শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অপরিকল্পিত নগরায়নে ভাসছে গ্রামীণ জনপদ-২

গ্রামের প্রতিটি বাজারই এখন উপ-শহর

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ ॥
গ্রামের প্রতিটি বাজারই এখন উপ-শহর

হাট হচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্রস্থল। যেখানে নিয়ম করে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যে জমায়েত হন ক্রেতা- বিক্রেতাগণ। প্রাচীনকাল থেকেই প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ জনপদের এ বাজারগুলো গ্রামের মানুষের সাপ্তাহিক অথবা সপ্তাহে দুই দিনের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত । গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্যে নিয়মিত হাটে আসতো। হাটের ব্যবসায়ীরা মানুষের চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতো।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে গ্রামের সেই সব বাজারে এখন সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনের হাটের চিত্র আর তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। হাটের দিন নির্দিষ্ট থাকলেও প্রতিদিনই হাটের মতো মনে হয়। লোক সমাগম এবং বেচাকেনা দেখে গ্রামের হাটগুলো এখন অনেকটা শহরের মতো।

বস্তুত সুপ্রাচীনকাল থেকেই গ্রামীণ হাট বাজারের বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল পুরানো অনেক সভ্যতা।

গ্রামীণ জনপদের হাট-বাজারের ক্রম বিবর্তিত এ চিত্র দেশের প্রায় সর্বত্র বিরাজমান। এর কারণ মূলত শিল্প বিপ্লবের প্রভাব। সময়ের পরিক্রমার সাথে মানুষ বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, দোকানপাট বেড়েছে, পণ্য আমদানি বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক কর্মযজ্ঞ বেড়েছে, বাজারের বিস্তৃতি বেড়েছে। আবার এ সকল গ্রামীণ বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন এনজিও, সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বীমার অফিস। গড়ে উঠেছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে আধুনিক মানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

গ্রামীণ জনপদের এসব বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা। এ সকল শ্রমজীবী মানুষের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্যে বাজার এলাকায় তৈরি হচ্ছে বহুতল ভবন। আবার দেশের বাইরে কর্মরত রেমিটেন্স যোদ্ধাগণ সন্তানকে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো এবং উন্নত জীবনমান গঠনের জন্য নিভৃত পল্লী ছেড়ে এলাকার বড় বাজার বা উপজেলা সদরগুলোতে ভিড় জমান। এভাবেই গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে বাণিজ্যিক ভবনের পাশাপাশি আবাসিক ভবন তৈরির প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এতে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, বৃদ্ধি পেয়েছে জমির দাম।

ইউনিয়ন বা পৌরসভার এসব বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত আবাসিক পরিবেশ-পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি হলে কোনো কথা ছিল না। মূলত যে যার মতো জায়গা বিক্রি করছে, আবার যে যার মতো বিল্ডিং তৈরি করছে। ফলে পরিকল্পিত কোনো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবছে না কেউ। এমনকি বৃষ্টির পানি সরানোর জন্যে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বাসা-বাড়ির প্রতিদিনের ময়লা ফেলা বা অপসারণ করার সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা নেই। পৌরসভা লেভেলে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও ইউনিয়ন লেভেলে সেই সুযোগ নেই। অথচ অনেক গ্রামীণ বাজার রয়েছে, যা পৌরসভার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

গ্রামীণ জনপদের নাগরিক সুযোগ- সুবিধা বৃদ্ধির চিন্তায় বাণিজ্যিক এবং আবাসিক ভবনগুলো কোনোরূপ নিয়মণ্ড নীতি অনুসরণ ছাড়াই তৈরি হওয়ায় নিরাপদ বসবাসের ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি পরিবেশের জন্যেও তৈরি করছে হুমকি।

অপরদিকে আবাসিক পরিকল্পনা ছাড়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক নগরায়ন করায় কোথাও কোথাও রিকশা চলাচলের পথও অবশিষ্ট নেই। ফলে অসুস্থ ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তিকে বাসা থেকে বের করতে হিমশিম খায় খোদ বাড়ির মালিকগণ।

এভাবেই উপ-শহরে পরিণত হওয়া গ্রামীণ জনপদের বাজারসমূহ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে বিষফোঁড়া হচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

ছবির ক্যাপশনঃ মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের পশ্চিমণ্ডদক্ষিণে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের স্কাই ভিউ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়