বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩

'রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো'

কাজী শাহাদাত
'রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো'

পাঁচ.

জেলা প্রশাসকের মধ্যাহ্ন ভোজ ও আলোচনা

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীদের জন্যে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক হাবিব উল্লাহ মারুফ মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা করবেন বলে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শুক্রবার সকালে শাহরাস্তি থেকে যাত্রার অনেক আগেই ক্লাব সভাপতি কাজলকে জানিয়েছেন। সেমতে হোটেল স্কয়ার পার্ক থেকে রওনা দিয়ে রোববার দুপুর ২টার পর ভ্রমণকারীরা পৌঁছেন সেখানে। হলরুমে বুফে সিস্টেমে এই মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন সকলে। ততক্ষণে জেলা প্রশাসক এসে পৌঁছান নি, কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে মনিটরিংয়ের একবিন্দু কমতি ছিলো না। ভোজ শেষ হবার কিছুক্ষণ পর জেলা প্রশাসক মহোদয় আসলেন এবং সভাকক্ষে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সদস্য ও অতিথিদের সাথে বসলেন, কুশল বিনিময় করলেন, তাঁর সাবেক কর্মস্থল শাহরাস্তি সম্পর্কে জানলেন। কিছুটা নস্টালজিক হলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শাহরাস্তি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল সম্পর্কে কথা বললেন এবং সুদূরে থেকেও এই স্কুলটি নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা জানালেন। সভাপতি কাজলের অনুরোধে তিনি শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণে ও অন্যান্য উন্নয়নে সরকারি পর্যায়ে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে সম্ভাব্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেন।

গেলো ডিসেম্বরে তিনি রাঙ্গামাটিতে যোগদান করে শুধু এই জেলাকে নিয়ে নয়, কীভাবে পার্বত্য জেলাগুলোর পর্যটন শিল্পের ব্যাপক বিকাশে রাঙ্গামাটিকেন্দ্রিক কাজ করার কথা ভাবছেন সেটা নিয়ে সংক্ষেপে বললেন। তিনি আরো বললেন, আমি সুযোগ পেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এ ব্যাপারে কথা বলবো এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে অবহিত করবো। তিনি রাঙ্গামাটিতে বাচিক শিল্পের উৎকর্ষের জন্যে কাজ করতে তাঁর আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি চাঁদপুর জেলায় দেড় দশকব্যাপী পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে লেখক (কাজী শাহাদাত)কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আলোচনায় ছেদ এবং পৌনে এক ঘণ্টা অপেক্ষা

জেলা প্রশাসক মহোদয় শাহরাস্তি প্রেসক্লাব সদস্যদের সাথে বসেই এনডিসিসহ অন্য কর্মকর্তাদের বলে রেখেছেন, পার্বত্য উপদেষ্টা মহোদয় সার্কিট হাউসে কখন আসছেন সেটা যেনো তাঁকে জানানো হয়। এ সময় বললেন, জেলা প্রশাসকদের আসলে এমনই ব্যস্ততা। এই ব্যস্ততাহেতু আপনাদের খোঁজখবর তেমন নিতে পারিনি। আপনারা বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন। তাঁর এমন ব্যস্ততাকে মূল্যায়ন করতে আলোচনা পর্বকে সংক্ষিপ্ত করে ক্লাবের পক্ষ থেকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যে সভাপতিকে তাগিদ দেই। তিনি তাঁর সদস্যবৃন্দসহ শাহরাস্তি উপজেলার মানচিত্র সম্বলিত সুদৃশ্য ক্রেস্ট উপহার দেন জেলা প্রশাসক মহোদয়কে। তার পূর্বে আমি (লেখক) ও আমার স্ত্রী মাহমুদা খানম চাঁদপুর কণ্ঠের ত্রিশ বছরপূর্তির স্মারক গ্রন্থ উপহার দেই তাঁকে। এ সময় বারবার জেলা প্রশাসককে তাঁর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপদেষ্টা মহোদয়ের গতিবিধি জানাচ্ছিলেন। তাই সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা সেরে আনন্দ ভ্রমণকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু না, তিনি বিদায় দেন নি। তিনি বললেন, আপনারা

হলরুমে গিয়ে বসুন, চা খান। আমি আপনাদের সাথে আবার কথা বলবো।

তারপর পৌনে এক ঘণ্টা। ততক্ষণে তিনি পার্বত্য উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানিয়েছেন এবং পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেছেন।

বিতর্ক প্রসঙ্গ, গ্রুপ ছবি ও বিদায়

জেলা প্রশাসক মহোদয় সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে 'শাহাদাত সাহেব কোথায়' বলে খোঁজ করছিলেন। হলরুমে দৌড়ে এসে তাঁর কর্মচারী ও শাহরাস্তি প্রেসক্লাব সদস্যরা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। আমি তাঁর কাছে যাওয়ামাত্রই তিনি বললেন, আমি পাঞ্জেরী বিতর্ককে রাঙ্গামাটিতে নিয়ে আসতে চাই। আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি বিস্মিত হলাম বিতর্ক নিয়ে তাঁর এমন আগ্রহে। তারপর বেশি কিছু আর বললেন না। এ সময় শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজল বললেন, স্যার! গ্রুপ ছবি তুলতে চাই। সেমতে তিনি প্রেসক্লাব সদস্য ও অতিথিদের যেমন সুযোগ দিলেন, তেমনি শাহরাস্তি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আনন্দ ভ্রমণে অংশ নিতে এসেছে, তাদের সাথেও আলাদা ছবি তুললেন।

জনাব হাবিব উল্লাহ মারুফ তাঁর সাবেক কর্মস্থল শাহরাস্তির লোকজনের জন্যে এতোটা আতিথেয়তা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করবেন, সেটা নিজ চোখে না দেখলে আমার বিশ্বাস হতো না। আমার কাছে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকেল চারটার অব্যবহিত পরে রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউসে অবস্থানকালীন সময়টাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে নয়, ব্যক্তি হাবিব উল্লাহ মারুফের বিনয় ও শিষ্টাচারে রাঙানো একটি বিশেষ মুহূর্ত বলে মনে হয়েছে। এতে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমণে অংশগ্রহণকারী সকলের চোখও জুড়িয়েছে, মনও জুড়িয়েছে।

(চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়