প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এককালের খরস্রোতা নদী ডাকাতিয়া সিআইপি বাঁধের কারণে নাব্যতা ও স্রোত দুটোই হারিয়েছে। নদীর পানি সেচের মাধ্যমে ইরি-বোরো আবাদ অদ্যাবধি চললেও ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। নদীর ওপর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করে সেচ পানির প্রবাহ আটকে দেয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিকর কাজ বাজার সংলগ্ন ব্রীজের নিচে ও দুই প্রান্তে ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট করার অপচেষ্টা। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের কেরোয়া ব্রীজের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর দিকে তাকালেই তার বড় প্রমাণ মিলবে। বাজারের আবর্জনার সাথে গবাদি পশু জবাই করে রক্ত, মল ও নানা অংশ ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে নদীর তলদেশ অনেকখানি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতিসাধনসহ ফসল উৎপাদনে সেচ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্রীজের নদীর দুই তীরের প্রায় অর্ধেক অংশ ভরাট হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর ও বাজারের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ডাকাতিয়া নদীর শাখা প্রবাহিত। যা উন্মুক্ত জলাশয়। ফরিদগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ডাকাতিয়ার ওপর নির্মিত কেরোয়া ব্রীজ। এই ব্রীজের নীচে দুই তীরেই ময়লা ও ভারী আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর তলদেশ থেকে ৭/৮ ফুট ভরাট হয়ে গেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। সেতু ও তার দুই প্রান্তে দাঁড়ালে নিচে শুধু ময়লা-আবর্জনাই দেখা যায়। পানির দেখা মিলে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সেতুর পশ্চিমণ্ডউত্তর কোণে ডাকবাংলোর নিকট ১৯৮৯ সালে তৎকালীন এমপির নির্দেশে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে নদীর দুই তীর থেকে মাটি ফেলে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর সে প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে বদ্ধ জলাশয় উল্লেখ করে আবেদনের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে লীজ নিয়ে ফরিদগঞ্জ-কেরোয়া সেতুর নিচে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করা হয়। এতে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে পানির প্রবাহ প্রায় বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়ে। ওই সময়ে বামদলের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলালের নেতৃত্বে ‘ফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন আন্দোলনে নামে। তারা উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তৎকালীন নির্বাহী অফিসার আবদুন নূর-এর নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনির চৌধুরী। তদন্তে ও রেকর্ডপত্রে জলাশয় উন্মুক্ত হিসেবে প্রমাণ মিলে। এতে লীজ বাতিলের সুপারিশসহ রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার সরজমিন তদন্ত করেন এবং তিনি ডাকাতিয়ার শাখা ও ওই উন্মুক্ত জলাশয়ের লীজ বাতিলের সুপারিশ করলে লীজ বাতিল করা হয়।
কিন্তু এরপর থেকে কৌশলে শুরু হয় ব্রীজের দুই তীর থেকে আবর্জনা ফেলে নদীর অস্তিত্ব বিলোপ করার কাজ। নদীর এই অংশের নাব্যতা অনেকটা কমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পানি প্রবাহ। সর্বশেষ ইরি-বোরো মৌসুমে ফরিদগঞ্জের উত্তরাঞ্চলে সেচ পানির অভাবে মাঠ ফেটে চৌঁচির হয়ে যায়। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের মাঝে হাহাকার দেখা দেয়ায় জেলা প্রশাসক, ইউএনও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাদের নির্দেশে সিআইপির স্লুইচ গেইট দিয়ে পানির প্রবাহ বাড়িয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু, এভাবে নদীতে কৃত্রিম বাঁধ থাকলে পানির প্রবাহ বাড়িয়েও কোনো কাজে আসবে না।
এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, নদীতে আবর্জনা ফেলার বিষয়টি নজরে আসার পর আমি ময়লা ফেলতে বারণ করেছি। নদী রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের।