শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল ও জমি দখলের চেষ্টা
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

অনুমতি ব্যতীত পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের উপর ব্যক্তিগতভাবে পাকা সেতু করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খালের একপাশে ব্রীজের গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন করে। পরে খালের অপর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির উপর গড়ে তোলা পাকা ভবন ভেঙে ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাতের আঁধারে সহস্রাধিক লোক জড়ো করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দখলপূর্বক ভবন ভেঙ্গে ব্রীজের কাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করলেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেনি প্রভাবশালী মহল।

ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বাজার লতিফগঞ্জ বাজারে। রাতের আঁধারে এই সন্ত্রাসী তাণ্ডব রুখতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ৯৯৯ নম্বরে কল দেয়ার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুদিন পুলিশি পাহারা বসানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় লোকজন আবারো হামলা-ভাংচুরের আতঙ্কে রয়েছেন।

জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের লতিফগঞ্জ বাজারের পাশে লতিফগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহের জন্য খালের পাশে গড়ে ওঠা বাজারের জমি নানা আইনী জটিলতার মধ্য দিয়ে লিজ নেয় মাদ্‌রাসা কর্তৃপক্ষ। মাদ্‌রাসার লিজকৃত জমিতেই পাকা ভবন নির্মাণ করে নূরুল আমিন মহিম মোল্লা গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে রামগঞ্জ উপজেলার সাবেক এমপি গোফরানের নেতৃত্বে সহস্রাধিক লোক দখল নিতে নূরুল আমিন মহিম মোল্লার দোকানের পেছনের অংশ ভাঙ্গতে শুরু করে। সংবাদ পেয়ে বাজারের ব্যবসায়ীসহ ফরিদগঞ্জ এলাকার মানুষ বাধা দেয় এবং ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেয়। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

সরেজমিন গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, খালপাড়ের সকল জমির মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড হলেও নূরুল আমিন মহিম মোল্লার দোকানের অংশটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গোপনে ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে বলে শুনেছি, যা বেআইনি। সরকারি সম্পত্তি লিজ নিয়ে ভোগ দখল করা গেলেও তা বিক্রির কোনো ক্ষমতা নেই লিজ গ্রহীতার। কিন্তু তারা এই কাজ করেছে।

নূরুল আমিন মহিম মোল্লা মঙ্গলবার ৭ সেপ্টেম্বর জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ করেই সাবেক এমপি এমএ গোফরান, রফিক মাস্টার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লা, ডাক্তার আবদুল কাদের, কামরুল মোল্লা, মাওলানা জসিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে এক-দেড় হাজার লোক রামগঞ্জ থেকে একত্রিত হয়ে আমার দোকানের পেছনের অংশ ভাঙ্গতে শুরু করে। আমি আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসায়ীদের জানাই এবং ৯৯৯ নম্বরে কল দেই। তিনি জানান, গত ২০/২৫ বছর ধরে তিনি এই দোকানে ব্যবসা করছেন এবং প্রতিমাসে ভাড়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে দিচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, ইতিপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি ব্যতীত খালের একপাশে আরসিসি পিলারসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমানে আমি আবারো হামলা-দখল আতঙ্কে রয়েছি। তারা হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে।

বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বলেন, খাল দখল ও দোকান ভাঙ্গার সঙ্গে কারা জড়িত জানি না। তবে এমন খবর শুনেছি।

গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেছেন, মহিম মোল্লার দোকানের পিছনে খাল দখল করে দেয়াল নির্মাণ ও দোকানের সঙ্গে জয়েন্ট করে বাঁশের মাচা নির্মাণ করতে দেখেছি। আমি উপস্থিত হয়ে বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছি। তারা আমার বারণ শুনেনি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে সাবেক এমপি এমএ গোফরান সাংবাদিকদের জানান, রামগঞ্জ সীমানায় আমি আমার জমির ওপর একটি কলেজ করবো, এজন্যে রাস্তার প্রয়োজন। যেখানে রাস্তা হবে সেখানে খালের ওপর দুটি দোকান আছে। ওই দোকান মালিক লতিফগঞ্জ মাদ্‌রাসা কর্তৃপক্ষ। ব্রীজ তৈরি করার জন্যে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আমি তাদের কাছ থেকে ওই জমি কিনে নিয়েছি। কিন্তু সেখানে অনাহুতভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনৈক মহিম মোল্লা।

লতিফগঞ্জ মাদ্‌রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমির হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি হলেও বর্তমান মালিক মাদ্‌রাসা কর্তৃপক্ষ। তাদের লিজকৃত স্থানে দোকানের মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে বিদায়ী অধ্যক্ষের শেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ হোসেন বলেছেন, কোনো বিস্ফোরণের খবর পাইনি। দোকান ভাংচুরের চেষ্টা হয়েছে। ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে থানা পুলিশের একটি ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি বলেছেন, ঘটনাটি শুনেছি। সরকারি ভূমি ও জানমাল রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়