প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
উৎসবমুখর পরিবেশে আমন্ত্রিত অতিথি ও ক্লাব সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিতে উদযাপিত হয়েছে আর্তমানবতার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ৭ম রোটারী ক্লাব চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের ৫২তম অভিষেক অনুষ্ঠান।
গত ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা ডাকাতিয়ার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা পুরাবাজার ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানে রোটারিয়ানদের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাবের ২০২২-২০২৩ রোটারী বর্ষের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্যরা অভিষিক্ত হন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ত্রিপিটক পাঠ এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। বিদায়ী সভাপতি রোটাঃ শাহেদুল হক মোর্শেদ আরএফএসএমণ্ডএর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে রোটারীর নিয়মিত সাপ্তাহিক সভা শুরু হয়। সভায় ২০২১-২০২২ বর্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন ক্লাবের বিদায়ী সেক্রেটারী রোটাঃ অ্যাডঃ পলাশ মজুমদার আরএফএসএম এবং তাদের কার্যকালে ক্লাবের সেবামূলক কাজে বিশেষ অবদান রাখায় ক্লাবের ক’জনকে বিশেষ উপহার প্রদান করা হয়। প্রথম অধিবেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ক্লাবের বিদায়ী সভাপতি রোটাঃ শাহেদুল হক মোর্শেদ ২০২২-২০২৩ রোটারী বর্ষের নবাগত সভাপতি রোটারিয়ান খোরশেদ আলম পাটওয়ারী আরএফএসএম ও বিদায়ী সেক্রেটারী রোটাঃ পলাশ মজুমদার ২০২২-২০২৩ রোটারী বর্ষের নবাগত সেক্রেটারী রোটাঃ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া আরএফএসএমণ্ডএর নিকট স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোটারী কলার হস্তান্তর করেন। পরবর্তী সময় ২০২২-২০২৩ রোটারী বর্ষের নবাগত সভাপতি রোটাঃ খোরশেদ আলম পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে ৫২তম অভিষেক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়।
৫২তম অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়ারম্যান রোটাঃ পিপি কাজী শাহাদাত পিএইচএফ-এর পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, মানবসেবার জগতে রোটারী এক বৃহৎ পরিবার। সেবা স্বার্থের ঊর্ধ্বে এই মূলমন্ত্রের মাধ্যমে রোটারী আন্দোলন আজ সকলের কাছে সুবিদিত হয়ে উঠছে। করোনাকালীন সময় চাঁদপুর রোটারী ক্লাব অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে করোনার রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের এই মহতী উদ্যোগকে আমি অভিনন্দন জানাই, আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত মহান রোটারিয়ানদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি চাঁদপুরে দায়িত্বকালীন সময়ের কিছু স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, চাঁদপুর আমার মধুর ও সোনালী স্মৃতির শহর। এখানকার অনেক পরিচিত মুখ আজও আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠে। চাঁদপুরের ভালো কিছু সংবাদ পেলে আমার খুব ভালো লাগে। চাঁদপুরের কোনো সংবাদ পেলেই আমার মেয়েরা ছুটে এসে আমায় জানান দেয়, দেখ দেখ তোমার চাঁদপুরের খবর, যা শুনে আমি উৎফুল্ল হই। নদীমাতৃক সৌন্দর্যের এক বড় নিদর্শন এই চাঁদপুর। এখানে রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার এক ব্যাপক খ্যাতি। চাঁদপুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার মানুষকে কোনো দায়িত্ব দিলে তারা দায়িত্ব নিয়ে যথাযথভাবে তা পালন করে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদেরকে পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্যে প্রয়োজন রাজনৈতিক সহযোগিতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, আর এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ পরিচালনা করতে প্রয়োজন হবে দক্ষ জনশক্তির। তাই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সন্তানদেরকে নিজের কাজ নিজে করার মানসিকতা নিয়ে গড়ে তুলতে হবে। শুদ্ধ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য আমাদের সন্তানদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে। তাদের মাঝে যে শক্তি রয়েছে তা সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে। জানাতে হবে তোমরাই পারবে ভালো কিছু করতে। আর তা করতে রোটারিয়ানদের এগিয়ে আসতে হবে।
