শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৭

গ্রামীণ সাংবাদিকের পেশাদারসম কৃতিত্ব!

কাজী শাহাদাত
গ্রামীণ সাংবাদিকের পেশাদারসম কৃতিত্ব!

  মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ। একজন গ্রামীণ সাংবাদিক। তিনি কোনো গণমাধ্যমের উপজেলা সদরে কর্মরত প্রতিনিধি নন। কোনো পত্রিকা বা গণমাধ্যমের  সম্পাদক ও প্রকাশক নন। তিনি স্টাফ রিপোর্টার,  সাব এডিটর, বিভাগীয় সম্পাদক কিংবা বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্বেও ছিলেন না বা নেই। সাংবাদিকতা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য  প্রশিক্ষণ নেই তঁার। সাংবাদিকতা তঁার পেশাও নয়। অথচ তিনিই চঁাদপুর প্রেসক্লাব প্রবর্তিত প্রথম সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০২৪) বিজয়ী ছয়জনের একজন হয়েছেন। সাংবাদিকতাকে জীবনের সৌখিন কাজ হিসেবে নিয়ে পেশাদার সাংবাদিকের ন্যায় দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন তিনি। যার ফলে জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতিমান তিনজন সাংবাদিকের বিচারে তিনি এই পুরস্কারের জন্যে নির্বাচিত হয়ে আলোড়ন সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বুধবার (৮ জানুয়ারি ২০২৫) সন্ধ্যায় চঁাদপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত জঁাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে চঁাদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের হাত থেকে এই পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক, ক্রেস্ট ও সনদপত্র গ্রহণ করেছেন।

                চঁাদপুর জেলার ছোট একটি উপজেলা মতলব দক্ষিণের খাদেরগঁাও ইউনিয়নের ঘিলাতলী গ্রামে ১৯৭৪ সালে মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহর জন্ম। পড়েছেন নিজ গ্রামের মাদ্রাসাতেই। দাখিল ও ফাজিলে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের ভিত্তিতে  তিনি দেশের সেরা মাদ্রাসা ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তির সুযোগ পান এবং ১৯৯৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে কামিল পাস করেন। ২০০২ সালে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চঁাদপুর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। ২০১২ সালে তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়ালেখার  দীর্ঘ পাঠ চুকিয়ে তিনি চাকুরি নেন তঁার গ্রামের বাড়ির নিকটবর্তী নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগারে। ছাত্রজীবন ও পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি পত্রিকায় লেখালেখি ও সৌখিন সাংবাদিকতার কাজ চালিয়ে যান। ২০০০ সালে নারায়ণপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় দৈনিক চঁাদপুর কণ্ঠের কর্মতৎপর প্রতিনিধি আমীর আলী বিল্লাল (এএ বিল্লাল)-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। এই বিল্লাল ২০২১ সালে নারায়ণপুর প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন সৌদি আরব চলে গেলে তঁার বন্ধুপ্রতিম আরিফ বিল্লাহ  ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব কঁাধে নেন এবং তাতে যথার্থ সক্ষমতা প্রদর্শন করায় ২০২২ সালে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দুবছর দায়িত্বপালন করেন। বর্তমানে তিনি মতলব  দক্ষিণ উপজেলা জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন।

                চঁাদপুর কণ্ঠ পরিবারের জন্যে আত্মশ্লাঘার বিষয় হচ্ছে এই যে, মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ এই পত্রিকার মতলব দক্ষিণ উপজেলায় কর্মরত নিজস্ব প্রতিনিধি, যিনি ২০১১  সাল থেকে নিজ গ্রামে বসবাস করেই এই দায়িত্বটি পালন করে চলছেন। তিনি 'অপরিকল্পিত নগরায়ণে ভাসছে গ্রামীণ জনপদ' শিরোনামে ২০২৪ সালের ২৮ ও ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৩, ৭ ও ৮ অক্টোবর চঁাদপুর  কণ্ঠে পঁাচটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেন। চঁাদপুর প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৪ ঘোষণার পর তাতে নিজেই উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি প্রতিবেদনটি লেখার উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে তঁাকে চঁাদপুর কণ্ঠ থেকে কোনো অ্যাসাইনমেন্টও দেয়া হয় নি। স্বীয় উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা থেকেই তিনি কাজটি করেছেন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই। যার ফলে এই প্রতিবেদনটি মানসম্পন্ন হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিকদের মূল্যায়নে পুরস্কারের জন্যে নির্বাচিত হয়েছে। এতে তিনি প্রমাণ করেছেন, গ্রামে বসবাস করেও প্রযুক্তির কল্যাণে ও লেখালেখির অভ্যাস থাকার কারণে ভালো মানের সাংবাদিকতা করা যায়,  যেজন্যে সাংবাদিকতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের সুযোগবঞ্চিত হওয়াটা প্রধান কোনো প্রতিবন্ধক নয়। তঁার এই অর্জনে গ্রামীণ সাংবাদিকদের মাথা উঁচু হয়েছে এবং চঁাদপুর জেলার প্রথম দৈনিক চঁাদপুর কণ্ঠের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় মিলেছে। এজন্যে তঁাকে হার্দিক অভিনন্দনসহ চঁাদপুর কণ্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা।

                মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ চঁাদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকতা পুরস্কার পেয়ে কি অনেক কিছু করে ফেলেছেন?--না, বিশেষ কিছু করেছেন। এই পুরস্কার প্রাপ্তি তঁাকে দায়িত্বশীলতা ও পাঠকদের অধিক প্রত্যাশার বেড়াজালে কার্যত  বন্দি করে ফেলেছে। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে স্বীয় অহমিকাবোধ ও সাংবাদিকতায় কম সক্রিয় হয়ে যাওয়া। দেখার বিষয়, তিনি আসলে কী করেন। তবে তঁার জন্যে তঁার ভক্ত-অনুরাগী-শুভাকাঙ্ক্ষীসহ চঁাদপুর কণ্ঠের অসংখ্য  পাঠক ও চঁাদপুর কণ্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে নিরন্তর  শুভ কামনাই থাকলো। তিনি সুস্থতার সাথে নেক হায়াত লাভ করে বাড়তি দায়িত্বশীলতা পালনের সক্ষমতা অর্জন  করুন--এই আন্তরিক দোয়াই থাকলো সকলের পক্ষ থেকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়