সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

স্বপ্ন নয়, মেট্রোরেল এখন বাস্তব
অনলাইন ডেস্ক

শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর। বাংলার মানচিত্রে বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবারের মতো চলতে শুরু করল স্বপ্নের মেট্রোরেল। ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন বা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত এই মেট্রোরেলের পুরো পথটি নির্মাণ করা হয়েছে ভায়াডাক্টের (মাটির ওপর দিয়ে নির্মিত রাস্তা বা সেতু) ওপর। এর মধ্য দিয়ে নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে বাংলাদেশের, স্বপ্নপূরণ হয়েছে বাংলার মানুষের।

রাজধানী ঢাকার বুকে এমআরটি লাইন-৬ এর প্রথম অংশ উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে। এই পথের দৈর্ঘ্য ১১.৭৩ কিলোমিটার। স্টেশন রয়েছে নয়টি। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে দ্রুতগামী এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে এবং পরিবেশ উন্নয়নে দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময়-সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎচালিত, দূরনিয়ন্ত্রিত ও পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তন হিসেবে ২০১৬ সালের ২৬ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে।

দ্রুতগামী এই যোগাযোগ ব্যবস্থার (এমআরটি লাইন-৬) প্রাক্কলিত ব্যয় (দ্বিতীয় সংশোধিত) হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) সহজ শর্তে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে।

স্টেশন ও রুট

ডিপো থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার আদর্শ-গেজ (এক হাজার ৪৩৫ মিলিমিটার) রেলপথে মোট স্টেশন থাকছে ১৭টি। স্টেশনগুলো হচ্ছে— উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। বর্তমানে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এটি চলবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালানোর চেষ্টায় কাজ চলছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসরণে এমআরটি লাইন-৬ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই অংশের পরিষেবা যাচাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে।

এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল রুটের প্রতিটি স্টেশনে কনকোর্স লেভেল থাকছে। কনকোর্স লেভেলে ওঠার জন্য প্রতিটি স্টেশনে সিঁড়ি, লিফট ও এস্কেলেটর থাকছে। শুধুমাত্র মেট্রো ট্রেন চলার সময় কনকোর্স লেভেল দিয়ে রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়া যাবে। তবে, পেইড জোন এলাকা ও মূল প্লাটফর্মে যাওয়া যাবে না। পথচারীরা রাস্তা পারাপারের জন্য এই ব্যবস্থাকে ফুট ওভারব্রিজের অতিরিক্ত সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

যাতায়াতের সময়, যাত্রীর ধারণক্ষমতা ও গতি

কমিউনিকেশন বেইজড ট্রেন কন্ট্রোল (সিবিটিসি) সিস্টেমের এই মেট্রোরেলে দুটি ট্রেইলার কোচসহ মোট ছয়টি কোচ থাকবে। ভবিষ্যতে আটটি কোচে উন্নীত করা যাবে। ট্রেইলার কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন এবং বাকি চারটি কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিটি মেট্রোরেল দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ফলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। মেট্রো ট্রেনের ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ১০০ কিলোমিটার। শুরুতে ১০ মিনিট পরপর চলবে এটি। পর্যায়ক্রমে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সময়ের পার্থক্য কমিয়ে আনা হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে তিন মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলার কথা।

টিকিট ব্যবস্থাপনা

মেট্রোরেলে ‘সিঙ্গেল জার্নি টিকিট’ ও ‘এমআরটি পাস’ ব্যবহার করে যাতায়াত করা যাবে। র‌্যাপিড পাস ব্যবহার করেও যাত্রীসাধারণ স্বাচ্ছন্দ্যে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে টিকিট বিক্রয়কারীর সহায়তায় সিঙ্গেল জার্নি টিকিট এবং এমআরটি পাস কেনা যাবে। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) থেকে যাত্রীরা নিজেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সিঙ্গেল জার্নি টিকিট এবং এমআরটি পাস টপ-আপ করতে পারবেন।

মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন্সের মাধ্যমেও এমআরটি পাস টপ-আপ করা যাবে। ভ্রমণ-দূরত্ব অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে সিঙ্গেল জার্নি টিকিট কেনা যাবে। এমআরটি পাস ও র‌্যাপিড পাস থেকে ভ্রমণ-দূরত্ব অনুযায়ী সরকারের নির্ধারিত ভাড়া কাটা হবে। যেকোনো সময় যাত্রী এমআরটি পাস ফেরত দিয়ে জমানতের অর্থ ও অব্যবহৃত অর্থ ফেরত নিতে পারবেন।

এমআরটি পাস হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে রেজিস্টার্ড কার্ডের বাহককে জামানত পরিশোধ করে নতুন এমআরটি নিতে হবে। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন এমআরটি পাসে স্থানান্তরিত হবে। এমআরটি পাস হারিয়ে গেলে নিকটস্থ স্টেশনের টিওএম অপারেটরকে অবহিত করে রেজিস্টার্ড কার্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।

মেট্রোরেলে ভাড়া

ডুয়েল কন্টিনিউয়াস ওয়েল্ডেড রেল ট্রাকের এই মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সেই হিসাবে যাত্রীর প্রতি কিলোমিটারের জন্য ভাড়া ৫ টাকা; সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। মাঝে মেট্রোরেলের রয়েছে আরও সাতটি স্টেশন। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই, ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা এবং আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা।

আবার আগারগাঁও স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ পর্যন্ত ২০ টাকা, মিরপুর-১১ ও পল্লবী পর্যন্ত ৩০ টাকা, উত্তরা দক্ষিণ ৪০ টাকা, উত্তরা সেন্টার ৫০ টাকা এবং উত্তরা উত্তর স্টেশন পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

