প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা আজিজ খান বাদল বলেছেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চাঁদপুর সদর উপজেলা শাখায় ১৯৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি মনে করি এই দলের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে আমারও অধিকার রয়েছে। সেই হিসেবে আমি এবারের সম্মেলনে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে একজন প্রার্থী।
তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে ভাবনায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। প্রশ্নোত্তর আকারে তাঁর ভাবনার পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হলো :
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ১০ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং তার পূর্বে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সম্মেলন। আপনার প্রতিক্রয়া কী?
আজিজ খান বাদল : সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হতে যাওয়া নতুন নেতৃত্বকে আগাম অভিনন্দন। দীর্ঘদিন পর হলেও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন ও উপজেলা নেতা-কর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং সংগঠন শক্তিশালী হয় বলে আমি মনে করি। এতে সংগঠনের মঙ্গল হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন?
আজিজ খান বাদল : পরিচ্ছন্ন শিক্ষিত মার্জিত তৃণমূল থেকে উঠে আসা কর্মীকে নেতৃত্বের সুযোগ দেয়া হবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি নিজে কি কোনো পদপ্রার্থী?
আজিজ খান বাদল : আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চাঁদপুর সদর উপজেলা শাখায় ১৯৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি মনে করি এই দলের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে আমারও অধিকার রয়েছে। সেই হিসেবে আমি এবারের সম্মেলনে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?
আজিজ খান বাদল : বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে আমি বা আমরা কেউই মোটেও চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন কোনোটাই নই। তারা তাদের রাষ্ট্র পরিচালনাকালে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, রাষ্ট্র ও জনগণের উন্নয়নের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে তাদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলো এবং আওয়ামী লীগকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় বা নিঃশেষ করা যায় ও কিভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শূন্য করা যায় সেটি নিয়ে তারা ব্যস্ত ছিলো, বিদ্যুতের খুঁটির নামে হাওয়া ভবনের দুর্নীতির পার্সেন্টেজ নিয়ে তারা ব্যস্ত ছিলো। এক কথায় দুর্নীতি কীভাবে করা যায় সেটি ছিলো তাদের লক্ষ্য, আর অন্য কোনো লক্ষ্য ছিলো না। সেই দুর্নীতিবাজদের জনগণের রায়ে হটিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসে। সকল পরিস্থিতি কাটিয়ে সফলভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। এরপর কোভিড মহামারী ও বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বই আজ অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিরতার মধ্যে আছে। খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট এখন সারা বিশ্বের মাঝে। ফলে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোসহ সকল দেশেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে আমাদের দেশের জনগণ সকল বিষয় নিয়ে অনেক সচেতন। তাই জনগণ এই বাস্তবতা বুঝে বলেই জনমনে বিএনপির এ আন্দোলন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। অতএব, আমি একজন সচেতন নাগরিক এবং একটি দলের কর্মী হিসেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ দেখছি না।
আর বিএনপির নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের বিষয়ে আদালতের রায়ের কারণে কোনো সুযোগ নেই। অতএব, এগুলো নিয়ে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
আজিজ খান বাদল : দেখুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছে এদেশ ও জনগণের স্বার্থে। অতএব বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করুক, সেটা তাদের অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে এবং মিথ্যা ও বানোয়াট ইস্যু নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে রাজপথে মোকাবেলা করবে ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?
আজিজ খান বাদল : অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের রায় নিয়ে ৪র্থ বারের মতো আবারো সরকার গঠন করবে। কারণ নানা প্রতিকূলতা ও সঙ্কট মোকাবেলা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নের বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলছে, আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস, এদেশের জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে সরকার গঠন করার সুযোগ দিবেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
আজিজ খান বাদল : আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূল থেকে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করতে এবং নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগের সফলতা আসুক এটাই আমার প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য, মোঃ আঃ আজিজ খান বাদল জন্মগতভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তিনি ছাত্রজীবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে এই দলের রাজনীতি করে আসছেন। একজন মার্জিত, অমায়িক ও পরোপকারী মানুষ হিসেবে বাদল খানের পরিচিতি সর্বমহলে রয়েছে। তিনি ছাত্রজীবনে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, পরবর্তী থেকে অদ্যাবধি একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আজিজ খান বাদল ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর খেরুদিয়া দেলোয়ার হোসেন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের আহ্বায়ক, পরবর্তীতে ১৯৯০ সাল থেকে তিনি জাতীয় ও স্থানীয় সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি খেরুদিয়া দেলোয়ার হোসেন হাই স্কুল এন্ড কলেজ গভর্নিং বর্ডির সভাপতি, লালপুর বালুধুম উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, খেরুদিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি, সরকারি রেজিস্ট্রেশনভুক্ত খেরুদিয়া উদয়ন ক্লাবের সভাপতি, বাংলাবাজার জামে মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা, সফরমালী স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মূলত ওই অঞ্চলে শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারে আজিজ খান বাদলের পরিবার তথা খান পরিবারের ব্যাপক অবদান রয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পর থেকে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনকারী অধিকাংশ চেয়ারম্যানই খান পরিবারের সদস্য।
বর্তমানে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন খান শামীম মোঃ আঃ আজিজ খান বাদলের ছোট ভাই। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে খান পরিবারের ছিলো অগ্রণী ভূমিকা।