সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩

নতুন আতঙ্কের নাম এইচএমপিভি

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
নতুন আতঙ্কের নাম এইচএমপিভি

নতুন নতুন আতঙ্ক পৃথিবীকে ঘিরে রাখে এক এক সময়। জীবাণুর ভাগাড় সবুজ পৃথিবী নতুন নতুন এই জীবাণুর আতঙ্কে কখনও খেই হারায়, কখনও নিস্তেজ হয়ে পড়ে কোয়ারান্টাইন কিংবা লকডাউনের ফাঁদে পড়ে। করোনা লকডাউনের স্মৃতি ফিকে হতে না হতেই আবার এসেছে নতুন এক ভাইরাস যার নাম এইচএমপিভি। এর পুরো বিস্তৃত নাম হচ্ছে হিউম্যান মেটা নিউমোভাইরাস। এটি অনেকটা ঠাণ্ডা-সর্দিকাশির মতো উপসর্গ তৈরি করে।

কারা আক্রান্ত হয় বেশি

* যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম

* যাদের বয়স পঁয়ষট্টি বছরের বেশি

* যারা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম

* যারা ক্যান্সার আক্রান্ত

* যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা গ্রহণ করছেন

* যারা এমন কোন ঔষধ সেবন করছেন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়

* যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি ও সিওপিডি ( শ্বাসতন্ত্রে নিঃশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হওয়া) রোগ আছে।

রোগের উপসর্গ

* গলা ব্যথা

* শ্বাসের টান বা বুকে শোঁ শো আওয়াজ

* নাকে সর্দি

* নাক জাম হওয়া

* কাশি

* জ্বর

* অগভীর নিঃশ্বাস বা পূর্ণ নিঃশ্বাস নিতে বাধা বা ডিজনিয়া

* শরীরে লালচে র‌্যাশ

এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার জটিলতা

* অ্যাজমা বা হাঁপানী রোগ তীব্রতা লাভ করা

* সিওপিডি বা শ্বাসতন্ত্রের রোগ উস্কে দেওয়া

* ঊর্ধ শ্বাসতন্রে জীবাণু সংক্রমণ

* নিম্ন শ্বাসতন্ত্রে জীবাণু সংক্রমণ

* ব্রঙ্কিওলাইটিস বা ক্ষুদ্র শ্বাসনালীর জীবাণু সংক্রমণ

* ব্রঙ্কাইটিস বা বড় শ্বাসনালীর জীবাণু সংক্রমণ

* নিউমোনিয়া

* কানে জীবাণু সংক্রমণ বা ওটাইটিস মিডিয়া

এইচএমপিভি সংক্রমণ কখন তীব্রতা পায়

শীতকাল এবং বসন্তের সূচনালগ্নে হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাসের সংক্রমণ তীব্রতা লাভ করে। তবে প্রথমবার এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এর বিপরীতে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি হয়। ফলে পরবর্তী সংক্রমণে তীব্রতা কমে আসে।

আক্রান্ত হওয়ার হার

* শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ১০%-২০% ভাগ রোগ এইচএমপিভি দ্বারা সৃষ্ট

* অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ মৃদু বা সহনীয় হলেও ৫%-১৬% ভাগ আক্রান্ত শিশু নিউমোনিয়ার শিকার হয়।

এইচএমপিভি কীভাবে সংক্রামিত হয়

* কোন সুস্থ ব্যক্তি পূর্বে এইচএমপিভি দ্বারা আক্রান্ত কারও সরাসরি সংস্পর্শে আসলে তার দেহে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

* আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচিতে এই ভাইরাস ছড়ায়।

* আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মিলালে, কোলাকুলি করলে, চুম্বন বিনিময় হলে এ ভাইরাস সংক্রামিত হয়।

* আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত কম্পিউটার কি-বোর্ড, খেলনা ইত্যাদি ধরলেও এ ভাইরাস সুস্থ দেহে সংক্রামিত হতে পারে।

রোগনিরূপণ ও পরীক্ষণ

* রোগের ইতিহাস ও উপসর্গ বিবেচনা

* নাক ও গলা হতে নমুনা (সোয়াব) সংগ্রহ

* বুকের এক্সরে

* ব্রঙ্কোস্কোপি

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

* অধিকাংশ আক্রান্ত শিশু বাসায় বা ঘরে চিকিৎসা দেওয়া যায়

* খুব তীব্র সংক্রমণ হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।

* নিঃশ্বাস নিতে অসমর্থ হলে অক্সিজেন থেরাপি দিতে হয়

* ডিহাইড্রেশন রোধে শিরাপথে ফ্লুইড দিতে হয়

* উপসর্গ কমাতে বা কষ্ট লাঘব করতে কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ দিতে হয়।

এটি ভাইরাল ইনফেকশন বিধায় এতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নাই। তবে ব্যাক্টেরিয়াজনিত সেকেন্ডারি ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।

এইচএমপিভি প্রতিরোধের উপায়

* সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া

* নাক ও মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করা

* উন্মুক্তভাবে হাঁচিকাশি না দিয়ে রুমাল বা টিসু ব্যবহার করা

* এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা

* হাত না ধুয়ে মুখ, চোখ, নাক স্পর্শ না করা

* চা পানের কাপ, পানি পানের গ্লাস বা মগ, চামচ-কাঁটা চামচ একজনেরটা আরেকজন ব্যবহার না করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়