বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১২

‘রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো’

কাজী শাহাদাত
‘রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো’

এক

রাঙ্গামাটির আকর্ষণে আমার তৃতীয় বারের মতো সেখানে যাওয়া। থেকেছি শুক্র থেকে রোববার (৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। প্রথমে রোটারী বন্ধুদের সাথে, দ্বিতীয়বার চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাথে এবং তৃতীয়বার শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সাথে। একেকবারের অভিজ্ঞতা একেক রকম। তিনবার সেখানে গিয়ে আমাকে তাই গুনগুনিয়ে গাইতে হচ্ছে--

রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো /সম্পান মাঝির গানে মন ভরালো/ রূপের মধু সুরের জাদু কোন্ সে দেশে/ মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে।

রাঙ্গামাটিতে তৃতীয়বার যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আমার মাথায় ছিলো না। ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে চাঁদপুর কণ্ঠের শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল জানালেন, ভাই! আমাদের সাবেক ইউএনও হাবিব উল্লাহ মারুফ জেলা প্রশাসক হিসেবে রাঙ্গামাটিতে যোগদান করেছেন। আমি এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে তাকে বললাম, তাহলে এবার তোমরা রাঙ্গামাটিতেই আনন্দ ভ্রমণে যাও। ওখানে গিয়ে বিশেষ নৈকট্য অনুভব করবে। কাজল বললেন, ভেবে দেখছি। ক'দিন পর আমাকে বললেন, হ্যাঁ, আমরা রাঙ্গামাটিই যাচ্ছি। আপনিও যাবেন। একটুখানি চুপ থেকে জবাব দিলাম, তোমার ভাবীর সাথে কথা বলে নিই। ক'ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে বললাম, তোমাদের ক্লাব সদস্যদের আপত্তি না থাকলে আমরা সপরিবারে যাবো। যতোটা না রাঙ্গামাটির আকর্ষণে তারচে' বেশি হাবিব উল্লাহ মারুফের কারণে। তাঁর সাথে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সদস্যদের যেমন ঘনিষ্ঠতা আছে, তেমনি আমার সাথেও সম্পর্ক রয়েছে লেখালেখির কারণে।

চাঁদপুরের ক'জন জেলা প্রশাসকের নাম যেমন আমরা কখনো ভুলতে পারি না, তেমনি শাহরাস্তির তিনজন সাবেক ইউএনও'র কথা আমরা ভুলতে পারি না। এঁদের মধ্যেই রয়েছেন হাবিব উল্লাহ মারুফ। শাহরাস্তিতে তাঁর বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল প্রতিষ্ঠা সহ বহুবিধ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যে তিনি খ্যাতিমান হয়ে আছেন। অপর দুজন সাবেক ইউএনও হচ্ছেন মোয়াজ্জেম হোসেন ও সামিউল মাসুদ।

দিনক্ষণ গণনা শুরু করলাম রাঙ্গামাটি যেতে। প্রথমে তারিখ নির্ধারিত ছিলো ৬, ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে সেটি চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয় ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি। আমাকে ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলেই চাঁদপুর ত্যাগ করতে হলো। ছোট বোন রাজিয়া বেগম (সাজু)-এর বাসায় গিয়ে উঠলাম। সে শাহরাস্তি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক।

শাহরাস্তি প্রেস ক্লাব সভাপতিকে ফোনে জানালাম, রাতে তোমাদের প্রস্তুতি দেখতে ক্লাবে আসবো। রাত দশটার পর শাহরাস্তির মাজার রোডে অবস্থিত আমার বোনের বাসার সম্মুখ থেকে ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক জামাল হোসেন তার বাইকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন ক্লাবে। এই প্রথম গেলাম উপজেলা পরিষদের সম্মুখে প্রেসক্লাব কার্যালয়ে।তাদের প্রস্তুতি দেখে তো চোখ ছানাবড়া। তারা অংশগ্রহণকারীদের জন্যে ব্যাজ, ক্যাপ, টি- শার্ট, শাড়ি, মগ ও চাবির রিংয়ের নমুনা দেখালেন। দুটি বাস ভাড়া, আবাসিক হোটেলের ভাড়া, প্রায় একশ' জন অংশগ্রহণকারীর খাবার সহ অন্যান্য খরচের পাশাপাশি এতো আয়োজন দেখে জানতে চাইলাম, কীভাবে সম্ভব? জবাবে সভাপতি সহ অন্যরা বললেন, আমাদের দাতা সদস্য সহ শুভাকাক্সক্ষীদের স্পন্সরেই এসব করা সম্ভব হয়েছে।

