প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
লঞ্চঘাটগুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে ভাবুন
চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণে হাইমচর উপজেলার অবস্থান। ১৭৪.৪৯ বর্গকিলোমিটার (৪৩ হাজার ১১৭ একর) আয়তনবিশিষ্ট এই ছোট উপজেলাটির পূর্বে ফরিদগঞ্জ, দক্ষিণ-পূর্বে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে মেঘনা নদী ও বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলা এবং পশ্চিমে শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলা অবস্থিত। এ উপজেলাটি মেঘনার ভাঙ্গনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত একটি অবহেলিত জনপদ। এই জনপদের চরাঞ্চলের অধিবাসীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর রাজধানী ঢাকা ও চাঁদপুর জেলা সদরে তুলনামূলক কম খরচে যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন হচ্ছে লঞ্চ। এখানে চারটি লঞ্চঘাট রয়েছে মেঘনার তীরে। কিন্তু লঞ্চে ওঠানামার নিরাপদ ব্যবস্থা নেই ঘাটগুলোতে। এ বিষয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে ইতঃপূর্বে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে আমরা এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছিলাম। আজও আবার লিখতে হচ্ছে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় খুবই গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত একটি সংবাদের আলোকে।
|আরো খবর
এ সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘হাইমচরে ৬০ বছরেও স্থাপন হয়নি ৪ লঞ্চঘাটের পন্টুন’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, এসব লঞ্চঘাটে পন্টুন ও বসার স্থান না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বিগত ৬০ বছর ধরে এসব ঘাট ইজারা হলেও যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা ন্যূনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মেঘনা পাড়ের ব্লক বাঁধের ওপর দিয়ে খাড়া সরু সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদেরকে লঞ্চে ওঠানামা করতে হয়। ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল নিয়ে পড়েন বেকায়দায়। অনেক সময় মূল্যবান মালামাল নদীতে পড়ে যায়। শিশু ও বৃদ্ধরা লঞ্চে ওঠানামা করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
চারটি লঞ্চঘাটের মধ্যে নয়ারহাট লঞ্চঘাট ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। বাকি চরভৈরবী, হাইমচর ও তেলির মোড় ঘাট ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। দুঃখের বিষয় হলো, এসব লঞ্চঘাট ইজারা দিয়ে সরকার রাজস্ব পেলেও পন্টুন দূরে থাক, ন্যূনতম বসার ব্যবস্থাও করতে পারেনি। এটা নিঃসন্দেহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে হয়েছে।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা বলেছেন, হাইমচরের লঞ্চঘাটগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। যাত্রীদের ওঠানামার কষ্ট উপলব্ধি করেছি। খুব শীঘ্রই বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন নয়ারহাট ঘাটে পন্টুন স্থাপন করা হবে। বাকি ৩টি লঞ্চঘাট যেহেতু উপজেলার আওতাধীন, সেগুলো প্রক্রিয়ার জন্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হলে এবং নয়ারহাট ছাড়া অন্য ৩টি লঞ্চঘাট বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তর করা হলে পন্টুনের ব্যবস্থা করা হবে।
আমরা হাইমচরের চারটি লঞ্চঘাটে পন্টুন স্থাপন ও যাত্রীদের বসার স্থানের বিষয়ে চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ভেবে দেখার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের মতে, হাইমচর উপজেলা প্রশাসন রাজস্ব আয়ের স্বার্থে ৩টি লঞ্চঘাট নিজেদের আওতায় রাখলে অবশ্যই যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাসহ পন্টুন স্থাপন বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। এমতাবস্থায় উপজেলা প্রশাসন বড়জোর বসার সুবন্দোবস্ত করতে পারলেও নিশ্চিতভাবে ব্যয়বহুল পন্টুন স্থাপনের ব্যবস্থা করতে পারবে না। সে বিবেচনায় যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উপজেলা প্রশাসন ৩টি লঞ্চঘাট বিআইডব্লিউটিএকে দ্রুত হস্তান্তর করে পন্টুন স্থাপনের ব্যবস্থা করাই উত্তম। আমরা এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।