প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
অবশেষে দীর্ঘ ১১ বছর পর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে আলোচিত-সমালোচিত শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটনকে। তিনি ১১ বছর ধরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছিলেন। চাঁদপুর কণ্ঠে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত করা হলে টনক নড়ে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির। ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয় বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে।
এদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বশির আহমেদ জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। মাহমুদ আলম লিটন ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং দ্বৈত শিক্ষকতা থেকে বিরত থাকছেন।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, মাহমুদ আলম লিটনকে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পেরে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মূলত সে লক্ষ্মীপুরের এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। কীভাবে তাকে আমার পূর্বসূরি ওই প্রতিষ্ঠানে সুযোগ দিল পার্টটাইমে শিক্ষকতা করার জন্যে, সেটা আমার জানা নেই। যখন আমি জানতে পেরেছি তাকে আমরা অব্যাহতি দিয়েছি। তার জায়গায় অন্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি।
উল্লেখ্য, মাহমুদ আলম লিটন পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর দুই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। চাঁদপুর কণ্ঠে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর তাকে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় কলেজে খণ্ডকালীন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ২০১২ সালের প্রথম দিকে।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক তালিকা থেকে দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার রায়পুর কামিল মাদ্রাসার (ইআইএন-১০৭০৩০) ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। যেখানে তার নামীয় ইনডেক্স এন ২০৯৭৩৩৭। দেখা যায়, শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটন এমপিওভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির কারণে প্রতিমাসে সরকার থেকে ৩৭ হাজার টাকা গ্রহণ করছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ওয়েবসাইটে দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই পদে যোগদান করেন এবং একই বছরের নভেম্বরের ১ তারিখে তিনি এমপিও তালিকাভুক্ত হন।
বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, মাহমুদ আলম লিটনের কাছে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করা হতো। তার কাছে না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম দেয়া হতো এবং ক্লাসে বিভিন্ন সময়ে অপমানজনক কথা বলতো। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, মাহমুদ আলম স্যারের কাছে যারা প্রাইভেট পড়তো, তাদেরকে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন দেয়া হতো। এছাড়াও যারা খাতায় কম নাম্বার পেতো এবং ফেল করতো, তাদেরকে বাসায় নিয়ে পুনরায় খাতায় লিখিয়ে নম্বর দেয়া হতো।
জানা যায়, মাহমুদ আলম লিটনের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। শিক্ষাজীবনে বাবুরহাটস্থ বোনের বাসা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ করার ফলে এই এলাকায় পরিচিতি বাড়ে। ছাত্রজীবন থেকে মাহমুদ আলম লিটন টিউশনি পেশায় রয়েছেন। ধীরে ধীরে এ পেশাটি তার লোভে পরিণত হওয়ায় তিনি এই এলাকায় কোচিং বাণিজ্য গড়ে তোলেন।