প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:০৬
শেষবারের মতো মেয়েকে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া: এরপর আর ফেরা হলো না বাবার
এসএসসি পরীক্ষার পথে মেয়েকে পৌঁছে দিতে গিয়ে বাবার মৃত্যু: পরীক্ষার হলেই বাবার নিঃশ্বাস থেমে গেল

মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা। তাই সকালে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে রওনা দেন বাবা। কিন্তু কে জানতো, মেয়েকে পৌঁছে দিতে গিয়েই নিজের জীবনাবসান ঘটবে! পটুয়াখালীর বাউফলে ঘটেছে হৃদয়বিদারক এই ঘটনা।
|আরো খবর
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রাম থেকে কালিশুরী এসএ ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান (৫৫)। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে তাসফিয়া, যিনি এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
গাজিমাঝি বাজার এলাকায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মাহবুবুর রহমান। স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। একইসঙ্গে তাসফিয়াকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে কালিশুরী এসএ ইনস্টিটিউশনের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন,
“তাসফিয়া এখনো পরীক্ষার মধ্যে আছে। এখনো জানে না—পরীক্ষার জন্য যে মানুষটা তাকে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি আর নেই।”
কালিশুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“মাহবুবুর রহমানের তিন মেয়ের মধ্যে তাসফিয়া ছিল মেজো। পরীক্ষার পরে তাকে ধীরে ধীরে বিষয়টি জানানো হবে।”
মাহবুবুর রহমান নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন। কালিশুরী এসএ ইনস্টিটিউশনেরই প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। নিজের মেয়েকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন—যেমনটা একজন সচেতন বাবার পক্ষেই স্বাভাবিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজিমাঝি বাজারে হঠাৎ তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন এবং মোটরসাইকেল থামিয়ে বসে পড়েন। এরপর দ্রুত স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে হাসপাতালে নেন
মাহবুবুর রহমান ছিলেন শিক্ষক সমাজে একজন প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন মুখ। তাঁর মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, বিদ্যালয়, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল, দায়িত্ববান ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। নিজের মেয়ের পরীক্ষা এবং কেন্দ্রের দায়িত্ব—দুই দিক সামলাতে গিয়ে যে এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, কেউ কল্পনাও করেনি।
তাসফিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগুলোর একটি চলাকালে তিনি তাঁর বাবাকে হারালেন। এখনো তাকে জানানো হয়নি এই দুঃসংবাদ। শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার শেষ দিন পর্যন্ত তাকে সবকিছু স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