সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর কণ্ঠ আমার স্বপ্নের মঞ্চ
শামীম হাসান

সময়টা ছিলো ২০১৪ সাল। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী থাকাকালীন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকায় বড়দের দেখাদেখি ছড়া কিংবা কবিতা লেখার চেষ্টা করতাম। কাগজে নিজের কবিতা লিখে খামে ভরে তিন টাকার ডাক টিকিট লাগিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসের ঠিকানায় পাঠাতাম। লেখা পাঠানোর পর কবে যে শুক্রবার /শনিবার আসবে তথা চাঁদপুর কণ্ঠের শিশুকণ্ঠ কিংবা পাঠক ফোরাম বিভাগে আমার লেখা ছাপবে, তার জন্যে মধুর অপেক্ষার প্রহর গোণা। সকাল ৮ টায় এসে ম্যাগাজিন হাউজের তাজু কাকার দোকানে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকার বান্ডেল খুলবে আর আমার লেখা ছাপিয়েছে এমন এক কপি পত্রিকা হাতে পাবো...! পত্রিকা বিক্রির দোকান বাসা সংলগ্ন হওয়ায় কোনো কোনো শুক্রবার/শনিবার ঘুম থেকে উঠে যদি ৮ টার বেশি বেজে যেতো, তবে দিতাম ভোঁ-দৌড়। এক পর্যায়ে নিয়মিতই ডাকযোগে লেখা পাঠাতাম। পত্রিকার জন্যে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গোণার পর যেদিন লেখা ছাপানো হতো না সেদিন মুখটাকে যেন প্যাঁচার মতো করেই বাসায় ফিরতাম আর মনে মনে ভাবতাম, আমার তিনটা টাকাই লস। আর যেদিন লেখা ছাপানো হতো, সেদিন আমাকে আর কে পায়! পত্রিকার লেখা ক্লাসে গিয়ে বন্ধুদের দেখানো, বাসায় সবাইকে দেখানো--সে কী বাঁধভাঙ্গা আনন্দ! কখনো কখনো তো খুশিতে সকালের নাস্তা করতেই ভুলে যেতাম। পত্রিকায় ছাপানো নিজের কবিতাটা প্রতি মিনিটেই যেন পাঁচণ্ডসাতবার পড়া হয়ে যেতো। মোট কথা কবিতা ছাপানোর সেই দিনের পত্রিকাটি সারাদিন আমার হাতেই থাকতো।

আমার জীবনে প্রথম লেখা ‘জন্মভূমি’ কবিতাটি চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরাম বিভাগে ছাপা হয়েছিলো। সেই থেকে পরবর্তীতে লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ২০১৫/২০১৬ সালে চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজনে পাঞ্জেরী- চাঁদপুর কণ্ঠের বিতর্কের কথা জানলাম এবং সে সময়কালে ফরিদগঞ্জে মোট কথা বিতর্কের জয়জয়কার। একই বছর তৎকালীন সম্পৃক্ত থাকা আমাদের সংগঠন ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামে'র বড় ভাইয়া-আপুরা কলেজ পর্যায়ে টানা তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় এবং একই বছর স্কুল পর্যায়ে আমাদের বিদ্যালয় ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। তখন অন্য সবার মতো টানা কিংবা স্পষ্ট কথা বলতে পারতাম না। কথা বলার সময় মুখে কথা আটকাতো, তাই সে সময় বিতর্ককে উপভোগ করতেই বেশি ভালো লাগতো। স্কুলে তখন বিতর্কের জোয়ার ছিলো বলে তখন স্কুলে অনেক বিতার্কিক থাকায় স্কুল দলের হয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে বিতর্ক করার সুযোগ হয়নি, তবে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে আমাদের স্কুল দলটির সাথে থাকায় মোটামুটি বিতর্কের খুঁটিনাটি বেশ ভালোই আয়ত্ত করেছিলাম। সেই সাথে বিতর্ক মঞ্চে কথা বলার জন্যে নিজেকে তৈরি করার দৃঢ় পণ করি। এরপর অন্যান্য টুর্নামেন্ট কিংবা অন্য অনেক প্লাটফর্মে বিতর্ক করেছিলাম। হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখনই কলেজে একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলাম, তখন সুযোগ হয় নিজের কলেজ দলের দলপ্রধান হিসেবে ২০১৯ সালে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে প্রতিনিধিত্ব করার। সে বছর আর আমায় ঠেকায় কে...? উপজেলা পর্বের ফাইনাল সহ তিন বিতর্কেই নিজে ব্যক্তিগতভাবে শ্রেষ্ঠ বক্তা হওয়ার পাশাপাশি ফরিদগঞ্জ উপজেলা পর্বে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া বিতর্ক দল হিসেবে কলেজ পর্যায়ে নিজের দলকে উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করি। একই বছরের বিতর্কে পরের পর্বে প্রতিপক্ষ মতলবের একটি কলেজ দলকে বড় পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে আমরা পৌঁছে যাই স্বপ্নের সেমি-ফাইনাল রাউন্ডে। সে কী প্রাপ্তির উল্লাস! কুরবানির ঈদ সহ লম্বা বিরতির পর সেমি-ফাইনাল হওয়ায় এবং আমার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সেমি-ফাইনালে দলের হয়ে বিতর্ক করতে যাওয়া হয়নি। নিজে বিতর্ক করতে না পারলেও পরীক্ষার ফাঁকে একদিন বন্ধ পেয়ে বিতর্কিকদের সার্বিক প্রস্তুত করে দেই। কিন্ত দুর্ভাগ্যর বিষয় হলো, সেমি-ফাইনালে আমাদের দলটা হেরে যায়। পরদিন ইংরেজি পরীক্ষা ছিলো। হেরে যাওয়ার খবর শোনার পর সে কী কান্না। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন সন্ধ্যায় আমি পড়ার টেবিলে পড়ছিলাম আর আমার চোখের পানিতে বইয়ের কয়েকটা পাতা ভিজে গিয়েছিলো। সে বছর আমার স্বপ্নের গুড়েবালি হয়ে যায়।

সময়ের পরিবর্তনে ২০২১ সাল থেকে সৌভাগ্য হয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার। এরপর থেকে চাঁদপুর কণ্ঠ আমার পরিবার, পত্রিকাটি আমার জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে একেবারে বিরতিহীনভাবে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিদিনের প্রিন্টিং সংস্করণের শিরোনামগুলো নিয়ে দৈনিক নিউজ বুলেটিন করা, নিয়নিমিত সংবাদ পাঠানোর পাশাপাশি চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়াকণ্ঠ পাতায় ধারাবাহিক ভাবে নিয়মিত কাজ করা, সব মিলিয়ে আমার ক্ষুদ্র জীবনের বড় এক প্রাপ্তি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। আমি গর্ব করে বলতেই পারি, আজ জেলার সর্বাধিক পাঠিত ও প্রথম দৈনিক এবং সর্বোচ্চ প্রিন্ট সংখ্যার জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের আমি একজন। চিরকাল ধরে টিকে থাকুক পাঠকপ্রিয় ও জেলাবাসীর প্রিয় পত্রিকা ‘দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ’।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়