প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে আড়াই লাখ টাকার চুক্তি করে প্রতারক চক্র। ২৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। টাকা হাতিয়ে নেয়ার দিন রাতেই প্রতারক চক্র আটক হয়েছে। কাজী শামীম হাবিব ও সাইফুল ইসলাম নামে দুই প্রতারককে আটক করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। আটক একজনের বাড়ি চট্টগ্রামে, আরেকজনের ঢাকায়।
পৌর মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের নির্দেশে চাঁদপুর শহরের হাজী মহসিন রোডস্থ গাজী আবাসিক বোর্ডিংয়ের তৃতীয় তলার ১১০নং কক্ষ থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর বুধবার রাত ৯টায় তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। আজ তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।
প্রতারক কাজী শামিম হাবিব চট্টগ্রাম জেলার পিসি রোডস্থ নিমতলার কাজী হানিফের ছেলে এবং সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ঢাকায়।
প্রতারণার শিকার মোঃ মাঈনুদ্দিন ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ হাঁসা গ্রামের আঃ রাজ্জাকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন গাড়িচালক।
মাঈনুদ্দিন পেশাগত কারণে চট্টগ্রামে গাড়িচালক হিসেবে চাকুরি করেন। সে সূত্রে পরিচয় হয় প্রতারক কাজী শামীমের সাথে।
মোঃ মাঈনুদ্দিন জানান, এই পরিচয় সূত্রে তাকে চাঁদপুর পৌরসভায় ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি পদে চাকরি দেয়া হবে বলে তার সাথে আড়াই লাখ টাকার চুক্তি হয় প্রতারক শামীমের। ১৭ নভেম্বর চাঁদপুর পৌরসভার অফিস সহকারী পদে মাঈনুদ্দিনকে নিয়োগপত্র দেয়া হবে মর্মে কাজী শামীমের সাথে আড়াই লাখ টাকার চুক্তি হয়। চুক্তিভিত্তিতে ১৬ নভেম্বর বুধবার সকালে চাঁদপুর শহরের গাজী বোর্ডিংয়ের ১১০নং কক্ষে প্রতারক কাজী শামীমকে ২৫ হাজার টাকা দেয় মাঈনুদ্দিন। বাকী টাকা রাতে দেয়ার জন্য বলে। ২৫ হাজার টাকা নেয়ার সময় মাঈনুদ্দিনকে চাকরি দেয়া হয়েছে মর্মে একটি নিয়োগপত্র দেয় প্রতারক শামীম।
এ নিয়োগপত্র পেয়ে মাঈনুদ্দিন বিষয়টি তার চাচাতো ভাই ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক মাহবুবুর রহমানকে জানায়। বিষয়টি জেনে মাহবুবুর রহমান চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের সাথে নিয়োগের সত্যতার বিষয়ে যোগাযোগ করলে জাহাঙ্গীর বিষয়টি তাৎক্ষণিক মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের একান্ত সহকারী মেহেদী হাসানের সাথে শেয়ার করে।
মেহেদী হাসান পুরো ঘটনাটি ভালো করে জেনে মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন। তখনই প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে মেয়রের নির্দেশে মেহেদী হাসান পৌরসভার ক’জন স্টাফকে সাথে গাজী বোর্ডিংয়ের ১১০নং কক্ষে গিয়ে ওই প্রতারকদের সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে কৌশলে তাদের আটক করে ফেলে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশীদকে জানানো হয়। ওসি আব্দুর রশীদ থানার এসআই আঃ আলীমকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি দু’প্রতারককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
এদিকে প্রতারক চক্রকে আটক করতে তারা যাতে টের না পায়, এজন্য পুরো ঘটনাটি উদ্ঘাটনে ও প্রতারক চক্রকে আটক করতে মেহেদী হাসান বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে কৌশল অবলম্বন করেন।
আটকের পর জানা যায়, প্রতারক চক্র চাঁদপুর পৌরসভার ‘সচিব’ আবুল কালাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষর জাল করে একটি নিয়োগপত্র মাঈনুদ্দিকে প্রদান করে। অথচ বর্তমানে সচিব নামে চাঁদপুর পৌরসভায় কোনো পদ নেই। পূর্বের সচিব পদটি বর্তমানে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি হয়তো প্রতারক চক্র জানতো না।
চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক সচিব ও বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূঁইয়া জানান, চাঁদপুর পৌরসভায় বর্তমানে সচিব নামে কোনো পদ নেই। এছাড়া পৌরসভায় কোনো নিয়োগ হবে তা পৌর কর্মকর্তা হিসেবে আমার জানা নেই। বিষয়টি তারা সম্পূর্ণ প্রতারণা করেছে।
পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল জানান, এ প্রতারক চক্রকে আটকের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। এ চক্রের মূল হোতা এবং এদের সম্পূর্ণ ঠিকানা অবশ্যই জানতে হবে। এ বিষয়টি আমি পুরো খতিয়ে দেখবো।