প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের চাঁদপুরে কর্মকালের ছয়মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ৩ জুলাই। এই ছয়মাস তাঁর চাঁদপুরে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে তিনি জেলাবাসীর মুখোমুখি হয়েছেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো।
জেলা প্রশাসক বলেন, গত ৩ জানুয়ারি আমি চাঁদপুর জেলায় যোগদান করেছি। মূলত করোনাকালীন সময়েই আমি চাঁদপুরে যোগদান করি। এখনো করোনার মধ্যেই আছি। এর মধ্যে কিছুটা সময় গেছে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে, আবার খারাপ হয়েছে। আবার দীর্ঘসময় ভালো ছিল। এখন আবার চাঁদপুরের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আমরা চেষ্টা করেছি করোনাকালীন সময়ে বিশেষ করে যখন লকডাউন চলছিল, তখন মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, ঘরে ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেবার। সদরে যারা ছিলেন বিশেষ করে অসচ্ছল, তাদেরকে আমরা ত্রাণসামগ্রীর আওতায় নিয়ে এসেছি। একই সাথে জেলার প্রতিটি এলাকায় যাতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হয়, তারও প্রচারণা চালিয়েছি।
বর্তমানে চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে সারাদেশের ন্য্যায় আমরা কঠোর লকডাউনের ভেতর আছি। একইসাথে এই সময়টায় যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের ঘরে আমরা খাদ্য পৌঁছে দেবো। কেউ যেনো অনাহারে না থাকে, সে বিষয়টিও আমরা নিশ্চিত করবো।
চাঁদপুরের উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যেহেতু চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে এসেছি, সেহেতু চাঁদপুরের মানুষ যেনো উপকৃত হয়, সুশাসন পায় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। প্রশাসনের সকল সেবা যেনো চাঁদপুরবাসীর দোরগোড়ায় স্বচ্ছতার সাথে, সৎভাবে, নিরপেক্ষভাবে পৌঁছে দিতে পারি সে চেষ্টা আমি করছি।
আমি প্রতি বুধবার গণশুনানি করি। সেখানে সাধারণ জনগণ যারা জেলা প্রশাসকের কাছে আসতে অনেক সময় ভয় পায়, বাধা পায়, সরাসরি আসতে সাহস পায় না; ঐদিন আমার দরজা তাদের জন্য খোলা থাকে। তারা ঐদিন সরাসরি আমার সাথে কথা বলতে পারেন, তাদের অভাব অভিযোগ নিয়ে সরাসরি আমার সাথে কথা বলেন। আমি তাদের অভাব অভিযোগের কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করি।
এছাড়া যারা হতদরিদ্র আছে, নদীভাঙ্গা মানুষজন আছে, তারা যদি আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন, আমি তাদের আবেদনগুলো নিয়ে কাজ করি। তাদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে সাধ্যমতো অর্থাৎ যতোটুকু সরকার আমাকে দিয়েছে, তার মধ্যে আমি তাদেরকে হয়তো নগদ অর্থ, টিন, অথবা অন্যভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করে থাকি।
আরেকটি বিষয়ে এখানে আমি বেশি নজর দেই, তাহলো এখানকার মানুষ যাতে স্বচ্ছতার সাথে, সৎভাবে তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো উদ্ধার করতে পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখি। বিশেষ করে এখানকার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ উদ্ধার করতে গিয়ে যেনো কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হয় সেজন্য আমি আমার সহকর্মীদের বিশেষ করে এডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও, এসিল্যান্ড, আমার অফিস স্টাফ, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া আছে তারা যেন মানুষদের সহায়তা করে। মানুষকে যেনো কোনোরকম ভোগান্তিতে না ফেলে এবং তারা যেন সৎভাবে তাদের কাজগুলো উদ্ধার করতে পারে এ বিষয়ে তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি এবং আমি তা নিজেই মনিটরিং করছি।
আরেকটি বিষয় নিয়ে আমি কাজ করছি, যেটা হলো সরকারের সকল ডিপার্টমেন্টের সাথে বিশেষ করে এখানকার মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, সংসদ সদস্যগণ, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন থানা থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল চেয়ারম্যানসহ সকলকে নিয়ে কাজ করার। আমি যদি সকলের সমন্বয়ে কাজ করি, তাহলে জেলার উন্নয়ন দ্রুত অগ্রসর হবে।
জেলা প্রশাসক চাঁদপুরে বিগত ছয়মাসে তাঁর কর্মকালে বেশ কিছু ছোট ছোট কাজের বিবরণ তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, চাঁদপুর শহরে যে লেকগুলো আছে এগুলো মেরামত করে লেকের পাশে আমরা কিছু দৃষ্টিশোভন বৃক্ষ রোপণ করতে চাই। যাতে চাঁদপুরবাসী এ লেকগুলো দেখে মুগ্ধ হয়। বিশেষ করে বৃক্ষ লাগাতে পারলে শহরের সৌন্দর্য আরো বেড়ে যাবে। আমাদের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভা সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদী ভিত্তিক এলাকা এই চাঁদপুর। চাঁদপুর হবে নদী কেন্দ্রিক পর্যটন এরিয়া।এই নদীর তীরেই যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় সে চেষ্টা করছি। যারা চাঁদপুরে বেড়াতে আসবে, তারা যেন নদীতে ভ্রমণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করবো। এছাড়া এই নদীর উপরে কিছু রাইডস্ দিয়ে পর্যটন এলাকাকে আরো আকর্ষণ করতে চাই। আমরা দেখেছি, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী বালিতে ছোট্ট একটি নদীতে বিভিন্ন রাইডস্ দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। তেমনিভাবে আমরা আমাদের মোলহেডের জায়গাটিতে কাজে লাগিয়ে নদীভিত্তিক পর্যটন এলাকা স্থাপন করতে পারি। সেক্ষেত্রে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, এমপিগণ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, রাজনীতিবিদগণসহ সরকার যদি সম্মত হয়, তাহলে আমরা এখানে নদীভিত্তিক পর্যটন এলাকা স্থাপন করবো।
তিনি বলেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের পেছনে বেশ কিছু খাসজমি আছে। আমরা সেখানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা করছি। আপনারা জানেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে এখানে পাকিস্তানিদের একটি জাহাজ মুক্তিযোদ্ধারা তথা নৌকমান্ডোরা ডুবিয়ে দিয়েছিল। সে জাহাজটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে নিয়ে যায়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সে জাহাজটি চাঁদপুরে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। এই খাস জমিতে জাহাজটি এনে এটিকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মিউজিয়াম করার চিন্তা ভাবনা করছি। এই মিউজিয়ামের আশপাশে বিনোদনের জন্যে কিছু জায়গা দিচ্ছি। যাতে বিভিন্ন পর্যটকরা তাদের পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসতে পারে। এখানে কিছু রাইডস্ থাকবে, যাতে বাচ্চারা এখানে এসে খেলাধুলাও করতে পারে। আমাদের এই পরিকল্পনার ফলে বাচ্চারা যেমন আনন্দ উপভোগ করতে পারবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।