রোটারিয়ানরাই পারবে সমাজকে বদলে দিতে, কারণ ভালো কিছু করার জন্যেই রোটারিয়ানরা কাজ করছেন। অভিষিক্ত নবনিযুক্ত পরিষদ তৃণমূল পর্যায়ে সেবার নতুন মাইলফলক স্থাপন করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইসমাইল হোসেনের সহধর্মিণী রাশেদা আক্তার গাজী, চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটারিয়ান শেখ মনির হোসেন বাবুল ও চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির জীবনী তুলে ধরেন পিপি রোটারিয়ান তমাল কুমার ঘোষ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় এদিন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী এবং পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারকে সম্মাননা জানানো হয়। ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহারের অসুস্থতার কারণে তার পক্ষে ক্রেস্টগ্রহণ করেন তাঁর নিকটাত্মীয় চাঁদপুর রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ রোটাঃ মাহমুদা খানম এবং একই কারণে জীবন কানাই চক্রবর্তীর ক্রেস্ট গ্রহণ করেন তাঁর সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট রাজনীতিক বিপ্লব চক্রবর্তী। এছাড়াও রোটারীর মাধ্যমে সমাজসেবামূলক কাজে অনবদ্য অবদান রাখায় রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম ও সুভাষ চন্দ্র রায়কে আজীবন সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহম্মদ আব্দুর রশিদ এবং প্রখ্যাত বিতর্ক সংগঠক ইবনে আজম সাব্বিরকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এদের সকলের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোঃ ইসমাইল হোসেন।
দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠিত অভিষেক অনুষ্ঠানটি প্রাণোচ্ছলতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সুসজ্জিত বিশাল আকারের ছাউনিটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে। অনুষ্ঠানে চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাব, চাঁদপুর হিলশা সিটি রোটারী ক্লাব, চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব, মতলব রোটারী ক্লাব, ফরিদগঞ্জ রোটারী ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আগত রোটারিয়ান ও তাদের পরিবারবর্গসহ সুধীজনদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়। তারা প্রতীকী বিশ্বকাপ ফুটবল খেলে, শীতের পিঠা ও রাতের খাবার খেয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে রোটারিয়ান পরিবারবর্গের মাঝে অনুষ্ঠিত হয় মিনি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রীতি ম্যাচ। খেলাটি পরিচালা করেন রোটারিয়ান অ্যাডঃ শাহাদাত হোসেন ও রোটারিয়ান রফিকুল ইসলাম রফিক। আর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রোটাঃ নাছির উদ্দিন খান, রোটাঃ মাহমুদা খানম, স্বজন সাহা, প্রীতি রাণী সাহা, প্রত্ন পীযুষ, প্রখর পীযূষ প্রমুখ। এছাড়া মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করেন শিশুশিল্পী নূপুর ও সাফা এবং সামিয়া বিনতে জাকির। ফুটবলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রোটাঃ গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, রোটাঃ জাকির হোসেন, রোটাঃ পিপি অ্যাডঃ সাইয়েদুল ইসলাম বাবু, রোটাঃ পিপি নাছির উদ্দিন খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন রোটাঃ পিপি অ্যাডঃ মোঃ শাহাদাত হোসেন, পবিত্র গীতা পাঠ করেন রোটাঃ গোপাল চন্দ্র সাহা এবং পবিত্র ত্রিপিটক পাঠ করেন রোটাঃ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী আছমাউল হুসনা, পুলিশ সুপারের সহধর্মিণী ডাঃ আফসানা শর্মিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। অনুষ্ঠান শেষে রাতের খাবার খেয়ে উৎফুল্ল মনে সকলে বাড়ি ফিরেন।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে রোটারী জেলা-৩২৮২-এর ডেপুটি গভর্নর রোটাঃ পিপি অ্যাডভোকেট সাইয়েদুল ইসলাম বাবু, পিএইচএফ ও অ্যাসিস্টেন্ট গভর্নর রোটাঃ পিপি নাছির উদ্দিন খান পিএইচএফ তিনজনকে যথাক্রমে প্রত্যয় পাঠ ও পিন পরিয়ে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরা হচ্ছেন : মহসিন ভূঁইয়া, ফয়সাল ফরাজী ও রুবেল।