প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনিল চন্দ্র দাস। হাজীগঞ্জের ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গ্রামের দাস বাড়ির সন্তান। ৭ সন্তানের কেউ সরকারি চাকুরজীবী, কেউ চিকিৎসক, কেউ আবার গৃহিণী। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চে যুদ্ধের ডাক পড়লে সেই বছরের ১৫ জুন ৯ জনের দলসহ ভারতের আগরতলা চলে যান। সেখান ৯ জনের গ্রুপ ভাগ হয়ে তিনিসহ ২ জন কংগ্রেস ভবনে চলে যান। সেখানে গিয়ে হাজীগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম ডাঃ আব্দুস সাত্তার, হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল ফারাহ, ফরিদগঞ্জের অলিউল্লার সাথে দেখা করেন। তাঁদের পরামর্শে আমরা ২ জন সেখানকার সরিলাম ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ে যাই। তাদের গ্রুপের বাকিরা চলে যায় অম্পিনগর ক্যাম্পে। ২১ দিন ট্রেনিং শেষে মেলাঘরে এসে অস্ত্র গ্রহণ করেন যুদ্ধকালীন হাজীগঞ্জ থানা কমান্ডার মজিবুর রহমান মজুমদারের কাছ থেকে। অস্ত্র নিয়ে সেপ্টেম্বরে দেশে এসে প্রথমে কুমিল্লার সালদা নদীর পাশে ও পরে বাকিলার ফুলছোঁয়া গ্রামের যুদ্ধে অংশ নেন।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনিল চন্দ্র দাস। সরাসরি দুটি যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকা সুনিল দাস কীভাবে, কোথায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তা জানিয়েছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?
সুনিল দাস : যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। ডিসেম্বর এলে বিজয়ের কী যে আনন্দ তা মুখে বলে বোঝানো যাবে না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?
সুনিল দাস : সার্বিকভাবে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?
সুনিল দাস : হাজীগঞ্জ স্বাধীন হয় ৮ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর আমরা চাঁদপুর যাই। চাঁদপুর হানাদারমুক্ত করে ১০ তারিখে খবর পাই বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামে পাকবাহিনী অবস্থান করছে। পরদিন হানাদারদের সাথে ভোর থেকে সারাদিন থেমে থেমে যুদ্ধ হয়। ১২ ডিসেম্বর জানতে পারি আমাদের মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে না। একই দিন সন্ধ্যার দিকে চাঁদপুর থেকে মিত্রবাহিনী খবর দিয়ে আনা হলে সেখানে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। সেই যুদ্ধে আমাদের বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?
সুনিল দাস : অনেক রক্ত দিয়ে অর্জিত প্রিয় দেশের স্বাধীনতা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে যখন দেখি স্বাধীনতাবিরোধী কিংবা রাজাকাররা এখনো দাবড়িয়ে বেড়ায় তখন অসন্তুষ্টিতে ভুগি। আমরা এখনো রাজাকার মুক্ত হতে পারিনি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?
সুনিল দাস : এ বিষয় পুরোটা নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টিকর্তার হাতে তাই এ নিয়ে আমি ভাবিনি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?
সুনিল দাস : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলবো, তোমরা স্বাধীন দেশটাকে সাজিয়ে নাও।