করছি। অন্যথায় হাজীগঞ্জ যে আবার সড়ক অবরোধের মোক্ষম স্থানে পরিণত হবে না, সে বিষয়ে কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না।