প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শাহমাহমুদপুরে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ ॥ হুমকিতে শত শত একর কৃষি জমি
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ছোট শাহতলী-ভড়ঙ্গারচর এলাকার প্রায় দুশ’ একর কৃষিজমি এখন পানিতে ডুবে আছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক বছর ধরে ওই গ্রামের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। এর মাঝেও অনেক কষ্ট করে ওইসব জমিতে ধানের চারা রোপণ করলেও তা পচে নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া থেমে থেমে আসা বৃষ্টির পানি জমে থাকার ফলে আগে থেকে রোপণকৃত ধানের চারাগুলো পানির নিচে ডুবে গিয়ে পচে নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামের অসংখ্য কৃষক। তাদের চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যায় শত শত বিঘা জমির ধানের চারা। ফলে কৃষকের বুকে জমছে চাপা আর্তনাদ। তাদের চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ লেগেই থাকে বছরের পর বছর।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার মৌসুম শেষ হলেও শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ছোট শাহতলী ও ভড়ঙ্গারচর এলাকার শত শত একর কৃষি জমি তলিয়ে আছে পানির নিচে। এ এলাকাগুলো কৃষিনির্ভর হলেও তা এখন শুধু অতীত। ফলে গ্রামবাসীর আয়ের বড় একটা অংশ আসে কৃষি ফসল থেকে। তবে এক সময়ে এই জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন হতো চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার ছোট একটি খালের মাধ্যমে, যার সংযোগ ছিলো ডাকাতিয়া নদী থেকে বের হওয়া বিশ্ব খালের সাথে। ছোট খালটির এখন আর দেখা নেই। আবার রেল লাইনের পাশের বাড়ির মালিকরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই রাস্তা নির্মাণ করায় এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কয়েকজন কৃষক।
দেলোয়ার হোসেন মাস্টার, আবুল কালাম, দেলোয়ার হোসেন দুলুসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এক সময় এই বিলে বোরো, রোপা, আমন ও রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল আবাদ হতো। কিন্তু এই বিলের পানি নামার অংশগুলো কয়েকজন জমির মালিক ভরাট করে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। কালভার্ট বা নালা না থাকায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বিলটি ক্রমান্বয়ে অনাবাদী হয়ে পড়েছে। এখানকার জমির মালিকরা অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন, যেখানে সেখানে যে যার মতো বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর এলাকার বিভিন্ন ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে এলাকার কৃষি জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোরসালিন হোসেন বলেন, এ এলাকার জমিগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই খাল খনন করা হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, ঐ এলাকার কয়েকজন কৃষক আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুর জেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান সবুজ বলেন, আমার জানা মতে, এই এলাকাটি একটি কৃষিনির্ভর এলাকা। এর আগেও শাহমাহমুদপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এখানকার খাল খনন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজই না হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা আজ দুঃচিন্তায়, হুমকির মুখে শত শত কৃষি জমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে’ সে লক্ষ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে অনাবাদী এসব কৃষি জমি চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।