প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কক্ষ ভেঙে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীকে ছাড়িয়ে নিলো সহপাঠীরা
নিষিদ্ধ সংগঠনের দাপট: বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিজয় মিছিল করেছে তার সহপাঠীরা। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামী ব্যাংকের সামনে থেকে শাহরিয়ার সান নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আটতকৃত শাহরিয়ার সান ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
|আরো খবর
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, আটক করার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নিরাপত্তা কক্ষে প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রাখে। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে সহপাঠী পরিচয়ধারীরা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা ওই সময় বিজয় মিছিলও করে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, যারা শাহরিয়ারকে ছাড়িয়ে নিয়েছে তারা তার সহপাঠী নয়, বরং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, "সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী শাহরিয়ারকে আটক করেছিল। পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক সঙ্গীরা দরজা ভেঙে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। আটককৃত শাহরিয়ার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।"
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ বলেন, "গত জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সরাসরি যুক্ত ছিল শাহরিয়ার। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের কর্মীরা তালা ভেঙে তাকে ছাড়িয়ে নেয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।"
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি: সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম চলতে দেওয়া উচিত নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, "শাহরিয়ার ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এমন একজন শিক্ষার্থীর এ ধরনের কাজ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি চাই।"
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান: এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। তবে ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা কখনই তাদের প্রশ্রয় দেব না। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
সাধারণ শিক্ষার্থীদের শঙ্কা: বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠনের প্রভাব নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত। তাদের মতে, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের উচিত দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
প্রাসঙ্গিক তথ্য: ১. জুলাই মাসের আন্দোলন: শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাহরিয়ার সান আগেও ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল। ২. নিরাপত্তা কক্ষ ভাঙচুর: এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি প্রকাশ করে।
এই ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা এবং নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