শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

 ‘হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাকবাহিনী এদেশে এসেছে’
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদা মোঃ শহীদুল্লাহ প্রধানীয়া। বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের শাকছিপাড়া প্রধানীয়া বাড়ি। ভারতীয় ট্রেনিংধারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানী আর্মির এক সিপাহীকে যুদ্ধের পরে দুই মাস আটকে রেখেছিলেন। সেই দুই মাসে বহু বাঙালি এই পাক সেনাকে হত্যা করতে এসেছিলেন। নিজে বুঝিয়ে সবাইকে বিদায় করে অক্ষত রেখেছেন সেই পাক সেনাকে। তার কাছে থাকা সেই পাকসেনাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমরা কেন এদেশে যুদ্ধ করতে এসেছো? তখন সে জানায়, তাদেরকে সরাসরি বলা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। পরে সেই পাকসেনাকে চাঁদপুরে নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

৫ ছেলে ২ মেয়ের জনক শহীদুল্লাহ ১৯৭১ সালে ছিলেন ২২ বছরের টগবগে যুবক। সেই বছরের আষাঢ় মাসে ভারতে গিয়ে ৩০ দিনের ট্রেনিং করে দেশে আসেন। ৭২ ব্যাচে ট্রেনিং করে ভারত থেকে কুমিল্লার চান্দিনা হয়ে পায়ে হেঁটে হাজীগঞ্জের নাসিরকোটে পৌঁছেন। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। আরো না বলা বহু কথা বলেছেন এই বীর। যার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্যে নিচে তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

শহীদুল্লাহ প্রধানীয়া : বিজয়ের মাস মানে মুক্তির মাস। মুক্তি মানে লাল-সবুজের পতাকা। সেই পতাকা আকাশে উড়তে দেখলে মনে কী যে এক প্রশান্তি লাগে, সেটি অন্য কেউ বুঝতে পারবে না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

শহীদুল্লাহ প্রধানীয়া : বয়স যা হইছে তাতে ভালো কি আর থাকি। মোট কথা ঔষধের উপর বেঁচে আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

শহীদুল্লাহ প্রধানীয়া : ৯ মাসের তো শত স্মৃতি আছে, কোন্টা রেখে কোন্টা বলি। বয়সের কারণে অনেক কিছু মনেও নেই। তারপরে কিছু স্মৃতি না বললে মনে হয় না-বলাভাবে থেকে যাবে। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষ করে আগরতলায় মেলাঘরে আসার পর আমাদেরকে অস্ত্র দেবার কথা। মেলাঘরে যখন আসি তখনো অস্ত্র আসেনি। তখন খবর আসে পাকবাহিনী সালদা নদী পার হয়ে ভারতে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতীয় বাহিনী সেই খবর পেয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ করার কৌশল গুছিয়ে রাখে। এর পরেই আমাদেরকে সাথে নিয়ে পাকবাহিনীকে তছনছ করে দিতে ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ চালায়। সে অ্যামবুসে ওই ক্যাম্পের একজন পাকিস্তানি সৈন্য বা অফিসারও বাঁচতে পারেনি। আমার জন্য সেই যুদ্ধটা ছিলো ট্রেনিং গ্রহণের পর প্রথম যুদ্ধ।

অপর একটি ঘটনা খুব বেশি মনে পড়ে। ভারত থেকে অন্ত্র নিয়ে আমাদের ৭২ জনের একটি দল কুমিল্লার হোমনা উপজেলার একটি বাড়িতে গিয়ে উঠি ভোরবেলা। সেই বাড়িতে একজন বয়স্ক নারী ছিলো। যেদিন ভোরে আমরা এ বাড়িতে উঠি তখন ওই বাড়ির পাশের বাগানে ক্যাম্প করে পাকবাহিনী। বলা চলে মাঝখানে একটিমাত্র উঠান। উঠানের একপাশে বসতঘরে আমরা ৭২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর উঠানের পিছনের বাগানে পাকবাহিনীর ক্যাম্প। সেই বাড়ির উঠানের আরেক পাশে টিউবওয়েল থেকে পাকবাহিনী পানি নিচ্ছে, আর বারবার আসা-যাওয়া করছে। সেই বাড়ির বয়স্ক ওই নারী বুদ্ধি করে আমাদেরকে রক্ষার জন্যে তার দুই গোলা (ধান জমিয়ে রাখার বড় পাত্র বিশেষ) থেকে সব ধান উঠানে নামানো শুরু করে রোদে দেবার নাম করে। এক পর্যায়ে ধানের সেই স্তূপে আমাদের থাকার ঘর আর পাকবাহিনীর ক্যাম্পের মধ্য বড় বাধা তৈরি হয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ পরে ফের আমরা ৭২ জনের পুরো দল ওই বাড়ি থেকে নেমে এলাকার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করি। পুরো রাত পায়ে হেঁটে ভোরে কচুয়ার রঘুনাথপুর বাজারে পৌঁছি। রঘুনাথপুর বাজার থেকে কেউ পায়ে হেঁটে কেউ নৌকায় করে নিজ এলাকায় ফিরি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

শহীদুল্লাহ প্রধানীয়া : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশে যখন দেখলাম জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো তা দেখে পুরোপুরি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ি। স্বাধীনতার অনেক পরে যখন দেখলাম স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দলটির কাণ্ডারী জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন তখন মনে হয় সত্যিকারের স্বাধীনতা এসেছে। আর এ কারণে আমি সন্তুষ্ট।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

শহীদুল্লাহ প্রধানীয়া : বাঁচা মরা নিয়ে আমার কোনো ইচ্ছা-অনিচ্ছা নেই। মরে তো সেদিনই গিয়েছি, যেদিন যুদ্ধে গিয়েছি। বাকি এই ৫২ বছর তো আল্লাহর দয়ায় বেঁচে আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

শহীদুল্লা প্রধানীয়া : তাদেরকে একটাই কথা বলবো, আর তা হলো দেশটা আমাদের সবার। দলমত বুঝি না। দেশের জন্য নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো অপশক্তিকে কখনো মাথা চাড়া দেবার সুযোগ দেয়া যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়