রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২২, ০০:০০

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চাঁদপুর জেলা সংসদের ১২তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূর করতে হবে

----------জামশেদ আনোয়ার তপন

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূর করতে হবে
বিমল চৌধুরী ॥

‘শ্রেণীভেদ ভাঙ্গি শোষিতের রোষে, সম্প্রীতির মালা গাঁথি ভেদাভেদ নাশে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ব্যাপক উপস্থিতিতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চাঁদপুর জেলা সংসদের ১২তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৩ মে শুক্রবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঐক্য ন্যাপ চাঁদপুর জেলা সভাপতি সাংবাদিক শ্যামাপদ ঘোষ ভুলু। আর সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী চাঁদপুর জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র দাস। উদ্বোধনী পর্বে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যমত গঠনসহ মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে এক ও অভিন্ন থেকে কাজ করার আহ্বান জানান উদ্বোধক শ্যামাপদ ভুলু।

উদ্বোধন শেষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরে বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সম্মেলনস্থল চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। সম্মেলনের প্রথম পর্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন। তিনি বলেন, উদীচী মানুষের অধিকারের কথা বলে, নিপীড়িত, নির্যাতিত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলে বলেই আজ উদীচীকে মানুষ ভালোবাসেন। উদীচীর প্রতিটি কর্মী মানুষের হয়ে কাজ করে।

তিনি বলেন, আজ ন্যায্য কথা বলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ঘুষ আমাদের সমাজে একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই ঘুষ নিয়ে কোনো আলোচনা করা যাবে না। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। যদি তা করা হয়, তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার ভয়ে কেউ তেমনভাবে এগিয়ে আসে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গত ২ বছর অর্থাৎ করোনাকালে দেশে ১৭ হাজার কোটিপতির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজারই রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসাসেবার সাথে জড়িত। দুর্নীতি আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছছে তা আপনারা অনুভব করলেই বুঝতে পারবেন। আজ গণতন্ত্র নিয়ে কথা হচ্ছে। বলতে পারেন কোথায় আছে গণতন্ত্র। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ মামুনুল হককে ভ- বলে তার বিরুদ্ধে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার অপরাধে জুমন দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হলো, তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হলো। অথচ আমরা বলছি দেশে গণতন্ত্র রয়েছে। এ কোন্ গণতন্ত্র, যেখানে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। আমরা কি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছি? আর যদি সমাজতন্ত্রের কথা বলি তাণ্ডও দেশে নেই। সমাজতন্ত্র হলো সমবণ্টন। অথচ কেউ পাচ্ছে আর কেউ হারাচ্ছে। আজ গরিব মানুষ বিদেশে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। তাদের কষ্টে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার কারণে আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে আর ধনীর দুলালেরা দেশের অর্থ পাচার করে বেগমপাড়ায় বাড়ি-গাড়ি বানাচ্ছে আর দু হাত দিয়ে অর্থ উড়িয়ে ফূর্তি করছে।

এজন্যই কি আমরা রক্ত দিয়েছি, দেশ স্বাধীন করেছি? আজ দেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুঁজিতন্ত্র কোনোটাই নেই। যা আছে তা হলো লুটপাট। আজ সর্বত্রই চলছে বৈষম্য। আর বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলনেই সরব রয়েছে উদীচী।

দেশে বিদ্যুৎ, ব্রিজ, রাস্তাঘাট উন্নয়নে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূর করতে হবে। দেশে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে, ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে হবে। রামু, নাছিরনগর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার করতে হবে। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে, লুটেরাদের বিচার করতে হবে।

দায়িত্বহীনদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই, তা এখন দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গেছে। তা রক্ষায় সকল বিবেকবান মানুষদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। উদীচী আপনাদের সাথে আছে এবং থাকবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জেলা সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র দাস। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নাট্যকার মোঃ আরিফ নূর, সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি চাঁদপুরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, লক্ষ্মীপুর জেলা উদীচীর আহ্বায়ক শিবু প্রসাদ নাথ প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধকালীন শব্দসৈনিক কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণা সাহা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন উদীচী মতলব দক্ষিণ উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ রোকনুজ্জামান, উদীচী হাজীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি যুগল কৃষ্ণ হাওলাদার, উদীচী কচুয়া উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মমিনুল হক, উদীচী শাহরাস্তি উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি একেএম জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী প্রমুখ।

সম্মেলনে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন মিয়াজী, সংগঠক বিপ্লব কুমার কর্মকার, আমির হোসেন বাপ্পী, বিনোদ রায় চৌধুরীসহ ব্যাপক সুধীজনের উপস্থিতি ছিলো।

উদ্বোধনী পর্বে কণ্ঠশিল্পী নন্দিতা দাস এবং সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ বৈকালিক অনুষ্ঠানে প্রশিকা দাসের পরিচালনায় সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, মতলবসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উদীচীর সদস্যরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। তাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে সম্মেলনস্থল প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়