প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১
পাকস্থলীর আলসার : কারণ ও প্রতিকার
পাকস্থলীর আলসার বা গ্যাসট্রিক আলসার হলো পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণে হওয়া এক ধরনের ঘা বা ক্ষত। এ ধরনের আলসার পাকস্থলী ছাড়াও পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য জায়গায় হতে পারে। যেমন : পাকস্থলীর পর থেকে শুরু হওয়া অন্ত্রের প্রথম অংশে এমন ঘা হয়, যাকে বলা হয় ডিওডেনাল আলসার। ডিওডেনাল আলসার ও পাকস্থলীর আলসারÑএই দুই প্রকার আলসারকে অনেক সময় পেপটিক আলসারও বলা হয়। এখানে মূলত পেটের আলসার নিয়ে কথা বলা হলেও, তথ্যগুলো ডিওডেনাল আলসারের জন্য সমানভাবে কার্যকর।
পেটের আলসার হলে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
পাকস্থলীর আলসারের সবচেয়ে কমন লক্ষণ হলো বিশেষ এক ধরনের ব্যথা। পেটের আলসারে পেটের মাঝ বরাবর জ্বালাপোড়া করতে থাকে বা সারাক্ষণ ভোঁতা এক ধরনের ব্যথা হতে থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রেই যে ব্যথা থাকে তা নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে। যেমনÑ
* বদহজম
* বুক জ্বালাপোড়া করা
* বমি বমি ভাবকখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
আপনার যদি পাকস্থলীর আলসারের কোনো লক্ষণ আছে বলে মনে হয় তবে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। এছাড়া নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোনÑ
* রক্তবমি হলে। বমির সাথে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত যেতে পারে। অথবা খয়েরী রঙের চাকাচাকা বা দানাদার রক্ত মিশ্রিত থাকতে পারে, যা দেখতে অনেকটা কফির দানার মতো।
* কালো, আঠালো, আলকাতরার মতো পায়খানা হলে।
* পেটে হঠাৎ করে তীব্র ও তীক্ষè ব্যথা হলে, যা সময়ের সাথে ক্রমশ বাড়তে থাকে।
এসব লক্ষণ শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের মতো কোনো মারাত্মক জটিলতার কারণে দেখা দিতে পারে। তাই দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
পেটের আলসার কেন হয়?
পাকস্থলীর আস্তরণকে পেটের ভেতরে তৈরি হওয়া এসিডের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করার জন্য এদের মাঝে একটি প্রলেপ থাকে। প্রলেপটি মূলত মিউকাস নামের শ্লেষ্মার মতো পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি স্তর। কোনো কারণে এই স্তরটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসিড সরাসরি পাকস্থলীর আস্তরণের সংস্পর্শে এসে একে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এভাবে পেটের আলসার তৈরি হয়।
প্রলেপটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছেÑ
* হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
* আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন, এসিক্লোফেনাক বা অ্যাসপিরিনের মতো নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস বা ঘঝঅওউং গ্রুপের ঔষধ বহুদিন ধরে বা উচ্চ ডোজে সেবন
আগে ধারণা করা হতো যে মানসিক চাপ থেকে কিংবা নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে আলসার হয়ে থাকে। কিন্তু এগুলোর পক্ষে কোনো অকাট্য প্রমাণ মেলেনি।
পেটের আলসার কাদের হয়?
পেটের আলসার বেশ কমন একটি রোগ, যা শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষেরই পারে। সাধারণত ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে রোগটি বেশি দেখা যায়। নারীদের চেয়ে পুরুষেরা সাধারণত পাকস্থলীর আলসারে বেশি আক্রান্ত হয়।
পেটের আলসারের চিকিৎসা
সঠিক চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ পেটের আলসারই এক থেকে দুই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে ওঠে। কোন রোগীকে কী চিকিৎসা দেওয়া হবে তা সাধারণত নির্ভর করে কী কারণে আলসার হয়েছে তার ওপর।
পাকস্থলীর আলসারের চিকিৎসায় সাধারণত নিচের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়Ñ
১. বেশিরভাগ মানুষের চিকিৎসায় প্রথমে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (চচও) গ্রুপের ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলোকে আমরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ হিসেবে চিনি। চচও পাকস্থলী হতে গ্যাস্ট্রিক এসিডের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, ফলে আলসার বা ক্ষতস্থানটি নিজে নিজে সেরে ওঠে।
২. হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (ঐ. ঢ়ুষড়ৎর) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশনের কারণে আলসার হয়ে থাকলে চচও এর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। অ্যান্টিবায়োটিক এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলার মাধ্যমে বার বার আলসার হওয়া প্রতিরোধ করে।
৩. নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস বা ঘঝঅওউং গ্রুপের ঔষধ সেবনের ফলে আলসার হলে সেক্ষেত্রেও চচও সেবন করতে হয়। সেই সাথে আপনি ঘঝঅওউং জাতীয় ঔষধ সেবন চালিয়ে যাবেন কি না সেই বিষয়েও ডাক্তার আপনার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবেন। প্রয়োজনে এসব ঔষধের পরিবর্তে প্যারাসিটামলের মতো ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
চিকিৎসা নিয়ে সেরে ওঠার পরেও পাকস্থলীতে আবার আলসার হতে পারে। তবে যে কারণে আলসার হয়েছিলো তা নির্মূল করা সম্ভব হলে সাধারণত পরবর্তীতে আলসারের সমস্যা আর ফিরে আসে না।
পেটের আলসারের সম্ভাব্য জটিলতা
পাকস্থলীর আলসারে সাধারণত বিশেষ জটিলতা দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এসব জটিলতা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। এই জটিলতাগুলো এতটা গুরুতর যে, এগুলো থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পেটের আলসারের প্রধান জটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ
* আলসার বা ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া
* আলসারের জায়গাটিতে পাকস্থলীর আস্তরণ ফুটো হয়ে যাওয়াÑএকে ডাক্তারি ভাষায় পারফোরেশন (চবৎভড়ৎধঃরড়হ) বলে
* আলসারের কারণে পরিপাকনালীর ভেতর দিয়ে খাবারের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়াÑএকে বলা হয় গ্যাস্ট্রিক অবস্ট্রাকশন
ঘরোয়া চিকিৎসা
* আলসারের প্যানেসিয়ার জন্য বাঁধাকপির রস এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁধাকপি আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে। আলসার সারাতে খাবেন মধু মধুর বৈশিষ্ট্যগুলির উপর গবেষণা অনুসারে, মধু একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যা বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য উপকারের সঙ্গে জড়িত। রসুন আলসারের প্রাকৃতিক ওষুধ। আলসার গোড়া থেকে দূর করতে হলুদ খান।