মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৬

স্কুল মাঠে ময়লা ফেলা হচ্ছে কেন?

অনলাইন ডেস্ক
স্কুল মাঠে ময়লা ফেলা হচ্ছে কেন?

শাহরাস্তি পৌরসভার প্রসিদ্ধ মেহের কালীবাড়ি বাজারে অবস্থিত নিজ মেহের মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এখন পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ স্থান হিসেবে পৌর কর্তৃপক্ষ অনায়াসে এখানে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। উপজেলার সবচেয়ে বড়ো ব্যবসায়িক কেন্দ্র মেহের কালীবাড়ি। ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে শাহরাস্তি পৌর একাডেমী ও সোনালী ব্যাংক শাহরাস্তি উপজেলা শাখা। শহরের একমাত্র খেলাধুলার ঐতিহাসিক মাঠ এটি। প্রতিদিন বিকেলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই মাঠে খেলাধুলায় মেতে উঠতো। ময়লা ফেলার পর থেকে এই মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে যায়। শাহরাস্তি পৌর একাডেমীর শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করছে। এছাড়াও নিজ মেহের মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে। ব্যস্ততম জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে পৌর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল।

শাহরাস্তি পৌর একাডেমীর অধ্যক্ষ আলী আজগর মিয়াজী বলেন, আমি নির্যাতনের শিকার। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিষেধ করা হলেও তারা প্রশাসনের নির্দেশে এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলেন বলে জানান। নিজ মেহের মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আযাদ হোসেন জানান, ময়লার কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। বাজারের চা বিক্রেতা তারেক হোসেন জানান, দুর্গন্ধের কারণে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফল ব্যবসায়ী বিপ্লব মজুমদার বলেন, আমরা অনেক কষ্টে এখানে বসে আছি, ময়লার গন্ধে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। শাহরাস্তি পৌরসভার প্রধান সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, জায়গা না থাকায় আপাতত এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। অতি অল্প সময়ে ময়লাগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মদ শেখ জানান, পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় মেহের কালীবাড়ি স্কুল মাঠে ফেলা হয়েছে। বৃষ্টি কমে আসলে মাঠ থেকে ময়লাগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ময়লা আবর্জনা ফেলতে ডাম্পিং স্টেশনের জন্যে পৌর কর্তৃপক্ষ জায়গা কিনলেও এখন পর্যন্ত ডাম্পিং স্টেশনের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

আমেরিকা সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের পূর্বেই বর্জ্য বা ময়লা কোথায় ফেলা হবে, পরিবেশ দূষণ না করে কীভাবে বর্জ্য/ ময়লা ধ্বংস করা হবে বা পরিশোধন করা হবে সেটা নিয়ে ভাবা হয়। কোনো মাঠ, নদীর পাড়,বন, হলরুম/ মিলনায়তনে কোনো অনুষ্ঠান করার অনুমতি গ্রহণের পূর্বে জানান দিতে হয়, বর্জ্য বা ময়লাটা কীভাবে সামলাবে। আমাদের দেশে এমনটি বিরলদৃষ্ট। এ দেশে রাতারাতি একটি এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণা দেয়া হয় ময়লা-আবর্জনা তথা বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে তার ব্যবস্থা না রেখেই। তৃতীয় শ্রেণী থেকে এ দেশে একটি পৌরসভাকে শুধুমাত্র প্রভাব-প্রতিপত্তি ও তদবিরের জোরে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করেই। এমন একটি পৌরসভা চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি পৌরসভা। এটি ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর তৃতীয় বা ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে, যেটি ১৪ বছরের ব্যবধানে ২০১২ সালের ১১ জুলাই দ্বিতীয় তথা ‘খ’ শ্রেণীর পৌরসভায় এবং মাত্র দু বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালের ২৩ জুন প্রথম তথা ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। অথচ এ পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যে ডাম্পিং স্টেশনের কার্যক্রম শুরু করতে পারে নি। জায়গা কিনে মুলা ঝুলানোর মতো রেখে প্রসিদ্ধ স্কুল মাঠে ফেলছে শহরের যতো ময়লা-আবর্জনা। যেটি নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে সচিত্র সংবাদ, যার বিবরণ উপরে তুলে ধরা হয়েছে। ভাগ্য ভালো শাহরাস্তি পৌরসভার, এখন পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ মামলায় যায়নি। যদি মামলায় যায়, তাহলে শাহরাস্তি পৌরসভা ভাগাড় তো সরাবেই, জরিমানা গুণতে হয় কিনা সেটাও দেখার বিষয়। আমরা আশা করি, শাহরাস্তি পৌরসভা অবিলম্বে নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা-আবর্জনা তথা বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা করবে এবং নিজ মেহের মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে দেবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়