প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জলাবদ্ধতায় মাছ, ধান, শাক-সবজি, রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
ফরিদগঞ্জে ক্ষতির পরিমাণ ৭০ কোটি টাকা
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ জলবদ্ধতায় কোথাও বুক, কোথাও কোমর এবং কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, মাছের ঘের, পুকুর এবং ফসলসহ শত শত হেক্টর জমি। হাজার হাজার মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি। যাদের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে তারা বাধ্য হয়ে সরকার ঘোষিত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। পানি কমতে শুরু করায় ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। মাছের ঘের, পুকুর, কৃষকের রোপণকৃত আমন, আমনের বীজতলা, আখের ক্ষেত, বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি এমনকি রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল সিআইপি বাঁধের ভেতরে। এ কারণে এখানে বন্যার পানি বাঁধ ভাঙ্গা ছাড়া প্রবেশের সুযোগ নেই। কিন্তু পানি নিঃষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় ১০/১২ দিন ধরে উপজেলাবাসীর অনেকে পানির নিচে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছ চাষী এবং কৃষকবৃন্দ। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে এসব খাতে। এ সঙ্কট তারা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন সেটা তাদের জানা নেই। টানা বর্ষণে ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের, পুকুর ও কৃষকের ফসল। যারা আউশ অথবা আমন লাগাবেন তাদের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। লাখ লাখ কৃষক ধানের চারা লাগাতে পারছেন না অতিরিক্ত পানির কারণে।
গত ৪/৫ দিন খরার ফলে আস্তে আস্তে পানি কমতে শুরু করেছে। এতে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ। ক্ষয়ক্ষতির সাথে যুক্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। কাঁচা রাস্তার মাটির ক্ষয় হয়েছে। সলিং রাস্তার মাটি সরে যাওয়াতে ইট সরে যাচ্ছে। পাকা রাস্তার কার্পেটিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে অনেক বড় বড় গাছ পড়ে গিয়ে রাস্তার অংশে গর্ত হয়েছে। পানির স্রোত রাস্তার যে পাশ দিয়ে নেমে গেছে সে অংশ ভেঙ্গে গেছে। যারা আদাসহ শাক সবজি চাষ করেছেন তাদের ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলায় চাষকৃত জমি মোট ২৬৯৫ হেক্টর। ৪/৫ দিনের অতি বর্ষণের কারণে বেড়ির ভেতরে প্রায় ৭০০ হেক্টর জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৯ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল সরকার বলেন, আউশ ধান ৪৫ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ৯১ হেক্টর, রোপণকৃত আমন ৩১২ হেক্টর, বিভিন্ন জাতের গ্রীষ্মকালীন শাক সবজি ৬৯ হেক্টর ও আখ ১৩ হেক্টরসহ মোট ৫৩০ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৩০ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোপা আমনের পুনরায় বীজতলা তৈরির পরামর্শ দিয়েছি এবং কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে পুনরায় বীজ সরবরাহ শুরু করেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহাম্মদ বলেন, এখনো অনেক রাস্তা পানির নিচে। রাস্তাঘাট পুরোপুরি দৃশ্যমান হলে ক্ষতির পুরোপরি পরিসংখ্যান দেওয়া যাবে। আমাদের কাজ চলমান আছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু পরিমাপ করতে পেরেছি, তাতে উপজেলার প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা।