প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জের রাজনীতিতে মিঠুন ভদ্র নামটি বেশ পরিচিত। নব্বই দশকে এ জেলার ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস খুঁজতে গেলে তার নামটি আসবেই। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। পুরো নাম সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। আসন্ন হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন (মিঠুন ভদ্র) বলেছেন, আমি মনে করি, দলের নেতৃত্বে তাদের আসা উচিত, যারা এই দল করতে গিয়ে ত্যাগ, শ্রম, ঘাম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এক কথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে দলের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগতদের দলে নেতৃত্বে আসুক--এমনটি প্রত্যাশা করছি।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে ভাবনায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। প্রশ্নোত্তর আকারে তার পূর্ণাঙ্গ ভাবনাটি নিচে তুলে ধরা হলো-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ১০ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং তার পূর্বে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সম্মেলন। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত সকল নেতা-কর্মীর প্রত্যাশা দলের নেতৃত্ব দেয়া। আর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে, এটা নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা। সেই অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সম্মেলনের আয়োজন। তাই সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন?
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : আমি মনে করি, দলের নেতৃত্বে তাদের আসা উচিত, যারা এই দল করতে গিয়ে ত্যাগ, শ্রম, ঘাম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এক কথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে দলের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগতদের দলে নেতৃত্বে আসুক--এমনটি প্রত্যাশা করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি নিজে কি কোনো পদপ্রার্থী?
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : আমার সংক্ষিপ্ত নাম মিঠুন ভদ্র। শুধু হাজীগঞ্জবাসী নয়, পুরো জেলাবাসীর কাছে খুব পরিচিত। শুধু একটি কারণে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কর্মী। ছাত্রজীবন থেকে এ দলের রাজনীতিতে আমার ত্যাগসহ সকল বিষয় আমার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সকলেই জানেন। অতএব দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে আসন্ন হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী। আমার দল বিগত কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে আমাকে উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ প্রদান করা হবে বলে আমার বিশ্বাস।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : বিএনপি যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে, এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। যা সম্পর্কে এদেশের জনগণের জানা রয়েছে। তাই জনগণ ওদের আন্দোলনের সাথে নেই।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের বহু উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক ভালো চলছে। শুধু তাই নয়, সমান্তরালভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। অতএব বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আমরা চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন কোনোটাই নই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে রাজপথে। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে-সংগ্রাম মোকাবেলায় এবং সরকারে দেশ পরিচালনাসহ সকল ক্ষেত্রে সফল।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করার জন্যে কাজ চলছে। আমি মনে করি, এই সম্মেলন হলো এটির একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে আগামীতে বিএনপির সকল আন্দোলন-সংগ্রাম আমরা রাজপথে মোকাবেলা করবো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : অবশ্যই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি রোল মডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। অতএব নিজের স্বার্থের জন্যে নয়, দলের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতৃত্বকে বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করা হলে ওই সকল নেতৃত্ব সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো সাধারণ মানুষের কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করলে অবশ্যই এদেশের জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনায় ৪র্থ বারের মতো সরকার গঠনে রায় দিবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন : আমি আমার উপজেলার বিশেষ করে আসন্ন হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সকল কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের উদ্দেশ্যে বলবো, এই দলের নাম যখন তৃণমূল পর্যায়ে কেউ সাহস করে নিতো না, তখন আমার কিশোর বয়স। সেই থেকে দলের জন্য আমি ও আমার পুরো পরিবারের কী অবদান ছিলো তা আপনাদের সকলের জানা রয়েছে। তাই আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী করতে আপনাদের সকলের সমর্থন প্রত্যাশা করছি।
পাশাপাশি সকলের উদ্দেশ্যে বলবো, জেলা এবং উপজেলায় আগামীর নেতৃত্ব মানবতার মা, আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যাকেই দিবেন, আমরা তা মেনে রাজনীতি করবো। কারণ আমরা একই আদর্শের, একটি রাজনৈতিক দল ও একই পরিবারের সদস্য। মনে রাখতে হবে, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা নয়। আমাদের মধ্যে কোনো ভিন্নতা নেই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক ও ঐক্যবদ্ধ।
উল্লেখ্য, সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন (মিঠুন ভদ্র) পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের। তিনি কিশোর বয়স থেকে এ দলের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর যখন কেউ আওয়ামী লীগের নাম মুখে নিতো না, তখন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আঃ রব এমপি ও অ্যাডঃ আবু জাফর মাঈনুদ্দিনদের সাথে কিশোর বয়সে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেন।
তিনি ১৯৮৩ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সহ-সভাপতি, ১৯৮৭ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, ১৯৮৯ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ১৯৯২ সালে একই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ছাত্র রাজনীতি শেষে ২০০৬ সাল থেকে দীর্ঘদিন চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
তিনি এই দলের রাজনীতি করতে গিয়ে কিশোর বয়স থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ২৯টি রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ২৯ বার গ্রেফতার, বেশ কয়েকবার কারাবরণ, স্বৈরাচার এরশাদ, জিয়া ও খালেদা জিয়া সরকারের মেয়াদকালে মোট ১৮ বার হত্যা চেষ্টার শিকার হন। ছাত্রলীগ করা বা নেতা হওয়ার কারণে বিএনপি-জামাত সরকারের মেয়াদে পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের অপমানিত করা হয় ও কয়েকবার বাসা বাড়িতে আগুন সন্ত্রাস, হামলা ও ভাংচুর করা হয়।
১৯৯৩-১৯৯৪ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আসেন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। ওই সময়ের হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠুন ভদ্রের নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করে প্রায় ২ যুগ পর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেজর রফিকুল ইসলাম বিজয়ী হন। মিঠুন ভদ্র ছাত্রলীগের নেতৃত্বকালে কেন্দ্রীয় ও জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি করে আলোচনায় আসেন। তন্মধ্যে ২৫টি হাইস্কুল বা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা, ৪টি কলেজ, ১টি পৌরসভা, ১১টি ইউনিয়ন, ১০৮টি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি করে তিনি তৎকালীন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে প্রশংসা অর্জন করেন।