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি বরাবরই একজন আমুদে মানুষ। নিজে খেলোয়াড় ও স্বভাবসুলভ বিনোদনপ্রিয় মানুষ বলে সব সময় প্রাণচাঞ্চল্য ও হতাশা- তাড়ানো কথাবার্তায় শোভন থাকে তাঁর আচরণ। বন্ধুপ্রতিম ক্লাব সেক্রেটারী স্বপন কর্মকার মিঠুন, অগ্রজপ্রতিম সজল পাল (সহ-সভাপতি), মীর হেলাল (সাংগঠনিক সম্পাদক) ও সদস্য হাসানুজ্জামানের আন্তরিক সাহচর্য এবং প্রিয়ভাজন মহিউদ্দিন, জামাল, জসিম, ফয়সাল, হাসান আহমেদ, আহসান হাবীব, নয়ন, ফিরোজের সহযোগিতায় তিনি থাকেন সদা কর্মতৎপর। আর গুণবতী স্ত্রী মরিয়ম আক্তার (রিনা)-এর সমর্থন তো রয়েছেই। তাই তিনি প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একের পর এক করে চলছেন নানা আয়োজন, যাতে থাকে চমৎকারিত্ব ও ব্যাপকতা।

রতনকে নিয়েই প্রথম বিনোদন

ভোর সাড়ে ছয়টায় জাহাঙ্গীর আলম রতনের ভাড়া করা সিএনজি অটোরিকশায় তার সাথে আমি আমার ছোট বোনের বাসা থেকে উপজেলায় পৌঁছার জন্যে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নেই। কিছুটা বিলম্বে সাতটার মধ্যেই পৌঁছে যাই সেখানে। সকাল আটটার পর বাস ছাড়লো। আমরা যে বাসে উঠি সেটিতে সভাপতি সহ ছিলেন ৫০ জন। বাস নং ১। আর দ্বিতীয় বাসটিতে সেক্রেটারীর নেতৃত্বে বাকি ৫০জন। বাস নং ২। ক্লাবের সহ-সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রতন ছিলেন দ্বিতীয় বাসে। তিনি মতলব উত্তরের নাওভাঙ্গা জয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব। তাঁর দ্বারা মোনাজাত দিয়েই বাস দুটি ছাড়লো। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী উপজেলা পরিষদের সম্মুখে এসে বাসে উঠলেন। তবে ক'টি পরিবার উঠেছে পথিমধ্যে শাহরাস্তির বিভিন্ন স্পট থেকে। রতনের স্ত্রী কাঁকৈরতলা থেকে ২ নং বাসে উঠবে। হঠাৎ সভাপতির মাথায় দুষ্টুমি চাপলো। তিনি বললেন, আমরা ১ নং বাসেই রতনের স্ত্রী ও সন্তানদের উঠিয়ে নিবো। তারপর অপহরণ করা হয়েছে বলে তাদের ফোনেই মুক্তিপণ চাইবো। যে কথা সে কাজ। কিন্তু দুষ্টুমির পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ায় হাসাহাসিতেই শেষ হলো সে বিনোদন পর্ব।

তিন বিরতির পর দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা

শাহরাস্তি থেকে যাত্রার পর কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে তথা বিশ্বরোড এলাকায় প্রথমে দেয়া হলো নাস্তা বিরতি।তারপর চৌদ্দগ্রামের পূর্বে টাইম স্কয়ার রেস্তোরাঁয় চা বিরতি এবং বেলা ১টায় চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে জুমার নামাজের বিরতি। নামাজ শেষে বেলা দুটায় যাত্রা শুরু করে বাইপাস সড়ক দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে আমাদের দুটি বাস। মাত্র দুঘন্টায় আমরা পৌঁছে গেলাম রাঙ্গামাটি। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৪টা পাঁচ মিনিট। বাসগুলো থামলো রাঙ্গামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র 'দোয়েল চত্বর' সংলগ্ন স্কয়ার পার্ক হোটেলে।

(চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়