প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ছবিই বলে অনেক কথা
কুমিল্লায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে কোরআনের অবমাননার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ শহর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মণ্ডপে মণ্ডপে, মন্দিরে মন্দিরে এবং হিন্দুদের বাড়িতে একদল উচ্ছৃঙ্খল মুসলমান যে তা-ব চালিয়েছে, তাতে মহানবী (সাঃ)-এর আদর্শে বিশ^াসী খাঁটি মুসলমান ও বিবেকবান মানুষ মাত্রই হতভম্ভ, বিস্মিত ও বিব্রত হয়েছে। হাজীগঞ্জ শহরে তা-ব সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট না ছুড়ে গুলি ও ফাঁকা গুলি চালিয়ে অধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। পরিণামে ঝরে গেছে পাঁচটি তাজা প্রাণ। স্মরণকালের মধ্যে এমন প্রাণহানির ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। এর রেশ ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, সর্বোপরি মন্দিরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও কিছু হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে, যাতে সারাবিশে^ বাংলাদেশের, ক্ষমতাসীন সরকারের ও শাসক দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। আর মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে দেশে বসবাসরত হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সকল ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
|আরো খবর
হাজীগঞ্জে পুলিশের গুলিতে প্রাণহানির ঘটনায় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পরদিন অকুস্থলে ছুটে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ অনেকে। গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি। তারপর পর্যায়ক্রমে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, স্থানীয় এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে অন্য নেতৃবৃন্দ হাজীগঞ্জে আসেন, শোকাহত পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান, ঘৃণা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে শাসক দলীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থাগ্রহণের আশ^াস দেন, আর অন্য সকলে সরকারের নিকট কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।
ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জ শহরে মন্দিরে হামলা চালানোর জন্যে ফেসবুকে আহ্বানকারী কথিত ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয় হাসান জাহিদ শনাক্ত হয়েছে। তবে সে পালিয়ে থাকায় তার বাবা ও ছোট ভাইকে আটক করা হয়েছে। আর ভিডিও ফুটেজ দেখে মন্দিরে হামলার নেতৃত্বদানকারী মাদ্রাসা শিক্ষক কামাল উদ্দিন আব্বাসীকে শনাক্ত ও আটক করা হয়েছে, যিনি আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন। এখন দেখার অপেক্ষা, দুটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পায় কি-না এবং রিপোর্ট অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় কি না।
মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি ঘটনাস্থল সমূহ পরিদর্শন, সমবেদনা জ্ঞাপন ও ব্যবস্থাগ্রহণের আশ^াসে বসে থাকেননি। তিনি শুক্রবার হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে সম্প্রীতি সমাবেশ ডাকেন এবং শান্তি শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। এতে মসজিদের খতিব-ইমাম, মুসল্লি, মাদ্রাসার ছাত্র, মন্দিরের পুরোহিত, পূজা উদ্যাপন পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠনের সদস্য ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে মিলে মিশে একাকার হয়ে যান। এর ভিডিও ছবি ও স্থির ছবি দেখে বোঝা যায়, এই সমাবেশ-শোভাযাত্রা কতোটা যথার্থভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা এজন্যে এর আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাই। এমনটি সর্বত্র যথার্থ ও কার্যকরভাবে হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।