প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:১৬
সবজিতে স্বস্তি।। চালের বাজার পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটছে
বর্তমান বাজারে সবজির দামে অনেকটা স্বস্তিতে ভোক্তারা। মৌসুমের শুরুতে যে পরিমাণ দাম ছিলো, তা বর্তমানে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু চালের বাজার পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটছে। চালের দাম একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। এছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি।
|আরো খবর
শনিবার (১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ) চাঁদপুর শহরের পালবাজার, পুরাণবাজারের মসজিদ পট্টি, লোহারপুলসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে দেখা গেছে, শুক্রবার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কয়েক দিন আগেও পেঁয়াজের কেজি ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে বিদেশ থেকে আমদানি। অন্যদিকে সরবরাহ বেশি থাকায় সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম কমে ৪০-৫০ টাকায় নেমেছিলো। তবে এতে পেঁয়াজ চাষিরা তেমন লাভ পাচ্ছিলেন না। এ কারণে চাষিরা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়িয়েছে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। বাজারভেদে বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এ দাম ৩০-৪০ টাকা কম ছিলো।
বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় কম দামে কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দুল ৭০ টাকা, টমেটো ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে এবং পালং শাক, লাল শাক, পেঁয়াজের কলি প্রতি আঁটি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। এর মাঝেও চালের দাম সীমাহীন বাড়তি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে এখন মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, মাঝারি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং সরু চাল ৭০ থেকে ৭৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালে কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা, মাঝারি চালে ২ টাকা ও সরু চালে ২-৪ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টিসিবির হিসাবের চেয়ে বাজারে চালের দাম আরও কিছুটা বেশি। জহুরা মিনিকেট চালের কেজি ৮২ টাকা, আল যারা ২৯ চাল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুচরা দোকানগুলোতে এখনো চাহিদা অনুসারে তেল সরবরাহ করছেন না ডিলাররা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে স্বল্প সংখ্যায় এক-দুটি ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের এই সরবরাহ-সংকট প্রায় দুমাস ধরে চলছে। আর টিসিবির হিসাবে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২-৭ টাকা বেড়েছে।
পুরাণবাজার মসজিদ পট্টির ভাই ভাই মুদি দোকানি জালাল জানান, ২ টাকা কেজিতে বেড়ে সয়াবিন ১৮২ থেকে ১৮৭ টাকা, কোয়ালিটি ১৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের দাম বেড়েছে। মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বছরের শুরু ও শীত মৌসুমে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে মাছের। সে তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে। শেষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বেড়েছে মাছের দাম। এখন কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেশি।
বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ১৫০-১৮০ টাকার মধ্যে ছিল। এছাড়া একইভাবে দাম বেড়ে পাবদা ৩৬০-৪০০, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, এক কেজি সাইজের রুই-কাতল ২৫০-২৮০, বড়ো রুই-কাতল ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি শিং ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে এবং ছোট ইলিশের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। জাটকার চাইতে একটু বড়ো টেম্পু ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।