প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবাধে চলছে সরকারি লাইসেন্সবিহীন বেশ ক’টি ইটভাটা। পৌর এলাকা ছাড়াও উপজেলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আরো কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা। গোপন সমঝোতার কারণে লাইসেন্স ছাড়াই ওইসব অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, উড়ছে ধোঁয়া। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৭ নভেম্বর বিচারপতি আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ আদালতের বেঞ্চের এক রায়ে সরকারি লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার রায়ের আদেশ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, বিভিন্ন দপ্তরের অসাধু লোকদের ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন চলছে লাইসেন্সবিহীন ওইসব ইটভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্ত মতে, বনাঞ্চলের ৩ কি.মি. এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ কি.মি.-এর মধ্যে ইটভাটা স্থাপন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার আইন রয়েছে। এসব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার ক’টি এলাকায় বেআইনিভাবে ইটভাটা নির্মাণ করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্নভাবে চাঁদা দিয়ে আসার কল্যাণে এসব ইটভাটা চলছে।
জানা যায়, সরকারি হিসেবে পৌর এলাকা ও উপজেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোট ২২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ইটভাটা চলমান ১৮টি। সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই গোপন সমঝোতায় চলছে ১১টি ইটভাটা। ইতিপূর্বে লাইসেন্স না থাকায় উপজেলা প্রশাসন গাজীপুরে একটি ইটভাটা বন্ধ করলেও তা আবার কয়েকদিন পরে চালু হয়েছে।
সরেজমিনে পৌর এলাকার চরবসন্ত, গাজীপুর, সুবিদপুর, গুপ্টি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, একদিকে স্কুল, মাদ্রাসা আর রয়েছে হাটবাজার পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়। এর উভয়ের মাঝেই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ফলে দীর্ঘ বছর ধরে চলতে থাকা ইটভাটার দূষিত ধোঁয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নিয়ম রয়েছে পৌর এলাকায় কোনো ইটভাটা করা যাবে না। সরকারের এমন নির্দেশনাকে না মেনে পৌর এলাকার ঘনবসতিপূর্ণ চরবসন্ত গ্রামে ইটভাটা চলছে। গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে এই ইটভাটা চলছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে ইট তৈরিতে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করার কারণে সংশ্লিষ্ট জমির উর্বরতা কমে গিয়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ভাটা সংশ্লিষ্ট জমিগুলো দূষণের কবলে পড়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সর্বোপরি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধ ইটভাটাটি ফসলি জমি বিনাশ করে গড়ে তোলা হয়েছে। মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে আর্থিক দণ্ডাদেশ দিয়ে দায়সারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, ইটভাটাগুলো পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি হওয়ায় ধোঁয়া, ধূলাবালির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকদের হয়রানি থেকে বাঁচতে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
ফরিদগঞ্জে সরকারি লাইসেন্স ছাড়া বেশ কটি ইটভাটার থাকার কথা স্বীকার করে ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, ইটভাটার লাইসেন্স পেতে নানা হয়রানি বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে ইতিমধ্যে সারা দেশের ন্যায় আমরাও মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। ইটভাটায় ইট তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত দেশের কোথায়ও মেনে ইট তৈরি করা যায়নি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি তুলে ইটভাটায় ব্যবহার করা যাবে না। মাটির ক্ষেত্রে সরকারের এমন শর্ত থাকলে ইট তৈরির জন্য মাটি কোথায় থেকে সংগ্রহ করবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশ্রাফ আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকা ইটভাটায় সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে। ইটভাটায় সৃষ্ট দূষণে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে।