শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

পৌর এলাকার ভোটারদের সাথে একরকম প্রতারণা করছি
অনলাইন ডেস্ক

পৌর এলাকার ভোটাররা ভোট দিয়ে আমাদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। অথচ তাদের সেবা করার কোনো সুযোগ আমাদের থাকে না। নির্বাচনের সময় তাদের সেবা করার আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ভোট নেই। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের জন্য কিছু করার ক্ষমতা আমাদের থাকে না। এটা ভোটারদের সাথে একরকম প্রতারণা।

চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ গঠন কাঠামোতে উপজেলাধীন ১৪টি ইউনিয়ন ও সদরে অবস্থিত চাঁদপুর পৌরসভাকে একটি ইউনিট ধরে মোট ১৫টি ইউনিট নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়। সে হিসেবে পৌরসভার মেয়র এবং ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা তার নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বর্তমানে চাঁদপুর পৌরসভার মোট ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজারের কম বেশি। চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাচনে ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। অথচ মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যারা পৌরসভার বাসিন্দা, তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়রম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ভোটে নির্বাচিত করলেও কোনো ধরনের সেবা প্রদান করার সুযোগ স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশনায় প্রচলিত বিধানে রাখা হয় নাই।

পৌরসভার প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোটার ভোটে অংশগ্রহণ করবে, প্রার্থীরা নির্বাচনে তাদের উন্নয়নে আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইবে, ভোট গ্রহণ শেষে তাদের কোনো ধরনের উন্নয়নে সরকারি বাধ্যবাধকতায় কাজ করতে পারবে না। এটা ভোটারদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।

সদর উপজেলায় একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা আছেন, যিনি শুধুমাত্র উপজেলাধীন ১৪টি ইউনিয়নের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওত্তায় দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্যে পরিবর্তনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজ বাস্তবায়ন করেন।

অপরদিকে চাঁদপুর পৌরসভার একজন শহর সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে পৌরসভাধীন ১৫টি ওয়ার্ডের একই ধরনের সেবা প্রদান করেন। এতে সদর উপজেলা পরিষদের কোনোরূপ মতামত নজরদারি বা পরামর্শ দেয়ার সুযোগ নাই। এ বিপুল সংখ্যক ভোটারগণ যখন উপজেলা পরিষদে যে কোনো সহায়তার জন্য আসেন, তখন বিশেষ করে অতিদরিদ্র অসহায় মানুষগুলো আসেন, তখন যদি বলি পৌরসভার লোকদের ভাতা দেয়ার কোনো সুযোগ উপজেলা পরিষদের নেই, তখন তারা ক্ষোভের সাথে বলেন আমরা আপনাকে ভোট দিয়েছি, আপনারা আমাদের প্রতিনিধি, এখন কেনো না করছেন। তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ অসহায়ত্ব, এ অক্ষমতা একান্তই লজ্জাকর ও দুঃখজনক।

একজন উপজেলা চেয়ারম্যান পৌরসভাসহ উপজেলাধীন সব ক’টি ইউনিয়নের ভোটে নির্বাচিত হন আর পৌরসভার মেয়র শুধু পৌর এলাকার ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হন। অথচ পৌরসভার মেয়রগণকে সরকারিভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান সমান মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। আবার উপজেলা পরিষদ আইনে উপজেলাধীন পৌরসভাগুলোকে একটা ইউনিটের হিসেবে মেয়রগণকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সমান মর্যাদা দিয়ে উপজেলা পরিষদের সদস্য দেখানো হয়েছে এবং সে হিসেবে মেয়রগণ উপজেলা পরিষদের নিয়মিত সদস্য। কিন্তু পৌর মেয়রগণ উপজেলা পরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ও কোনো মিটিংয়ে উপস্থিত হন নাই এবং তার কোনো প্রতিনিধি আসেনি।

যদি পৌরসভার মেয়রকে উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দেখানো হয় সেক্ষেত্রে উপজেলাধীন ইউনিয়নগুলোর সাথে পৌর পরিষদের সরকারি বরাদ্দ এক সাথে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সরকারি বরাদ্দ পত্রে চাঁদপুর সদর উপজেলা ১৪টি ইউনিয়নের বরাদ্দ এক সাথে ও পৌরসভার বরাদ্দ আলাদাভাবে দেয়া হয়। এ ছাড়া রাস্তাঘাট নির্মাণ বা উন্নয়ন কাজ উপজেলা পরিষদের কোনরকম সম্পৃক্ততা থাকে না। বন্যা প্লাবন, অগ্নিসংযোগ, দুর্যোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগণ যখন সাহায্যের জন্য আসেন তখন তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বিবেকের কাছে নিজেকে অসহায়ত্ব ও অপরাধী মনে হয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পর হয়তো উপজেলা পরিষদের নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হবে। যদি বিদ্যমান আইনের কোনো সংশোধন না হয়, তবে শুভঙ্করের ফাঁকির মধ্যে আবারও নির্বাচন হয়ে যাবে এবং পৌরসভার ভোটারগণ আবারো প্রতারিত হবেন।

গত ১৮ মে ২০২৩ চাঁদপুর সদর উপজেলার মাসিক সভায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনাক্রমে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য সচিব, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। যদি আইনের কোনো সংশোধন না হয়, উপজেলা পরিষদ থেকে পৌরসভার ভোটারদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।

কী বিচিত্র ও সাংঘর্ষিক আইন! নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠন প্রক্রিয়ার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাই চেয়ারম্যানকে প্রদাধিকার বলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়, ১৪টি ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সমন্বয়ে নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠন করা হয় এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে একজন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। আবার পৌর পরিষদকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। আইনের এ বেড়াজালে ভোটারগণ ক্ষতিগ্রস্ত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিভ্রান্ত ও দিশেহারা। এটার অবসান হওয়া জরুরি। নতুবা আবারও পৌরবাসী ভোট দিয়ে প্রতারিত হবেন।

লেখক : নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান,

সভাপতি চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ,

চেয়ারম্যান চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ, চাঁদপুর সদর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়