এদিকে, স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ রেয়াত প্রদান; যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা ভাড়ায় মেট্রোরেলে যাতায়াত এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতিটি সিঙ্গেল ট্রিপের জন্য বিশেষ রেয়াতের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগেই জানিয়েছিলেন, যেসব যাত্রী সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড ব্যবহার করবেন, তাদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যে মেট্রোরেল চালু হয়েছে, এর মূল শক্তি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ এবং আমাদের নির্দেশনা ও সমর্থন। পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহোদয় শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও মেট্রোরেলের কাজ দেখেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। নিচের লেভেলে আমাদের যে দায়িত্বটা ছিল এটা বাস্তবায়ন করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেটা কিন্তু আমরা করেছি।

‘আমাদের ঢাকা শহরে যানজটের যে পরিস্থিতি, এটা থেকে উত্তরণ করে ঢাকা মহানগরবাসীর জীবনে গতি আনা, সময় সাশ্রয় করা; জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনার জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’

মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য যেসব সুবিধা থাকছে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের অহংকারের পালকে যুক্ত হলো আরও একটি মুকুট। স্বাধীনতার ৫১তম বছরে দেশ প্রথমবারের প্রবেশ করল মেট্রোরেলের যুগে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন, পরিবেশ উন্নয়নসহ দ্রুতগামী অত্যাধুনিক এ গণপরিবহন রাজধানীবাসীর জনজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই মেট্রোরেলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য থাকছে যাতায়াত সুবিধা। উদ্বোধনী দিনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন হুইল চেয়ার নিয়ে মেট্রোরেলে উঠেছেন।

আগামীকাল (২৯ ডিসম্বর) থেকে জনসাধারণ দিনে চার ঘণ্টা (সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত) মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন। শুরুতে চলাচল সীমিত রাখলেও ধীরে ধীরে চলাচলের সময় বাড়ানো হবে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরোদমে চালু হবে মেট্রোরেল। এই পথের দৈর্ঘ্য ১১.৭৩ কিলোমিটার এবং মোট স্টেশন রয়েছে ৯টি। এই পথের সর্বোচ্চ ভাড়া ৬০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য যা থাকছে

এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা যাতে টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে সহজে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতায় টিকিট বুথ রাখা হয়েছে। একইভাবে হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীরা যেন টিকিটি ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এছাড়া হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীরা পেইড জোনে সহজে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য হুইল চেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাড়া পরিশোধের প্রশস্ত গেট করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের লিফটে সহজে ওঠাণ্ডনামার সুবিধার্থে লিফটের ভেতরে হাত দিয়ে ধরার হাতল, নিম্ন উচ্চতায় কন্ট্রোল প্যানেল ও নিজের অবস্থান বোঝার জন্য আয়না রাখা আছে। লিফটের কন্ট্রোল প্যানেলে ব্রেইল পদ্ধতিতে নির্দেশনাও রাখা আছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে স্টেশনে ওঠাণ্ডনামার জন্য লিফটের সামনে ঢালু পথ (র‌্যাম্প) বানানো হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কনকোর্স এলাকায় বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ও সজ্জিত ওয়াশ রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাকপ্রতিবন্ধী ও বধির যাত্রীরা ডিজিটাল নির্দেশিকা অনুসরণ করে স্বাচ্ছন্দ্যে মেট্রো স্টেশনে ও মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। অন্ধ যাত্রীদের মেট্রো স্টেশনে চলাচলের জন্য ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে হলুদ রঙয়ের ট্যাকটাইল পথের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অগ্রাধিকার আসন সহজে বোঝার জন্য টয়লেট, লিফট, প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের ভেতরে শনাক্তকারী চিহ্ন আছে।

স্টেশন এলাকায় এবং ট্রেনের অভ্যন্তরে অডিও ও ভিজুয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে অন্যান্য যাত্রীদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীরাও শোনা ও দেখার মাধ্যমে সহজে মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। যাত্রীদের পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা রোধে এবং হুইল চেয়ার ও ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে ট্রেনের কোচের ফ্লোর এবং স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের উপরিভাগ একই সমতলে রাখার জন্য কোচের নিচে অত্যাধুনিক এয়ার ব্যাগ সাসপেনশন সংযোজন করা হয়েছে। কোচের বহির্ভাগ এবং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সর্বত্র এমনভাবে ফাঁকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা নিরাপদে ও সহজে ট্রেনে ওঠাণ্ডনামা করতে পারেন।

মেট্রোরেলে নারী যাত্রীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য যা থাকছে

যাতায়াত নির্বিঘœ করতে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কোচ শুধু নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এতে প্রতি ট্রেনে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৩৯০ জন নারী যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। নারী যাত্রীরা ইচ্ছা করলে অন্য কোচেও যাতায়াত করতে পারবেন। মেট্রো স্টেশনগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা শৌচাগার ও স্নান ঘর রয়েছে এবং তাতে শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থাও সংযোজিত আছে। গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা আছে।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নারীদের জন্য পৃথক একটি কোচ নির্ধারণ করে রেখেছি। আমাদের নারীরা বাসে উঠতে পারে না, সেখানে তাদের নানা ধরনের অসুবিধার কথা শুনি, এজন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। যে কোনো শারীরিক অক্ষমতা থাকুক না কেন, সবাই যেন মেট্রোরেলে চড়তে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের মেট্রোরেলে যেমন, আমাদের এখানেও ঠিক তেমনই রাখা হয়েছে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়