শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৭

বার্ধক্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাকরিজীবীদের ভূমিকা

হাসান আলী
বার্ধক্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাকরিজীবীদের ভূমিকা

বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাকরিজীবীরা নানান ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে অর্থ, সময় এবং মেধার অপচয় দৃশ্যমান। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে মূলত একজন মানুষকে দক্ষ, যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ, মানবিক সেবাদাতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেবাদাতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। শুরুতেই মা-বাবা, ভাই-বোন, শ্বশুর- শাশুড়ি, আত্মীয় স্বজনকে সহযোগিতা করতে হয়।সহযোগিতা কর্মস্থল থেকে করতে পারলেই সবচেয়ে বেশি ভালো হতো। এই সুযোগ সবার ভাগ্যে হয় না।কর্মস্থল পরিবার পরিজন থেকে দূরে অথবা কর্মস্থলে পরিবার পরিজনকে নিয়ে বসবাস করার সুযোগ নেই। নানা কারণে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গেছে। সামাজিক এই ভাঙ্গন ইচ্ছে করলেই বন্ধ করা সম্ভব হতো না। যৌথ পরিবারের স্থলে একক পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী নিয়ে যে একক পরিবার সেটাও নানা সংকটে পড়ে বিছানা আলাদা হয়ে গেছে। দাম্পত্য জীবনে বিছানা আলাদা হবার মধ্য দিয়ে শারীরিক ও মানসিক যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয় তা মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ বিদেশে অবস্থান করছে। এদের মধ্যে বড়ো একটি অংশের মা-বাবা, ভাই- বোন, ছেলেমেয়ে, শ্বশুর শাশুড়ি দেশে থাকেন। বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত টাকা দেশে পাঠান পরিবার পরিজনের কষ্ট লাঘব করার জন্যে। তারা প্রবীণ পিতামাতা, শ্বশুর-শাশুড়ির চিকিৎসা, সেবা-যত্ন নিয়ে কম-বেশি চিন্তিত। গার্মেন্টস, কলকারখানা, দোকানপাট, সেবা প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ করেন। যাদের পরিবার পরিজন সাথে থাকে না। শুধু টাকা উপার্জনের জন্যে কিংবা প্রতিষ্ঠানের সেবা কাজ অব্যাহত রাখতে মানুষ যদি আটকে যায়, তবে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ হবার সম্ভাবনা আছে। মানুষ সামাজিক জীব বলেই মানুষকে সামাজিক জীবনে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

সমাজ জীবন ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে। যারা চাকরিতে আছেন কর্তৃপক্ষের উচিত হবে তাদেরকে পরিবার পরিজনের সাথে থাকার সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

পৃথিবীতে জন্ম হার নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থা দিন দিন সেই পথে এগুচ্ছে। পরিবার বিচ্ছিন্ন সমাজে জন্মহার আরও কমতে থাকবে। সন্তান লালন পালন দেখাশোনা এবং প্রবীণদের সেবা- যত্ন করা এখন এক নাম্বার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যে পারিবারিক পরিবেশে জীবন কাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রবীণরা সন্তানের সাথে থাকতে চান। আমাদের সেই সুযোগ করে দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে দিন দিন নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জ ব্যক্তি একা মোকাবিলা করতে পারবে না। বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সম্মিলিত ভাবে।

চাকরিজীবিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে ন্যায়সঙ্গত ভাবে। কোনো চাকরিজীবী যদি তার মা-বাবা, শ্বশুর- শাশুড়িকে নিজের পরিবারের সাথে রাখেন, তবে তাকে আর্থিক সুবিধার বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া যেতে পারে। সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা পাবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার, ডে কেয়ার সেন্টারে শিশু ও প্রবীণদের কমমূল্যে রাখার সুযোগ, নিকটতম ভালো স্কুলে সন্তানের ভর্তি হবার সুযোগ, স্বামী-স্ত্রীর কর্মক্ষেত্র একই জায়গায় রাখা। এ রকম সুযোগ-সুবিধা রাখতে পারলে চাকরিজীবীরা শান্তিতে, স্বস্তিতে কাজ করতে পারবেন। এতে করে কাজের মান এবং গতি বৃদ্ধি পাবে। একা যত যোগ্যতা সম্পন্ন লোকই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষের সহযোগিতা, সমর্থন ছাড়া বঁাচা অনেক কঠিন। টাকা উপার্জনের জন্যে মানুষ পরিবার পরিজনের কাছ থেকে দূরে চলে যায়। রক্ত-ঘামে অর্জিত টাকা পরিবারের সদস্যদের জীবন সহজ করার জন্যে খরচ করে। পারিবারিক দূরত্ব কাটাতে পারলে চাকরিজীবীদের কাছে পরিবার পরিজনরা অধিক সহযোগিতা সমর্থন পাবে।

রাষ্ট্র পরিচালনায় যঁারা যুক্ত তঁাদের ভাবতে হবে, ব্যক্তির পারিবারিক জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে রেখে একটি মানবিক সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে না। উন্নয়ন মানে সকলে মিলে সুখী হবার ভাবনা। কিন্তু আমরা উন্নয়ন বলতে বুঝি অবকাঠামোর উন্নয়ন আর টাকা পয়সা অর্জন। মানুষ যদি উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে না পারে, তবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তখন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। সমাজের ক্ষোভ- বিক্ষোভ প্রশমন করতে পারলে মানুষ শান্তিতে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যয় কমবে।

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, তাই তাকে সমাজ জীবনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণ করে মানুষের সামাজিক যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোনো একজন পুরুষ কাজ করলে তার স্ত্রীকে একই জায়গায় কাজের সুযোগ দিতে হবে। সেখানেই ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজ, প্রবীণ নিবাস, ডে কেয়ার সেন্টার, প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক সেন্টার, নাট্যশালা, লাইব্রেরি, শরীর চর্চা কেন্দ্র, হাসপাতাল, নার্সিং হোম ইত্যাদি গড়ে তুলতে হবে।

মুনাফাকে মাথায় রেখে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্যে যথেষ্ট নয়। মানবিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। সব কিছু দখলে নেবার মানসিকতা হ্রাস পাবে। যৌথ জীবন বোধ তৈরি হলে মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, রাগ-ক্ষোভ প্রশমিত হতে থাকবে। দুর্বল সম্পর্ক অসামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করে, ফলে পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হয়।

হাসান আলী : প্রবীণ বিশেষজ্ঞ, কথক, লেখক ও সংগঠক।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়