প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৪০
জলাবদ্ধতা ও সেচ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময়
সমন্বিত উদ্যোগে জলাবদ্ধতা দূর ও সেচ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন
![সমন্বিত উদ্যোগে জলাবদ্ধতা দূর ও সেচ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন](/assets/news_photos/2025/02/11/image-58843-1739284912bdjournal.jpg)
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ফরিদগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সেচ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। প্রায় তিন ঘন্টা ধরে চলা এই মতবিনিময় সভায় উঠে আসে কী কারণে এবং কেনো প্রতিবছর কৃষকদের ও মৎস্যচাষীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমস্যা , কৃষি বিভাগের কাজ, খাল দখল, খাল খননে প্রতিবন্ধকতা, পানি সেচে সমস্যা এবং সর্বোপরি এসব সমস্যা সমাধান হলে সম্ভাবনার কথা।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন সভার প্রারম্ভে এবং সর্বশেষ বক্তা হিসেবে কথা বলেন। তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা আমি এবং আমার পক্ষে পরবর্তীতে ইউএনও ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। আমরা যেই জলাবদ্ধতার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি তার জন্য সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের যেমন দায়ভার রয়েছে, তেমনি অংশীজন হিসেবে আপনাদেরও কিছুটা রয়েছে। কারণ, এই সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ধীরে ধীরে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যেখানে সেখানে বাড়ি নির্মাণ, পানি নিষ্কাষণ বন্ধ করে দেয়া, খালগুলো বেদখল করা, ভরাট করা এসব বিষয়ে আপনাদের আরো সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। আমাদের মনে রাখতে হবে কৃষি আমাদের প্রধান অর্থকরি ফসল। সেচ প্রকল্প তৈরির প্রথম উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষি আবাদ বাড়ানো। কৃষকের চাওয়া হলো সময়মতো বীজ পাওয়া, পানি পাওয়া । কিন্তু কেনো তারা পাচ্ছেন না সেটি কৃষকের ভাবনা নয়। সে দিকটা আমাদের দেখতে হবে। সেজন্য আমি আজকে সকল পক্ষের কথা শুনতে এসেছি। আমি ইউএনওকে নিদের্শনা দিচ্ছি- আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি, মৎস্য বিভাগ, এলজিইডি, উপজেলা পরিষদসহ সকল বিভাগকে নিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগে প্রস্তাবনা তৈরি করতে হবে। এটি হবে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবনা। আগামী এক বছরে কী কী কাজ করলে বড় কোন এলাকাগুলোর কৃষি আবাদ উপকৃত হবে, কোন খালগুলো খনন করতে হবে। এভাবে প্রথম বছর, দ্বিতীয় বছর এবং আগামী পাঁচ বছরে যেনো আমরা ফরিদগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং সেচ সমস্যা নিরসন করতে পারি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের পাম্পের সমস্যার কথা বলেছে। তারা ছাড়াও আমিও আমার দপ্তর থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। যাতে দ্রুত এর একটা ফলাফল পাওয়া যায়। মোট কথা আমাদের সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর ও সেচ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধিরও দায়িত্ব রয়েছে কচুরিপানা ও ছোট ছোট খাল সংস্কার করা। মাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক পুকুরে গাইডওয়াল, ঘাটলা নির্মাণ জাতীয় প্রকল্প বাদ দিয়ে জনমুখি প্রকল্প দিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাম্পগুলোর অবস্থা ভাল নয়। আরো আগেই এ বিষয়ে চিঠি লিখেছি, কিন্তু এখনো তা অনুমোদন হয়নি। সেচ প্রকল্প নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান জমা দিয়েছি, তা এখনো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের অভ্যন্তরে নিয়ম না মেনে ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ , বাড়ি নির্মাণ করাও আমাদের জলাবদ্ধতার একটি বড় কারণ। আমরা ২ শত কিলোমিটার খাল খননের জন্য আবেদন করেছি। ইতিমধ্যে চলতে অর্থবছরে ১৬ কিলোমিটার খাল খনন চলছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সকল খাল খনন সম্পন্ন হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের পরিচালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি, সেচ) চাঁদপুরের সহকারী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এআরএম জাহিদ হাসান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার. ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ফরহাদ, সাবেক সভাপতি নুরুন্নবী নোমান, ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী, জসিম উদ্দিন স্বপন, মো. শাহজাহান। অংশীজনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিআইপির অভ্যন্তরে ডাকাতিয়া নদী ও খাল খনন বাস্তবায়ন কৃষক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন দুলাল, সদস্য রহিমা আক্তার কলি, কৃষকদের মধ্যে শামছুল পাটওয়ারী, বিল্লাল হোসেন বেপারী, আব্বাস মিয়া, মোজাম্মেল পাটওয়ারী, আব্দুল কাদির, খোরশেদ আলম, আলী হোসেন, জাকির হোসেন এবং মৎস্যচাষীদের পক্ষে নাজিম উদ্দিন, এমএ সায়ীদ প্রমুখ।
সভায় চাঁদপুর সেচ প্রকল্পাধীন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সেচ খাল খনন এবং পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান। যাতে কৃষকরা আগামীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ফসল উৎপাদনে পানি পায়। একই সাথে ডাকাতিয়া নদী এবং সংলগ্ন খালে কোনো বাধা না থাকে যাতে কচুরিপানা দ্রুত সরে যায় তা নিশ্চিত করা এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে যেগুলোতে ইজারা হয় সেখানে যাতে কোনোভাবেই কোনো বাঁধ দেয়া না হয়। কারণ কৃষি আমাদের প্রধান ফসল। এরপর পর্যায়ক্রমে মৎস্য চাষও রয়েছে। বিগত বর্ষায় স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় কৃষক ও মৎস্যচাষীরা নিঃশেষ হয়ে গেছে। যাতে আমন ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় এবং অন্তত শত কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেশিন সমস্যা, খাল ভরাট ও দখল, নদীতে বাঁধের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।