প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সুলতান আহম্মদ। হাজীগঞ্জের ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গাজি বাড়ির সন্তান তিনি। ৪ সন্তানের জনক এই বীরের সন্তানদের মধ্যে কেউ চাকুরিজীবী এবং কেউ গৃহিণী। যুদ্ধের বছর ছাত্র ছিলেন। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে হাজীগঞ্জ থেকে লাকসাম ও ভৈরব হয়ে ঢাকা যান। রেসকোর্সের মাঠে সেই ভাষণ নিজে শুনেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতে ট্রেনিং করে নিজ এলাকায় যুদ্ধের পুরোটা সময় মুক্তিবাহিনী হয়ে কাজ করেছেন। রুহুল আমিন, নূরুল আমিন, আলী আশরাফ ও আবুল কালাম আজাদ মিলে ৫ জন ভারতে যান। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সুলতান আহম্মদ। সরাসরি দুটি যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকা সুলতান আহম্মদ কীভাবে কোথায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তা জানিয়েছেন। এছাড়াও আরো না বলা বহু কথা বলেছেন এই বীর। যার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো :
চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?
সুলতান আহম্মদ : অনুভূতি বলতে অনেক। দেশটা স্বাধীন করেছি, এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী আছে। ডিসেম্বর মাস আসলেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে। আনন্দের এই অনুভূতি কেউ বুঝবে না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?
সুলতান আহম্মদ : বয়স হইছে, আর কতো ভালো থাকি। আসলেই সার্বিকভাবে ভালো নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?
সুলতান আহম্মদ : ভারতের অম্পি নগরে ট্রেনিং করে মেলাঘর থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করি। সংগৃহীত রাইফেল পরীক্ষা করার সময় ফরিদগঞ্জে বাড়ি আমার এক সহযোদ্ধা তার নিজে রাইফেল পরীক্ষা করার সময় গুলি বেরিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সেই ঘটনা আমার সবচে’ বড় স্মৃতি। মেলাঘর থেকে লাকসাম হয়ে সেন্দ্রা আখড়া বাড়িতে উঠি। হেঁটে আসার কারণে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন স্যারের বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হই। পরে দেশগাঁও, পালিশারা ও সেন্দ্রা এসব এলাকায় থেকে যুদ্ধে অংশ নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?
সুলতান আহম্মদ : বেঁচে আছি, দেশ স্বাধীন করার কাজে নিজের রক্ত-ঘাম দিয়েছি, তা নিয়ে সন্তুষ্ট। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন, তারপরেও দেশের কিছু ভিন্ন রাজনৈতিক মহল উন্নয়ন স্বীকার করছেন না। এটি দেখে অসন্তুষ্টিতে ভুগছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?
সুলতান আহম্মদ : কতোদিন বাঁচতে চাই সেই কথা বলবো না। তবে বাঁচা-মরাটা নির্ভর যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছায়, তাই তাঁর উপর এটি দিয়ে দিয়েছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?
সুলতান আহম্মদ : স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে বলবো, তোমরা দেশকে ভালোবাসো মন দিয়ে। দেশকে ভালোবাসলে দেশের উন্নয়ন কেউ রুখতে পারবে না।