প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
ধর্মীয় ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়ে)-এর আওতায় চাঁদপুর জেলায় পুরোহিতদের ১টি ব্যাচের ধারাবাহিকভাবে ৯ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের (কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলা) ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি।
গতকাল ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চাঁদপুর শহরের নতুন বাজারস্থ গোপাল জিউড় আখড়া প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালার সফলতা কামনা করে বলেন, প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণে জ্ঞানের গভীরতা বাড়ে। আমার ধর্মজ্ঞান খুবই কম, তবে যতটুকু বুঝি তা হলো মানুষের সেবা করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা, মানুষকে ভালোবাসা ও সমাজের কল্যাণ সাধন করা। সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে কেহ নাই। তাই মানুষের বিভেদকে নয়, সর্বাগ্রে মানুষের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। ধর্ম হলো একটা দর্শন, তাকে যত জানব, ততই জানার আগ্রহ বেড়ে যাবে। আর যতবেশি আমরা ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারব, ততই আমাদের মানবতাবোধ জাগ্রত হবে। প্রতিটি ধর্মের মাঝে এমন গুরুতত্ত্ব আছে যা জানতে পারলে আমাদের মানসিকতার যেমন পরিবর্তন হবে তেমনি ন্যায় অন্যায় বিচারবোধ আরো বেশি করে জাগ্রত হবে। আজকে যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, তার কারণ হলো আরো বেশি বেশি করে জানা। উগ্রতা দিয়ে ধর্মকে বিশ্লেষণ করা যায় না, ধর্মকে বুঝতে হলে প্রচণ্ড জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। আর সে জ্ঞানকে যদি আমরা জাগ্রত করতে না পারি, তাহলে আমাদের মাঝে বিবাদ, হানাহানি, সাম্প্রদায়িকতা লেগেই থাকবে। আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক উগ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের সরকার, প্রয়োজন সম্প্রীতির সরকার। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রচণ্ডভাবে অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির সরকার বলে আমরা বিশ্বাস করি। জাতির পিতা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, আর তাঁর সুযোগ্য কন্য শেখ হাসিনা সকল মানুষের ধর্মীয় অধিকার বাস্তবায়নসহ দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। আমার দেখা মতে, তাঁর মতো এমন সহনশীল মানুষ দ্বিতীয়জন নেই। তিনি একজন দর্শন। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। তাই দেশের উন্নয়নে, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে শেখ হাসিনাকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার। উদ্বোধনী পর্বে জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ মঠ, মন্দির সংস্কার আইনসহ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধান অতিথির দৃষ্টিগোচর করলে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে কারোই ন্যায় সঙ্গত দাবি-দাওয়া অপূর্ণ থাকবে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষ ও আইসিটি) মোঃ বশির আহম্মদের সভাপ্রধানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মিন্টু কুমার ভদ্র, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সিনিয়র সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মানব উন্নয়ন সেবামূলক সংস্থা ‘জীবনদীপে’র প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা বিনয় ভূষণ মজুমদার, মানব উন্নয়ন সেবামূলক সংস্থা জীবনদীপের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার সাহা, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ চন্দ্র মালাকার প্রমুখ। উদ্বোধনী পর্ব পরিচালনা করেন টিওটি অশোক কুমার চক্রবর্তী।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জেলার মোট ২৫ জন পুরোহিত অংশগ্রহণ করেন। তাদের সকলের হাতে উদ্বোধনী পর্বে একটি ব্যাগসহ ধর্মীয় পুস্তক তুলে দেন প্রধান অতিথি ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত। ধর্মীয় ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতাধীন (২য় পর্যায়ে) হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ধর্ম বিষযক মন্ত্রণালয়, কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আয়োজনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও দুইজন টিওটির সিদ্ধান্তক্রমে জেলার প্রশিক্ষণার্থীদের মনোনয়ন করা হয় বলে জানা যায়।