বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আতঙ্কের মাঝে ভয়ঙ্কর সাঁকো দিয়ে পারাপার

এলাকাবাসীর কাছে এটি সাঁকো নয়, যেন মৃত্যুকূপ

আতঙ্কের মাঝে ভয়ঙ্কর সাঁকো দিয়ে পারাপার
মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি ॥

৭০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে ইতিপূর্বে ৩জন লোক মৃত্যুবরণ করেছেন, আহত হয়েছে অসংখ্য। হাত-পা ভেঙে পঙ্গু ও অকর্ম হয়ে সংসারের বোঝা হয়েছেন বেশ কিছু লোক। এলাকাবাসী এ সাঁকোর নাম দিয়েছে মৃত্যুকুপ। তবুও ব্রিজ কিংবা কালভার্ট নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার ফলে স্থানীয় লোকজনের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের মধ্যচরের পরিচিত ও আলোচিত বাজার চেয়ারম্যান বাজার। যে বাজারে যেতে নদীর পাড় থেকে রয়েছে ইটের রাস্তা। রয়েছে অটোরিকশার ব্যবস্থাও। ইটের রাস্তাটি চেয়ারম্যান বাজার হয়ে ঈশানবালাঘাট পর্যন্ত থাকলেও চেয়ারম্যান বাজার পর্যন্তই এর সুফল। কারণ চেয়ারম্যান বাজারের পাশে রাস্তার মাঝখানে রয়েছে একটি খাল। খালের উপর রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। যে সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে নিচের দিকে তাকালে হাত-পায়ের শক্তি অচল হয়ে যায়, দোয়া-দুরূদ পড়ে পার হতে হয় সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে ৩৯নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪শ’ শিক্ষার্থীর প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। ভয়ঙ্কর এ সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী গুরুতর আহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া সাঁকো পার হওয়ার ভয়ে স্কুলে আসতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। প্রাক প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণী ও ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে ক্লাস করছে না। এই ভয়ঙ্কর সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত ৪-৫শ’ লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষের কাছে এ সাঁকোটি ভয়ঙ্কর ও আতঙ্কের নামে মৃত্যুকূপে রূপান্তরিত হয়েছে।

স্থানীয় আমিন, শাহাদাত হোসেন অলি, পল্লী চিকিৎসক মনিরসহ ক’জন পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো দিয়ে অনেক বছর যাবৎ যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ সাঁকো অনেক ঝুকিপূর্ণ এবং ভয়ঙ্কর। এখান থেকে পড়ে তিনজন লোক মারা গেছে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাসহ অনেক লোক আহত হয়েছে। এত বড় বড় দুর্ঘটনা হওয়ার পরেও এখানে কোনো ব্রিজ করা হয়নি। আমাদের আর কত লোক মারা গেলে এখানে ব্রিজ হবে ? সেই যে একবার এসে মাটি পরীক্ষা করে গেছে আর কোনো খবর নেই।

আমরা যারা এখানে বসবাস করি, তারাই জানি এ সাঁকোটি কতটা ভয়ঙ্কর। তাছাড়া নদীর পাড় থেকে ঈশানবালাঘাট পর্যন্ত সরকার ইটের রাস্তা বানিয়েছে। এখানে অটোরিকশাও চলে। কিন্তু ব্রিজ না থাকায় অটোরিকশাগুলো ঘাট পর্যন্ত যেতে পারছে না। সাঁকোটি পার হতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। আমরা চাই আমাদেরকে ভয় ও ঝুঁকিমুক্ত একটি ব্রিজ অথবা কালভার্টের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। আপনারা মিডিয়ার লোক আপনাদের লেখনির মাধ্যমে যেনো আমাদের এ সমস্যাটি সমাধান হয়।

দক্ষিণ নীলকমল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলী জানান, আমাদের স্কুলে সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে এ সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসে। সর্বদাই আতঙ্কে থাকতে হয় কখন কার হতাহতের সংবাদ আসে। চলতি বছর আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে। তাই শক্ষার্থীদের স্বার্থে চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন খালের উপর সাঁকোর পরিবর্তে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সুদৃষ্টি কামনা করছি।

নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সউদ আল নাছের এ বিষয়ে বলেন, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলে চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন সাঁকোটি শিক্ষার্থী ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে দুটি ওয়ার্ডের যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজতর ও উন্নত হবে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর স্থলে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্যে জায়গার খতিয়ানসহ পিআইও অফিসে আবেদন করেছি। সয়েল টেস্ট হয়েছে। এখনো কাজের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। আপনাদের মতো আমিও চাই এখানে একটি ব্রিজ হোক।

উপজেলা সহকারী উপ-প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান জানান, নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার সংলগ্ন বাশের সাঁকোর জায়গায় একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। গত এক বছর পূর্বে ওইখানের মাটি পরীক্ষা করানো হয়েছে। কবে কখন এখানে ব্রিজের অনুমোদন আসে বলা যাচ্ছে না। ব্রীজ নির্মাণের অনুমোদনের কোনো অগ্রগতি দেখছি না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, ঝুকিপূর্ণ সাঁকোর জায়গায় যাতে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা যায় সে লক্ষ্যে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করবো। এখানে ব্রীজ নির্মাণ করতে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়