প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত
ফুসফুসে গুলি বহনকারী মহিন উদ্দিনকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ
এবার ফুসফুসে গুলি বহন করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ফরিদগঞ্জের কলেজ ছাত্র মহিন উদ্দিনকে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঢাকা রাজারাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার চাঁদপুর পুলিশ লাইনের একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে মহিন উদ্দিন তার বাবা মোক্তার হোসেনের সাথে রওনা দেন। তাকে গাড়িতে তুলে দেন ফরিদগঞ্জ থানার ওসি হানিফ সরকার।
গত ৪ আগস্ট ঢাকার কাওরান বাজার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন মহিন। সিএমএইচসহ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে অবস্থান কালীন সময়ে ব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকতে ঔষধের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের মোক্তার হোসেন ও ঝর্ণা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সকলের বড় ও কালির বাজার কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী মহিন উদ্দিন।
মহিন উদ্দিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি আন্দোলনে যোগ দিতে উদগ্রীব ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ঢাকা চলে যান। ৪ আগস্ট কাওরান বাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। ওই দিন বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশের সাথে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলির স্প্লিন্টার তার শরীরের ভেতরে ঢুকে যায়। কিন্তু তাৎক্ষণিক বিআরবি হাসপাতালে গেলে শরীরে কোনো গুলি নেই বলে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
মহিন উদ্দিন আরো জানান, পরবর্তীতে বাসায় আসলে রক্ত দেখতে পাই। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে বাড়ি ফিরে আসি। এ সময় যন্ত্রণা শুরু হলে ১১ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সিটি স্ক্যান করি। চিকিৎসক জানান, শরীরের ভিতরে থাকা গুলি বের করতে গেলে ৯০ ভাগ মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। এরপর তারা আবারো ১০ দিন পর যেতে বলেন। ১০ দিন পর আবার গেলে তারা একই কথা বলেন। এরপর আমি সিএইমএইচে যাই। সেখানে ২০/২১ দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেই। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, শরীরের যেই স্থানে গুলিটি বিদ্ধ হয়ে রয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো সমস্যা নেই। তবে অপারেশন করার চেয়ে না করাই ভাল হবে। ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে তারা আসতে বলেছেন। এখন আমাকে প্রতিনিয়ত ঔষধ খেতে হচ্ছে। গুলি আমার শরীরে থাকলে আমার ভবিষ্যৎ কর্মজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই আমি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের সহায়তা প্রার্থনা করছি এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে।
মহিন উদ্দিনের অভিভাবক চাচা শাহাদাত হোসেন টেলু জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা আমি বেশ কয়েকদিন পরে শুনেছি। আমি তাকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্যে পাঠিয়েছি। চিকিৎসার বিষয়ে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের সাথে কথা বললে তিনি ফরিদগঞ্জ থানায় তাকে নিয়ে আসতে বলেন। আমি চাই তার শরীর থেকে গুলিটি বের করে তার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা হোক। এদিকে রোববার রাতে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি হানিফ সরকার মহিন উদ্দিনের বিষয়টি জানতে পেরে তাকে থানায় নিয়ে আসেন। তার থেকে তার অবস্থা জানার পর চাঁদপুর পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেন। সেই সূত্র ধরেই সোমবার মহিন উদ্দিন আবারো চিকিৎসার জন্যে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে যান।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি হানিফ সরকার বলেন, মহিন উদ্দিনের অবস্থান জানার পর আমি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিবের সাথে যোগাযোগ করি। পরে তাঁর নির্দেশে সোমবার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্যে মহিনকে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করি।