প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:২২
আহমাদিয়া ফাযিল মাদরাসায় মতবিনিময় সভায় জেলা শিক্ষা অফিসার
মোবাইল হলো বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাদক
চাঁদপুর আহমাদিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসেন চাঁদপুরের নবাগত জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ। তাঁর সাথে ছিলেন সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন পাটওয়ারী।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে চাঁদপুর শহরের নতুন বাজারস্থ ঐতিহ্যবাহী এ মাদ্রাসায় জেলা শিক্ষা অফিসার আসলে তাঁকে স্বাগত জানান মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ মজুমদার, উপাধ্যক্ষ মাও. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারীসহ অন্যান্য শিক্ষক- কর্মচারী। পরে তিনি শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এই সভায় বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ানো এবং জ্ঞানার্জনে শিক্ষকদের বেশি পরিমাণে স্টাডি করতে হবে। আপনারা যতো বেশি জানবেন ততোই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষায় গুণগত মান বাড়াতে হবে। সাধারণ শিক্ষা এবং তার পাশাপাশি অবশ্যই কোরআন হাদিস শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। মুসলমান হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের জন্যে আল্লাহ পাকের নিকট সাহায্য চায়ার লক্ষ্যে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, নামাজে দীর্ঘ সিজদা এবং সিজদায় কোরআন ও হাদীসের প্রার্থনা মূলক দোয়াসমূহ বেশি বেশি পড়ার উপরে জোর দেবেন । তথা আমাদের রাসুলের জীবন ও কর্মকে অনুসরণ করে চলার শিক্ষা দেবেন। তিনি বলেন, রাতে এশার নামাজ ও খাওয়ার পরে বেশি রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়া ও গভীর রজনীতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা ও সকাল বেলা ফজরের পরে না ঘুমিয়ে কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত ও বিভিন্ন বিষয়ে স্টাডি করার উপরে জোর দেবেন। এছাড়া আরবি শিক্ষক যারা জুমা ও অন্যান্য বয়ান করেন তাঁরা ভালোভাবে স্টাডি করে কোরআন ও হাদিসের সঠিক বাণী প্রচারের জন্যে পরামর্শ দেন তিনি। যাতে মানুষ সংশোধিত হয় ও উপকৃত হয়। শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষা দানের নিমিত্তে শিক্ষকদেরকে নিজে সুশৃংখল ও এবাদতকারী হওয়ার উপরে গুরুত্ব দেন তিনি । তিনি শিক্ষকদেরকে মোবাইলের অপব্যবহারের বিষয়ে সজাগ করে দিয়ে বলেন, মোবাইল হলো বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাদক। এই মাদকে শুধু প্রজন্মই নয়, আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের বড়ো একটা অংশ আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর অপ্রয়োজনীয় তথা অপব্যবহার থেকে শিক্ষকরা এবং শিক্ষার্থীরা কীভাবে মুক্তি পাবেন সেটার জন্যে কাজ করতে হবে।
শিক্ষা অফিসার গত জুলাই বিপ্লবের আগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিপ্লবের আগে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা ছিলো, সেটা এখন কেটে যাচ্ছে। আর ওই জুলাই বিপ্লব ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও নেতৃত্বের একটা বড়ো অংশে ছিলো এবং এখনো আছে। তারা অবদান রেখে যাচ্ছে।
তিনি দুপুর বেলা মাদ্রাসায় মিড ডে মিল চালুর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে বলেন, দুপুরের খাবারের আগের পিরিয়ডের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে একসাথে দ্বিপ্রহরের আহার করবেন। এজন্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ বাসা থেকে পানি ও খাবার নিয়ে আসবেন। এই অভ্যাস শুরু করলে সফলতা আসবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সাংস্কৃতিক মনোভাব ও নেতৃত্বগুণ জাগানোর জন্যে ধর্মীয় ও বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে সাপ্তাহিক জলসা করতে হবে। যেখানে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, নাত, ইসলামিক গান, বিতর্কসহ নানা বিষয় থাকবে। এতে করে শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হবে। নিজের পাঠ পরিক্রমার পাশাপাশি সে তার জ্ঞান প্রসারে এবং সকল প্রকার জড়তা কাটাতে পারবে। ভেতরে বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তার সকল প্রতিভাকে বিকশিত করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এই তিনের মেলবন্ধনেই আদর্শ শিক্ষার্থী গড়ে উঠবে।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মাসুম বিল্লাহ মজুমদার তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনার এই পরিদর্শন এবং মূল্যবান বক্তব্য আমাদের শিক্ষকগণকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।